ডিসিসি নির্বাচন হোক গণতন্ত্রের আরেক বিজয়
nakib
প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২০, ১০:০১ পিএম
প্রতীকী ছবি
বর্তমান যুগ গণতন্ত্রের যুগ। বিশ্বজুড়ে তাই গণতন্ত্রের জয়জয়কার। গণতন্ত্র অর্থ জনগণের শাসন। জনগণের ক্ষমতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে তাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই পদ্ধতিকে বেছে নিয়েছে। ‘গণতন্ত্র’-এর ইরেজি শব্দ Democracy। গণতন্ত্র সম্পর্কে অনেকে অনেক রকম সংজ্ঞা টেনেছেন। অধ্যাপক গেটেলের মতে, যে শাসন ব্যবস্থায় জনগণ সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগে অংশ নেয়ার অধিকারী তাই গণতন্ত্র। গণতন্ত্রের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা দিয়েছেন আব্রাহাম লিংকন। তিনি বলেন, Democracy is a Government of the people, by the people and for the people অর্থাৎ গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের সরকার, জনগণ কর্তৃক সরকার ও জনগণের জন্য সরকার। বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। ১৯৯১ সালে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়। নির্বাচন! গণতান্ত্রিক শাসনব্যস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নির্বাচনের মাধ্যমেই গণতান্ত্রিক দেশে নতুন প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, সর্বোপরি বাংলাদেশের মতো গণতান্ত্রিক দেশে সরকারপ্রধানও নির্বাচিত হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রধান সরকার গঠন করেন। আসীন হন শাসকের চেয়ারে। নির্বাচন হলো সেই মাধ্যম যার মাধ্যমে একটি দেশের নাগরিক তার রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগ করে। একটি নাগরিকের তিনটি অধিকার রয়েছে- সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক। ভোট প্রদান ও নিজেকে নির্বাচনে প্রতিনিধি করার মধ্য দিয়ে নাগরিক সেই রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগ বা ভোগ করেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতা বা কর্মীর কাছে প্রশ্ন করবেন দেশে কেমন নির্বাচন হচ্ছে বা হয়েছে? উত্তর, দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। সবাই নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদান করছে। এই প্রশ্নটাই বিএনপির কাছে রাখবেন। উত্তর পাবেন দেশে প্রহসনের নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন অথর্ব। নির্বাচনের আগের রাতেই ভোট হয়ে গেছে। অথচ তারা কিন্তু পূর্ব থেকেই বলে আসছিল ভোটকেন্দ্র পাহারা দেয়া হবে। গণতন্ত্রের বিজয় ছিনিয়ে আনা হবে। এবার প্রশ্ন করুন গণতন্ত্র কেমন চলছে? মুখস্থ উত্তর দেশে গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে। ঠিক একই প্রশ্ন করেন বিএনপির নেতা বা কর্মীর কাছে। ঠিক একই রকম মুখস্থ উত্তর দেশে গণতন্ত্রকে কবর দেয়া হয়েছে। এই যে দেশকে একটি বিতর্কের মধ্যে ফেলে দেয়া এর জন্য কারা দায়ী? সরকারি দলও বলছে গণতন্ত্রের বাস্তবায়ন করা হবে। বিরোধীপক্ষও বলছে গণতন্ত্রের বাস্তবায়ন করা হবে। আসলে গণতন্ত্র কার? গণতন্ত্রের জন্য দায়ী কে? আমার তো মনে হয় সব দায় ক্ষমতার। ক্ষমতার কারণে এমন ভিন্ন উত্তর। যে ক্ষমতায় থাকে তার কাছে সব কিছু বৈধ আর যে ক্ষমতার বাইরে থাকে তার কাছে সবকিছু অবৈধ হয়ে যায়। সেটা এখন নয় অনেক আগে থেকেই। সব দলই বলে জনগণ তাদের সঙ্গে রয়েছে। বিপক্ষ দলের সঙ্গে জনগণ নেই। আসলে জনগণ কার? আমার তো মনে হয় কোনো দল জনগণের কথাই ভাবে না। তাদের কাছে জনগণ অর্থ তাদের নিজ দলের নেতাকর্মী বলে আমার মনে হয়। থাক সে কথা, চোখ রাখি ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিকে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এই নিয়ে বিএনপির যেমন অভিযোগের শেষ নেই, সেইসঙ্গে নতুন একটি ইস্যু যোগ হয়েছিল সনাতন সম্প্রদায়ের সরস্বতী পূজা উপলক্ষে নির্বাচন পেছানোর দাবি। নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে স্মারকলিপি দিয়েছিল সংখ্যালঘু বিভিন্ন সংগঠন। সর্বশেষ নির্বাচনের তারিখ পেছানোর জন্য হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ। ১৪ জানুয়ারি মঙ্গলবার তা খারিজ করে দেয়া হয়। তারিখ পরিবর্তন না করায় সেদিন থেকে শাহবাগে আন্দোলনে নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী। প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে মর্মাহত বলে জানান হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাসগুপ্ত। সরকার সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় অনুভ‚তিতে আঘাত হানছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ।
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। সবার মতো আমাদেরও মত প্রকাশের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও অধিকার রয়েছে এবং সংবিধান সেটা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন সর্বশেষ শনিবার ধর্মীয় অনুভূতির আঘাত আসার আশঙ্কায় নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করেছে। সারাদেশের এসএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে বলে আমি মনে করি। সেইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের প্রতি সবার আস্থা বেড়ে গেছে বলে আমি মনে করি। যেখানে একটি পক্ষ অপর রাজনৈতিক পক্ষের যুক্তিকে তর্ক হিসেবে মনে করে সহ্য করতে পারে না সেখানে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দুই পক্ষের প্রার্থীর এই নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের দাবি বাস্তবায়িত হয়েছে। সাধুবাদ জানাই নির্বাচন কমিশনকে। সেইসঙ্গে গণতন্ত্রের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হোক সেই প্রত্যাশা করি। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে হবে। কেননা এটা আমাদের রাজনৈতিক অধিকার। একটি নির্বাচন সুষ্ঠু না হওয়ার পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ কাজ করে আর তা হলো দুর্বল প্রতিদ্ব›দ্বী। ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণে বিএনপির প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় আমার কাছে মনে হয়েছে তারা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। তারা প্রচার-প্রচারণায় যেভাবে গণতন্ত্র বা বিএনপির জনপ্রিয়তার কথা বলছেন তাতে কিন্তু মনে হয় না তারা হতাশ বা আস্থাহীন। কিন্তু ভোটের দিন যখন তাদের নির্বাচন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী কথার মিল খুঁজে পাওয়া যায় না তখন হতাশ হয় সবাই। হতাশ হয় গণতন্ত্র। তাই গণতন্ত্রের সঙ্গে সবার একমত হওয়ার আহ্বান জানাই। আহ্বান জানাই যারা গণতন্ত্রহীনতায় ভুগছেন তারা দয়া করে গণতন্ত্র জয়রথ চালনা করুন। গণতন্ত্রকে কলঙ্কিত করবেন না। সেইসঙ্গে যারা গণতন্ত্র, গণতন্ত্র বলে সারাদিন মিডিয়ার সামনে জোর দাবি করছেন তারাও গণতান্ত্রিক পথেই থাকুন। গণতন্ত্রের গলা কাটবেন না। আসুন সবাই মিলে গণতন্ত্রের জয়রথ টানি। ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন হোক গণতন্ত্রের আরেক বিজয়।
সাংবাদিক ও লেখক, ঢাকা।