×

সারাদেশ

বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হাতিয়া দ্বীপের ৫ লক্ষাধিক মানুষ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২০, ০৫:২৮ পিএম

বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হাতিয়া দ্বীপের ৫ লক্ষাধিক মানুষ
“শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ” এ শ্লোগানে দেশের প্রত্যন্ত বিভিন্ন উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হলেও মেঘনা বেষ্টিত নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপের ৫ লক্ষাধিক মানুষ দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। হাতিয়া পৌরসভা ব্যাতিত উপজেলার প্রতিটি জনপদে বিদ্যুতের জন্য চলছে হাহাকার। দীর্ঘ কয়েক যুগে বহু আবেদন নিবেদন এমনকি বিক্ষোভ মিছিল করেও বিদ্যুতের সুফল পায়নি দ্বীপবাসী। ফলে বিদ্যুৎ সংকটে হাতিয়াবাসীর জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে আছে। এ বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানে হাতিয়ায় সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন হাতিয়াবাসী। এ উপজেলায় প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সুবিধা না থাকায় শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সম্ভাবনাময় বিভিন্ন ধরনের শিল্প বিকাশে বাধা এবং নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত হওয়ায় সরকারী, বেসরকারী ও এনজিওসহ নানা ধরনের সংস্থার দারিদ্র বিমোচনে গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া মৎস্য ও কৃষিজীবি নির্ভর হাতিয়ায়, বরফ কল, আটা-ময়দার মিল, রাইচ মিল, স-মিলসহ সেচ পাম্প ও জাহাজ ভাঙ্গাসহ বিভিন্ন ধরনের ছোট বড় শিল্প কারখানা বিদ্যুতের অভাবে গড়ে উঠার প্রধান অন্তরায় হয়ে দাড়িয়েছে। হাতিয়া দ্বীপাঞ্চল মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় জাতীয় গ্রীডের সাথে অন্তর্ভূক্ত না হওয়ায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না। হাতিয়া বিদ্যুৎ বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, ১৯৬১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের আমলে হাতিয়ার পুরাতন শহরে ডিজেল চালিত জেনারেটরের মাধ্যমে সীমিত এলাকায় মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। বর্তমানে এ উপজেলায় ৮টি জেনারেটর রয়েছে। এর মধ্যে ৫টি জেনারেটরের মাধ্যমে ১.৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। ৩টি জেনেরেটর অকেজো হয়ে আছে। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০ থেকে দুপুর সাড়ে ১২ পর্যন্ত এবং বিকাল ৩টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত উৎপাদিত বিদ্যুতের সুবিধা পাচ্ছেন ২১’শ সংযোগে শুধু মাত্র হাতিয়া পৌরসভার ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ। প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ এ ৩৪টাকা ভুর্তকি দেয় সরকার। বিগত ৫৮ বছর হাতিয়ার জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ছয় লক্ষাধিকে উন্নীত হয়েছে। উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মধ্যে দ্বীপের ০৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় জনসংখ্যা রয়েছে ৫ লক্ষাধিক। বর্তমানে এ জনসংখ্যার বিদ্যুৎ চাহিদা রয়েছে ৬ থেকে ৭ মেগাওয়াট। কিন্তু বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড হাতিয়াবাসীর বিদ্যুতের চাহিদা কখনো মেটাতে পারেনি। জেনারেটরের মাধ্যমে সীমিত এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বছরে কোটি টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে। আবার সময় ও চাহিদা মত বিদ্যুৎ না পেয়ে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতেও কালক্ষেপন করেন। ফলে বর্তমানে এ উপজেলায় বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে প্রায় এক কোটি টাকা। ক্ষুব্ধ গ্রাহকদের দাবি হাতিয়ায় পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি বিদ্যুৎ বিভাগ। সীমিত এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহে রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের নানা দুর্নীতি আর অনিয়ম। সঠিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বকেয়া