×

মুক্তচিন্তা

আসাদের আত্মত্যাগ স্মৃতিতে অম্লান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২০, ১০:১১ পিএম

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে যে নামটি জ্বলজ্বল করে জ্বলছে সেটি শহীদ আসাদের নাম। যার রক্তমাখা শার্ট এ দেশের প্রাণের লাল পতাকার রংয়ে রাঙানো, সেটি শহীদ আসাদের শার্ট। শহীদ আসাদ ১৯৪২ সালের ১০ জুন নরসংদী জেলার শিবপুর থানার ধানুয়া গ্রামে জন্ম নেন। শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে বর্তমান জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬৭ সালে তিনি এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের পরিক্রমায় বহু ঘটনা জড়িত। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র দুটির জন্ম হওয়ার পর থেকে বাঙালি জাতির প্রতি বিদ্বেষ আর ঘৃণার প্রকাশ করতে থাকে পাকিস্তান। তারা পূর্ব পাকিস্তানের ভূখণ্ডকে মূলত তাদের আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবহার করে। সেজন্য পূর্ব বাংলার মানুষকে যাচ্ছেতাইভাবে শোষণ করতে থাকে। শাসন ও শোষণের ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। পশ্চিম পাকিস্তানিদের ভাষা চাপিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র সফল না হওয়ায় তারা বিভিন্নভাবে বাঙালি জাতিকে দমিয়ে রাখার কৌশল অবলম্বন করে। তাদের ক্রমাগত ক্ষমতা কুক্ষিগত করার প্রবণতা এবং বাঙালির দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার অবস্থা ক্রমেই স্বাধীনতা আন্দোলনের দিকে ধাবিত হতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় তৎকালীন সময়ে দেশে কয়েকটি বড় বড় আন্দোলন ঘটে। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি পাকিস্তানি স্বৈরশাসক আইয়ুব খান সরকারের বিরুদ্ধে এ দেশের ছাত্রসমাজের ১১ দফা কর্মসূচির মিছিলে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ছাত্রনেতা আসাদ। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি ১১ দফা বাস্তবায়ন ও ইপিআরের নির্যাতনের প্রতিবাদে ধর্মঘট ডাকা হয়। সেই ধর্মঘট ও আন্দোলন পণ্ড করার উদ্দেশ্যে মোনায়েম খানের প্রাদেশিক সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে। দুপুর ১২টার দিকে হাজার হাজার মানুষের বিশাল মিছিল সেই ১৪৪ ধারা ভেঙে রাস্তায় নেমে আসে। এদিন একটি মিছিলের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন আসাদ। আসাদের রাজপথে শহীদ হওয়া, গণঅভ্যুত্থান, সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়, ক্ষমতা হস্তান্তর না করা এবং সর্বোপরি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে, অতঃপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ, মুক্তিযুদ্ধ এসব ঘটনাই এক সুতায় গাঁথা। আওয়ামী লীগের ৬ দফা ও ছাত্রসমাজের ডাকা ১১ দফা কেন্দ্র করে দেশে সর্বস্তরের মানুষের জোয়ার নামে। মনে তাদের একটাই স্বপ্ন স্বাধীনতা। গণঅভ্যুত্থানে আইয়ুব খানের পতন ঘটে, আরেক স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় বসেন। ঘোষণা করেন সাধারণ নির্বাচন। যে মুক্তির আশায় বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সেই মুক্তির চেতনা আরো দুই বছর আগেই বাঙালির হৃদয়ে স্থান পেল। আসাদের রক্তে রঞ্জিত লাল শার্ট তখন কোনো সাধারণ শার্ট ছিল না। তা ছিল আমাদের স্বাধীনতার রং, আমাদের স্বাধীন দেশের পতাকা। ১৯৬৮ সালে লেখা আসাদের ডায়রি থেকে তার বিপ্লবী চেতার পরিচয় পাওয়া যায়। আসাদের চিন্তাচেতনা ছিল এ দেশকে ঘিরে। এ দেশের সাধারণ মানুষের মুক্তির কথা তার অন্তরে লালন করেছেন তিনি। কে জানত তার সেই চিন্তা একদিন লাখ লাখ মানুষের স্বপ্ন হয়ে মুক্তিযুদ্ধের রূপ নিয়ে এ দেশটাকে স্বাধীন করবে। স্বাধীনতার জন্য এ দেশের মানুষ বুকের রক্ত দিতে পারে তা শাসক গোষ্ঠীকে ১৯৫২ সালের পর আসাদ আবার বুঝিয়ে দিয়ে গেল। শহীদ আসাদের মতো আত্মত্যাগকারী স্বাধীনচেতা মানুষ যুগে যুগে স্বাধীনতার জয়গান গেয়ে যায়। পরাধীনতার গ্লানিকে তারা ঘৃণা করে এবং অন্যকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখায়। মানুষ আসাদ বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতীক আর আসাদের রক্তে ভেজা শার্ট এখন এ দেশের প্রাণপ্রিয় পতাকার রং। শিক্ষক ও লেখক, পাবনা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App