×

বিনোদন

সুরের কারিগরের চলে যাওয়ার এক বছর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২০, ১০:৫৫ এএম

সুরের কারিগরের চলে যাওয়ার এক বছর

সাবিনা ইয়াসমিনকে সুর বুঝিয়ে দিচ্ছেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। ছবি: সংগৃহীত।

সুরের কারিগরের চলে যাওয়ার এক বছর

ফাইল ছবি।

বহুমাত্রিক সঙ্গীত প্রতিভার অধিকারী আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। বেড়ে ওঠেন একজন গিটারিস্ট হিসেবে। মাত্র ১৫ বছর বয়সে অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধে। পরবর্তী সময়ে শুধু গিটারে সীমাবদ্ধ না থেকে গান লেখা, সুর করা এবং সঙ্গীত পরিচালনায় যুক্ত হন তিনি। পরিচিতি পান একজন সুরকার, গীতিকার ও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে। ২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। এ বছর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই কিংবদন্তিকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করল ভোরের কাগজ।

বুলবুলের সুরে যে গানই গেয়েছি তাই হিট হয়েছে: সাবিনা ইয়াসমিন 

বুলবুলের সঙ্গে আমার পরিচয় ১৯৭৭ কিংবা ১৯৭৮-এর দিকে। তখন সে গিটারিস্ট ছিল, খুব ভালো গিটার বাজাতো। একদিন আমাকে বললো, ‘আপা, আমি কিছু গানের সুর করেছি, আপনি যদি একটু শুনতেন?’ তখন আমি তার কথায় বিশেষ আমল দিইনি। আমি চিন্তা করলাম, এত কম বয়সী একটা ছেলে; সে আর কী এমন সুর করবে! কারণ তখন আমরা গান করতাম সত্যন সাহা, সুবল দাস, আলী হোসেন, খন্দকার নূরুল আলম, আতা ভাই, আজাদ রহমান; তাদের মতো গুণী সুরকারদের। কিন্তু কিছুদিন পরপরই বুলবুল আমাকে বলে, ‘একটু শুনেন, একটু শুনেন! যদি একটু শুনতেন’; তারপর একদিন তাকে বললাম, ‘আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে একদিন বাসায় এসে কিছু গান শোনাও।’ প্রথমদিন সে আমাকে দেশের গান শুনাল কিছু। তার মধ্যে ‘মাঝি নাও ছাইড়া দে’, ‘ও আমার আট কোটি ফুল’সহ আরো কিছু গান ছিল। ও যখন শুনাল তখন আমি এত অবাক হলাম যে, দেশের গানও এই রকম হতে পারে! এতদিন তো দেশের গানে আমি শুনতাম আমার দেশের মাটি, আকাশ-বাতাস-ফুল-পাখি ইত্যাদি।

[caption id="attachment_196261" align="aligncenter" width="533"] সাবিনা ইয়াসমিনকে সুর বুঝিয়ে দিচ্ছেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। ছবি: সংগৃহীত।[/caption]

এই সব নিয়েই এক সময় আমরা গান করতাম। কিন্তু দেশের গানে এত সুন্দর কথা, অন্যরকম প্রতিটা লিরিক। একেকটা গান শুনতেছি যেন আমার চোখের সামনে একেকটা দৃশ্য ভেসে উঠছে। তখন তার গান শুনে আমি অবাক। তারপর আমি বললাম, ‘ঠিক আছে, আমি গাইবো তোমার গান’। তখন বিটিভিতে ৬টি গান নিয়ে একটি অনুষ্ঠান করলাম। সেখানে দেশাত্মবোধক গানের পাশাপাশি ‘একটা লাল গোলাপ আমায় দাও না’, ‘দূর থেকে দূরে’ এই আধুনিক গান দুটিও ছিল। গানগুলো করার পর প্রোগ্রাম তো হিট হয়ে গেল। গানগুলো মানুষ খুবই পছন্দ করল। তারপর থেকে বুলবুলের সঙ্গে একটার পর একটা গান বা অ্যালবামে কাজ করা শুরু হলো। তার সুরে অনেক গান নিয়েই বিটিভিতে আমরা বেশকিছু প্রোগ্রাম করেছি।