পরিশোধ করবে না তারা। গ্রাহকরা জানান, ২০০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ সল্পতার কারণে আউটার জোনে বিদ্যুৎ নেই। তখন থেকে বিদ্যুৎ বিভাগ বিদ্যুৎ বঞ্চিত গ্রাহকদের নামে সমপরিমান মাসিক বিল প্রস্তুত করে বকেয়ার বোঝা ভারি করে আসছেন। এতে বিদ্যুৎ বঞ্চিত গ্রাহকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হাতিয়া উপজেলার সর্বত্র বিদ্যুতায়নের লক্ষে ১৯৯৫/৯৬ সালে তমরদ্দি বাজার, জাহাজমারা বাজার, চৌমুহনী বাজার, সাগরিয়া বাজার, আফাজিয়া, নলচিরা, খাসের হাট ও দাসের হাটসহ বিভিন্ন স্থানে বিতরণ লাইন স্থাপন করা হয়। বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্ব ওখানেই শেষ। এরপর আর কখনো বিদ্যুৎতের ছোঁয়া লাগেনি। তবে আশারবানী শুনালেন বিদ্যুৎ বিভাগের হাতিয়া উপজেলা আবাসিক প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান। তিনি জানান, এ উপজেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ৬ থেকে ৭ মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ১.৫ কিলোওয়াট। আই.পি.পি ভিত্তিক (ঐঝউ/ঐঋঙ) বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে হাতিয়া-কুতুবদিয়া-সেন্টমার্টিনে শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যে যে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে তা আগামী ২০২১ সালের জুন মাসের মধ্যে শুরু হবে। এতে দ্বীপবাসীর বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়ে তিনি বলেন, ৩৩ কেবি লাইন সাধারণত ১৫-২০ কি.মি পর্যন্ত নেওয়া যায়। এতে বিদ্যুতের ব্যবহার উপযোগী হয়। ২০ কি.মি এর বেশি দুরত্বের সাব-স্টেশন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করলে সেখানে বিদ্যুতের ব্যবহার উপযোগী হয় না। বিদ্যুৎ বিভাগ নোয়াখালীর চৌমুহনী সাব- স্টেশন থেকে হাতিয়ার দুরত্ব ৮৭ কি.মি। এ ক্ষেত্রে হাতিয়ায় নদী পথে সাবমেরিন কেবলে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব না। হাতিয়া উপজেলার মূল ভূখণ্ডের আয়তন ২১শ’ বর্গকিলোমিটার। পাঁচ লক্ষাধিক অধিবাসী অধ্যূষিত মূল দ্বীপ উপজেলাটিতে সরকার সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করলে হাতিয়াবাসী শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, মৎস, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং পর্যটন শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে। হাতিয়া উপজেলার কয়েকটি এলাকা ঘুরে জানা গেছে, সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে এখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ আরো সহজতর হবে। বিশেষ করে হাতিয়া চেয়ারম্যান ঘাট থেকে নলচিরা ঘাটের দূরত্ব মাত্র ১৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে চেয়ারম্যানঘাট-নলচিরা নৌ-রুটের একটি স্থানে ১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মধ্যে নদীর গভীরতা রয়েছে মাত্র ৬০ মিটার। অবশিষ্ট ১৬ কিলোমিটার নৌ-রুটে অসংখ্য ডুবোচর রয়েছে। যা সাবমেরিন কেবল স্থাপনে সময় ও অর্থ দু’টোর সাশ্রয় হবে। আওয়ামী লীগ নেতা ও হাতিয়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী জানান, হাতিয়া উপজেলায় সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হলে হাতিয়াবাসী সর্বক্ষেত্রে স্বাবলম্বী হবে। তিনি আরো বলেন, অনুন্নত হাতিয়াবাসীর জীবন ও জীবিকার স্বার্থে বিদ্যুৎ সরবরাহের বিকল্প নেই। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের অবহেলিত জনগোষ্ঠীর স্বার্থে কাজ করছেন। তিনিই একমাত্র পারেন, সাবমেরিন ক্যাবলে বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে হাতিয়াবাসীর মুখে হাসি ফোটাতে। হাতিয়া আসনের সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউস জানান, খুব শ্রীঘই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভাসনচরে রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মিত আবাসন প্রকল্পের উদ্বোধন শেষে হাতিয়ায় একটি জনসভায় ভাষণ দিবেন। প্রধানমন্ত্রীর আগমনেই হাতিয়ার বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হবে বলে আমরা আশাবাদি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App