×

সারাদেশ

এবার দুই শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অডিও ফাঁস

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২০, ০৪:১১ পিএম

https://www.youtube.com/watch?v=CStZWMk-_Ek&t=215s

বিজয় দিবসে জুতা পায়ে শহীদ মিনারে উঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় তোলা উলিপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু তাহেরের আরেক কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ হয়েছে। বহিরাগতদের দিয়ে নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুই শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষকদের মাঝে শুরু হয়েছে তোলপাড়।

ভূক্তভোগি শিক্ষকরা জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ইতোমধ্যে অধ্যক্ষ তাহেরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। সোমবার (২০ জানুয়ারি) উলিপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের ৯ জন শিক্ষক কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপারের দপ্তরে গিয়ে ঘটনার সবিস্তার বর্ণনা দিয়ে প্রতিকার চেয়েছেন।

অডিও রেকর্ডের সূত্রে জানা জানা যায়, চলতি বছর উলিপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রের এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে জটিলতা সৃষ্টি হলে তার অভিভাবক কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু তাহেরের কাছে যান। অধ্যক্ষ ছাত্রের ফরম পূরণের জটিলতা সৃষ্টির জন্য কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার ও হিসাব বিভাগের প্রভাষক আসাদুল হাবিব আরিফ দায়ী বলে সেই অভিভাবককে জানিয়ে দেন।

এ কথা শোনার পর ওই দুই শিক্ষকের ব্যাপারে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ সুযোগে অধ্যক্ষ তার নিজস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ফরম পূরণের বিষয়টি হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে অধ্যক্ষ আবু তাহের নিজে ভুক্তভোগী ছাত্রের বাবাকে মোবাইল ফোনে দুই শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার জন্য উসকে দেন।

শুধু তাই নয়, ওই অভিভাবক যেন সুযোগ মতো দুই শিক্ষক যেন দুই গালে চড়ধাপ্পড় এমনকি চুল ধরে টানাটানি করেন তাও শিখিয়ে দেন। এসময় কাজ করলে ফরম পূরণের বিষয়টি নিশ্চিত হবে কিনা অভিভাবক সেটা জানতে চাইলে অধ্যক্ষ তাকে আশ্বস্ত করেন।

অধ্যক্ষের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ওই অভিভাবক গত ১৪ জানুয়ারি সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে বহিরাগত কয়েকজনকে নিয়ে প্রভাষক আরিফকে শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করেন। ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষকরা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। এছাড়াও চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, জেলা পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের লিখিতভাবেও জানান ভূক্তভোগী শিক্ষকরা।

এর আগে গত ১৬ ডিসেম্বর কলেজের শহীদ মিনারে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ তাহেরের জুতা পায়ে ওঠার ছবি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ হয়ে তাকে পিটুনি দেয়। এতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই ঘটনায় অধ্যক্ষ স্থানীয় কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলায় কলেজের শিক্ষকদের সাক্ষী দেয়ার জন্য অধ্যক্ষ চাপ দিলে তারা রাজি হননি। সেই থেকেই ওইসব শিক্ষকের ওপর নানাভাবে হয়রানি ও লাঞ্ছিত করার অপচেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন।

ঘটনার শিকার প্রভাষক আসাদুল হাবিব আরিফ বলেন, আমি ওইদিন সকালে ক্যাম্পাসে আসামাত্রই একজন অভিভাবক আমার ওপর আক্রমণ চালায়। এসময় আমার সহকর্মীরা আমাকে উদ্ধার করেন। বর্তমানে আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। সহকারী অধ্যাপক ও শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত কুমার পাল বলেন, অধ্যক্ষের নির্দেশে আমার সহকর্মীর ওপর হামলা চালানো হয়েছে। আমাকেও লাঞ্ছিত করার নির্দেশ দিয়েছেন যা অডিও ক্লিপে নিশ্চিত হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছি। কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার মহিবুল হক সাহেবের কাছে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছি।

উলিপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু তাহেরের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকায় সচিবালয়ে মিটিংয়ে আছেন বলে জানান। শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার নির্দেশ প্রদানের বিষয় জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম গেলে কথা বলবেন জানিয়ে ফোন রেখে দেন।

উলিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

আগের নিউজ পড়ুন---

শহীদ বেদীতে জুতা পায়ে অধ্যক্ষ, অতঃপর…

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App