×

সারাদেশ

কাঠ পাচার বন্ধে সক্রিয় পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২০, ০১:০২ পিএম

কাঠ পাচার বন্ধে সক্রিয় পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগ
কাঠ পাচার বন্ধে সক্রিয় পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগ
পাহাড়ের অবৈধ কাঠ পাচার বন্ধে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করেছে বন বিভাগ। পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের অভিযানে পাহাড় থেকে পাচার কালে দেড় বছরে প্রায় ২০ হাজার ঘনফুট অবৈধ কাঠ আটক করতে সক্ষম হয়েছে। যার আনুমানিক বাজার মুল্য ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকারও বেশি। পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের জনবল সংকট থাকলেও সীমিত সংখ্যক জনবল নিয়ে রাঙ্গামাটির বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেছে বিভিন্ন সময়। অভিযানের বিভিন্ন ভাবে মামলা দায়ের করা হয়েছে প্রায় ৭৭ টি এবং ১৬ টি গাড়ি ও ১২ টির মতো ইঞ্চিন চালিত বোট আটক করতে সক্ষম হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের কর্মকর্তারা। রাঙ্গামাটি জেলায় বৈধ ভাবে কাঠ ব্যবসার সাথে জড়িত কাঠ ব্যবসায়ী কনক রতন জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম বন বিভাগের মাধ্যমে আমরা পার্বত্য অঞ্চলে বৈধ কাঠ ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছি। কিন্তু কিছু কিছু অবৈধ কাঠ ব্যবসায়ীর কারণে আজ আমরা সকলেই বদনামের ভাগিদার। অবৈধ কাঠ ব্যবসায়ীদের কারণে আমাদের বৈধ ব্যবসায়ীরাও বন বিভাগের কাছে সব সময় সন্দেহের চোখে পড়তে হয়। গুটি কয়েক অবৈধ ব্যবসায়ীদের কারণে আমাদের ব্যবসাও হুমকীর মুখে। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগে প্রতিনিয়ত অবৈধ কাঠের বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করছে। তারা সঠিক তথ্য পেলে সাথে সাথে অভিযান পরিচালনা করে। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, সম্প্রতি একটি স’মিল এলাকা থেকে সরকারী রিজার্ভ ফরেষ্ট থেকে কেটে নিয়ে আসা প্রায় ১৬ লক্ষ টাকার বৈধ সেগুন কাঠ আটক করতে সক্ষম হয়েছে। এই কাঠ গুলো আটকের পর বিভিন্ন ভাবে তাদের চাপ দেয়া হলেও রাঙ্গামাটি সদর রেঞ্জের কর্মকর্তারা কাঠ জব্দ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের অফিসে নিয়ে গেছে। বিশাল বিশাল আকৃতির এই কাঠ গুলো বন বিভাগের অফিসের সামনে জড়ো করে রাখা হয়েছে। মোঃ জামাল উদ্দিন নামে অপর এক ব্যবসায়ী জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগ তাদের অভিযান প্রতিনিয়ত পরিচালনা করছে। রাঙ্গামাটি সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা ফরেষ্ট রেঞ্জার মোঃ মোশাররফ হোসেন যোগদানের পর থেকে রাঙ্গামাটিতে বড় বড় বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালিত হয়েছে। অভিযানে কাঠ আটক করে কোটি টাকারও বেশী রাজস্ব সরকারের কোষাগারে জমা দিতে সক্ষম হয়েছে। এই অভিযান আরো অব্যাহত থাকলে পাহাড়ের অবৈধ কাঠ পাচার যেমন বন্ধ হবে তেমনি বনাঞ্চলও ধ্বংস কম হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের অভিযানে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে পিওআর মামলায় সেগুন সহ বিভিন্ন প্রজাতির গোল ও চিড়াই প্রায় ১০৩৩ টুকু মোট ১১৯৩ ঘনফুট কাঠ আটক করা হয়, মামলা করা হয়েছে ৪ টি। সিওআর মামলায় সেগুন, কাঁঠাল সহ মোট ২৬৮০ টুকরায় ৮৩৫৫ ঘনফুট কাঠ আটক করা হয়। যার বিপরীতে ১৯ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইউডিওআর মামলায় সেগুন, গামার, কাঠালসহ বিভিন্ন প্রজাতির মোট ২৫৭৭ টুকরায় মোট ৩৩৮৯ ঘনফুট কাট আটক করা হয়েছে। যার বিরপীতে মোট ৩৪ টি মামলা দায়ের করতে সক্ষম হয়। দক্ষিণ বন বিভাগের অভিযানে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ইউডিওআর মামলায় সেগুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির ১১১০ টুকটরায় ১৬৬০ ঘনফুট কাঠ আটক করা হয়েছে। যার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে ১৩টি। এছাড়া সিওআর ১১ টি মামলার বিপরীতে কাঠালসহ বিভিন্ন প্রজাতির ১৫৮২ টুকরায় মোট ৪৮৭৬ ঘনফুট কাঠ আটক করতে সক্ষম হয়েছে। এই বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা ফরেষ্ট রেঞ্জার মোঃ মোশাররফ হোসেন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার নির্দেশে আমরা রাঙ্গামাটির বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ আমাদেরকে অনেক তথ্য প্রদান করেন। অবৈধ কাঠ পাচারকারীরা বিভিন্ন ভাবে সুযোগ খুজতে থাকে কাঠ পাচারের জন্য। কিন্তু আমাদের সীমিত জনবল দিয়ে আমরা অভিযান পরিচালনা করে দীর্ঘ দেড় বছরে প্রায় দেড় কোটি টাকার কাঠ আটক করতে সক্ষম হয়েছি। যে টাকা গুলো সরকারি রাজস্ব জমা করেছি। তিনি বলেন, জনগন যদি আরো একটি সচেতন হয় এবং বৈধ কাঠ ব্যবসায়ীরা যদি আমাদেরকে সঠিক তথ্য দেয় তাহলে আমরা আরো বেশি অভিযান পরিচালনা করতে সক্ষম হবো। বৈধ কাঠ উদ্ধার করে সরকারের কোষাগারে আরো বেশী রাজস্ব জমা করতে সক্ষম হবো। এই কাজে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকলে পাহাড়ের বন রক্ষায় আমরা সক্ষম হবো। পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ রফিকুজ্জামান শাহ্ জানান, পাহাড়ের বন রক্ষায় আমরা সর্বদা প্রস্তুত রয়েছি। দেড় বছরে আমরা বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছি। এই সফল অভিযানে সরকারের কোষাগারে বেশ কিছু টাকা জমা করতে সক্ষম হই। জনগন যদি আমাদেরকে আরো সহযোগিতা করে তাহলে আমরা আরো অভিযান পরিচালনা করতে সক্ষম হবো। কেউ অবৈধ কাঠ রাঙ্গামাটিতে পাচার করতে পারবে না। এই বিষয়ে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App