সম্ভাবনার বাংলাদেশ ও বেকারত্ব
nakib
প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২০, ০৯:৩৮ পিএম
দেশে ১৫-২৯ বছর বয়সী যুবক-যুবতীর সংখ্যা ২ কোটি। যা মোট শ্রমগোষ্ঠীর ৩০ শতাংশ। এর মধ্যে ৭৪ লাখ কোনো শিক্ষা, প্রশিক্ষণ বা কর্মসংস্থানের সঙ্গে যুক্ত নেই। এদের মধ্যে আবার ৭০ শতাংশ প্রান্তিক যুবসমাজ। তাতে উদ্বিগ্ন না হয়ে উপায় নেই। গত মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘প্রান্তিক যুবসমাজের কর্মসংস্থানে সরকারি পরিষেবার ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল সংলাপে বক্তারা এ তথ্য তুলে ধরেন। গবেষণা বলছে, ২০১৬ সালের আন্তর্জাতিক যুবসূচকে ১৮৩ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬তম। দেশের ভবিষ্যতের জন্য এ অবস্থা অত্যন্ত ভীতিকর বলে অনুমান করছেন বিশ্লেষকরা। দেশে শিক্ষার হার বেড়েছে, এটি আনন্দের খবর। কিন্তু সেই আনন্দ মুহূর্তে হাওয়ায় মিলিয়ে যায় যখন আমরা তাদের বড় একটি অংশকে কাজে লাগাতে পারি না। এর আগে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ জরিপে দেশে মোট শ্রমশক্তির ৪ দশমিক ২ শতাংশ বেকার বলে জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশে বেকারত্বের ভয়াবহতা জানতে কোনো জরিপের প্রয়োজন হয় না। বিসিএস ক্যাডার সার্ভিস কিংবা অন্য কোনো খাতে একটি শূন্য পদে চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা দেখলেই সেটি অনুমান করা যায়। উচ্চশিক্ষিতের মধ্যে বেকারত্ব ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, যা এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ২৮টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্টের ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের ৪৭ শতাংশ স্নাতকই বেকার। বিশেষজ্ঞদের মতে, উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারণ বছরে ১০ লাখের বেশি উচ্চশিক্ষিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়ে শ্রমবাজারে প্রবেশ করার মিছিলে যোগ দিলেও সে হারে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ছে না। প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থাও উচ্চশিক্ষিত বেকার সৃষ্টির জন্য অনেকাংশে দায়ী। আর এ বেকার সমস্যার কারণে একদিকে যেমন দেশে বাড়ছে দেশের আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি অপরদিকে বাড়ছে মাদকের অবাধ ব্যবহার। আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতির পেছনে মূল কারণ হলো বেকার সমস্যা। বেকার জীবনের অবসান ঘটাতে গিয়ে বেকার লোকজন বিভিন্ন অসামাজিক কাজে নিজেদের জড়িয়ে ফেলে। দেশের বেকারত্বের রাস টেনে ধরতে সরকারকে অবশ্যই এদিকে মনোযোগ দিতে হবে। বিদেশি নিয়োগের ক্ষেত্রে নীতিমালা কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান বিদেশিদের নিয়োগ দিচ্ছে তাদেরও দেশের বেকারত্বের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়ে দেশের মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। সর্বোপরি এ সংকট উত্তরণে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে; বেকারত্ব হ্রাসে যা চাবিকাঠি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।