×

মুক্তচিন্তা

নদী কমিশনের ক্ষমতা ও স্বাধীনতা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২০, ১০:২৮ পিএম

নদীর অবৈধ দখল, পানি ও পরিবেশ দূষণ, শিল্পকারখানা কর্তৃক নদীদূষণ, অবৈধ কাঠামো নির্মাণ ও নানাবিধ অনিয়ম রোধকল্পে এবং নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ পুনরুদ্ধার, নদীর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ এবং নৌপরিবহনযোগ্য হিসেবে গড়ে তোলাসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে নদীর বহুমাত্রিক ব্যবহার নিশ্চিত করার প্রয়োজনে নদী কমিশন গঠন করা হলো। প্রশ্ন হচ্ছে, নদী কমিশনের ক্ষমতা আছে কি, যার মাধ্যমে তারা নদী দখল রোধ ও দখলিকৃত নদী পুনরুদ্ধারে বা দখলমুক্ত নদী পুনর্দখল রোধে সরকারকে সক্রিয় করতে পদক্ষেপ নিতে পারবেন? কমিশন আইনের ১২ নম্বর ধারা পড়লে মনে হয়, তারা কেবল বিভিন্ন কাজে সুপারিশ করতে পারবেন। কিন্তু নদী সুরক্ষার জন্য কেবল নদী কমিশনের নির্দেশনা সব সময় জরুরি নয়। জরুরি হচ্ছে আইনের প্রয়োগ। এমন বাস্তবতায় নদী রক্ষায় কার্যকর ভ‚মিকা রাখতে চায় জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন। এ জন্য আইন সংশোধন জরুরি। নদ-নদী রক্ষায় সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তবতা ভিন্ন দেখছি আমরা। ঢাকাকে ঘিরে শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বুড়িগঙ্গার সর্বত্রই চলছে দখলবাজদের আগ্রাসী থাবা। তবে আশ্চর্যের খবর হলো নদ-নদীর দখল রোধে উচ্চ আদালতের দেয়া নির্দেশনা অনেকাংশেই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। রাজধানী ঢাকার চারপাশে শুধু নয়, সারাদেশেই চলছে আগ্রাসী থাবায় নদ-নদী দখলবাজির দুর্বৃত্তপনা। যে কোনো নদীর পাড়ে চোখ মেলে তাকালেই দখলবাজির পরিমাণটাও স্পষ্ট হয়ে যায়। অবস্থা এমনই যে অনেক নদ-নদীর অস্তিত্ব মানচিত্রে থাকলেও বাস্তবে তা খুঁজে পাওয়া যাবে না। দখল ও দূষণের কারণে গত ৪ দশকে দেশের ৪০৫টি নদ-নদীর মধ্যে প্রায় বিলুপ্ত হয়েছে ১৭৫টি। বাকি ২৩০টিও রয়েছে ঝুঁকির মুখে। ২৪ হাজার কিলোমিটার নৌপথ কমে গিয়ে হয়েছে প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটার। শুষ্ক মৌসুমে যা ৪ হাজার কিলোমিটারে এসে দাঁড়ায়। এই চিত্র বদ্বীপটির কৃষি, যোগাযোগ, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, মানুষের জীবনযাত্রা সবকিছুর জন্যই ভয়াবহ হুমকিস্বরূপ। নদ-নদী জলাশয় রক্ষার তাগিদ প্রতিনিয়ত সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায় থেকে জানানো হচ্ছে। পরিবেশ সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, একেবারে শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের পদাধিকারীরা বলছেন; কিন্তু কাজ হচ্ছে না। সংকট কোথায়? দখল-দূষণকারীরা কি এতই শক্তিশালী যে রাষ্ট্রীয় সব উদ্যোগ তাদের কাছে অসহায়। আমরা দেখছি, বিভিন্ন সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে নদ-নদী মুক্ত করতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে, কিন্তু বেশি দূর যাওয়ার আগেই তা আবার থেমেও যায়। সম্প্রতি ঢাকার চারদিকের নদ-নদীর দখলদার উচ্ছেদে কয়েক হাজার স্থাপনা ভেঙে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী রক্ষায়ও উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হয়েছে। আবার নিরবচ্ছিন্ন নজরদারির অভাবে অবমুক্ত স্থানে আবার গড়ে ওঠে অবৈধ স্থাপনা। নদ-নদী রক্ষা করতে হবে জাতীয় স্বার্থকে সব ধরনের ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থের ঊর্ধ্বে রেখে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নদী রক্ষার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আন্তরিক। ফলে গোটা সরকার এ ব্যাপারে জোর দিয়েছে। আমরা আশাবাদী, এই আইনের সংশোধন হবে এবং নদী কমিশন প্রায়োগিক ক্ষমতা পাবে। নদী কমিশনের ক্ষমতা বাড়াতেই হবে। নদী রক্ষায় এর বিকল্প নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App