×

মুক্তচিন্তা

দ্রুত কার্যকরের উদ্যোগ নিন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২০, ১০:৩৭ পিএম

দেশে নারী ও শিশু ধর্ষণ-নির্যাতন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রায়ই পত্রিকার পাতায় নারী ও শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের নির্মমতার খবর আসছে। নির্যাতনের পর খুনও করা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে, এ কোন বর্বরতার মধ্যে আমরা বসবাস করছি? প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ, সামাজিক সচেতনতা কোনোভাবেই যেন এই ঘৃণ্য কাজ দমন করা যাচ্ছে না। এবার ধর্ষণ প্রতিরোধ ও ভিকটিমকে (ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশু) সহায়তা দিতে এক মাসের মধ্যে একটি কমিশন গঠনের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আইন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনে বিচারক, মানবাধিকারকর্মী, ভিকটিমের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় নিয়োজিত চিকিৎসক, আইনজীবী, গণমাধ্যমকর্মী ও সমাজের বিশিষ্ট নাগরিককে রাখতে বলা হয়েছে। ধর্ষণের মূল কারণ উদ্ঘাটন ও তা নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ তৈরি করে ছয় মাসের মধ্যে সেটি আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনার পাশাপাশি রুল জারি করেছে আদালত। এছাড়া ধর্ষণ ঠেকাতে অ্যান্টিরেপ সিকিউরিটি অ্যালার্ম নামক ডিভাইসের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ৯৯৯-কে সংযুক্ত করতে আইসিটি সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছে হাইকোর্ট। গত রবিবার পৃথকভাবে এসব আদেশ দেন। উদ্যোগগুলো খুবই প্রাসঙ্গিক। হাইকোর্টের নির্দেশনা পালনে সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগী হবেন সেটাই আমরা দেখতে চাই। সাম্প্রতিক সময়ে নারীদের সঙ্গে সঙ্গে শিশু ধর্ষণের ঘটনা ভয়াবহভাবে বেড়ে চলছে। সাধারণত দরিদ্র ও দুর্বল ঘরের শিশুরাই ধর্ষণের শিকার হয়। দীর্ঘমেয়াদে মামলা চালানোর মতো অর্থ ও সময় তাদের পরিবার দিতে পারে না। সামাজিকভাবেও তাদের অবস্থান শক্তিশালী নয়। বিপরীত দিকে অর্থবিত্ত বা সামাজিকভাবে প্রভাবশালীরা বা তাদের মদদপুষ্টরাই ধর্ষণের মতো অপরাধ করে। ফলে এসব ক্ষেত্রে পুলিশ মামলা নিতে গরিমসি করে, মামলা নিলেও তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে টালবাহানা করে, অপরাধীদের বাঁচিয়ে প্রতিবেদন দেয় কিংবা অপরাধী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের দেখতে পায় না। এরকম অভিযোগ অজস্র। ধর্ষণ সামাজিকভাবে একটি চরম ঘৃণ্য কাজ হিসেবে চিহ্নিত, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও এটি পাপ কাজ, অন্যদিকে দেশের আইনেও ধর্ষণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এত বাধা থাকার পরও কেন ধর্ষণের বীভৎসতা বেড়েই চলেছে এটাই প্রশ্ন। বলা হয়ে থাকে, আইনের যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না। ভিকটিমরা দুর্বল বলে অপরাধীরা বিচার ও শাস্তি এড়াতে সক্ষম হয়। শুধু শিশু নয় বরং যে কোনো বয়সের নারীকেই পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে ধর্ষণ সংক্রান্ত আইনটির কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণ রোধে রাষ্ট্র যদি কঠোরতা না দেখায় তবে সমাজে ক্ষতের গভীরতা বাড়তে থাকবে। ধর্ষকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে প্রধান ভ‚মিকা পালন করতে হবে। অন্যদিকে ধর্মীয় মূল্যবোধ-সামাজিক নৈতিকতাও ধর্ষণের মতো বিকৃতি থেকে মানুষকে নিবৃত্ত রাখতে পারছে না। এসব নিয়েও ভাবা দরকার। স্বীকার করতেই হবে যে, ধর্ষকরাও আমাদের সমাজেরই কোনো না কোনো পরিবারের সদস্য। তাদের বখে যাওয়ার দায় রয়েছে পরিবার-সমাজেরও। তরুণদের সুস্থ-সুন্দর মন ও মূল্যবোধ সম্পন্ন করে গড়ে তুলতে পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর যথাযথ ভ‚মিকা রাখতে পারছে না এটাও স্পষ্ট।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App