তারপর আশি সালের দিকে নজরুল ইসলাম বাবুর কথায় বুলবুলের সুরে করলাম ‘সব ক’টা জানালা খুলে দাও না’। এই গানের কথা শুনে আমি খুব ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম। বললাম, এই গান তো আমি করবই। এ ছাড়া এই গানের সঙ্গে আরো কিছু গান ছিল। এর মধ্যে বীরাঙ্গনা একটা মেয়েকে নিয়ে গাওয়া ‘ওকে আর করলো না কেউ বিয়ে’ এই গানটিও ছিল। এই গানগুলো নিয়ে যখন বিটিভিতে প্রোগ্রাম করলাম, তখন ‘সব ক’টা জানালা খুলে দাও না’ মানুষ খুবই পছন্দ করল। আর আমি তো অবাক হয়েছি দেশের গান এ রকম কীভাবে হতে পারে! এই ধরনের লিরিকে গান তো একেবারেই নতুন ধরনের। তারপর ‘সেই রেল লাইনের ধারে’, ‘একদিন ঘুম ভেঙে দেখি তুমি নেই’ এই গানগুলো করি। এই সবগুলো গানের কথা বুলবুলের না হলেও সুরগুলো বুলবুলের।

পরবর্তীতে বুলবুল চলচ্চিত্রে গানের কাজ শুরু করল। বেলাল আহমেদ পরিচালিত ‘নাগর দোলা’। সেই ছবিতে দুটি গান করলাম। ‘অন্তর আমার করলাম নোঙর’, আরো একটি গান ছিল। গান দুটি বেলাল আহমেদ খুব পছন্দ করেছিলেন। গান দুটি করে আমারও খুব ভালো লেগেছিল। এক পর্যায়ে, আমার আর বুলবুলের রসায়নটা এমন ছিল যে তার সুরে যে গানই গেয়েছি সেই গানই হিট। তারপর বুলবুল অসংখ্য সিনেমায় কাজ করেছে। আমিও তার সঙ্গে অসংখ্য গান করেছি। তার গান গেয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছি। সব গানের কথা এখনো আমার স্মৃতিতে আছে।

আব্বার সঙ্গে তার আড্ডাগুলো এখনো আমার চোখে ভাসে: আগুন 

ইমতিয়াজ বুলবুলকে একদম ছোটবেলা থেকেই আমি চিনি। আব্বার সঙ্গে পরিচয় ছিল, আমি তাকে ‘বুলবুল চাচা’ বলে ডাকতাম। সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে তাকে চিনি না, একজন গিটারিস্ট হিসেবেই চিনি। বুলবুল চাচাই ছোটবেলা আমাকে বলত, বিটলস শুনেছিস নাকি অথবা ওই গানটা শুনেছিস নাকি? কিংবা এবিসিডি কীভাবে সুন্দর করে উচ্চারণ করতে হয়। এই ব্যাপারগুলোতে বুলবুল চাচা ছিলেন হিরো, আমার কাছেও তিনি হিরো। তার সঙ্গে আমি প্রচুর কাজ করেছি। তার গানে সালমান শাহ, ডিপজল, দিলদার, আফজাল শরীফ; সবার কাজ হয়েছে।

বিভিন্ন রকমের গানে কাজ করেছি তার সঙ্গে। অদ্ভুত অদ্ভুত ধরনের কাজ করেছি। বুলবুল চাচার সঙ্গে জমতোও আমার দারুণ। তিনি শিক্ষিত ছিলেন তো, তাই কথা বললে মগ্ন হয়ে যেতাম একদম। তার সঙ্গে প্রথম যেদিন কাজ করি, তখন একদিন তিনি আমাকে ডাকলেন সিম্ফোনি স্টুডিওতে। কাজ করার পর বলল, ‘এই নে তোর ইনক্রিমেন্ট করে দিলাম। তোকে দেড় হাজার টাকা দিতাম, আজ থেকে তোর দুই হাজার টাকা। তুই কি দেড় হাজার টাকার শিল্পী না কি ব্যাটা, আজ থেকে তুই দুই হাজার টাকার শিল্পী’।

বুলবুল চাচার সঙ্গে আমার সফট মেলোডিয়াস সুইট গানের কাজ কম হয়েছে। যেগুলো হয়েছে সেগুলো একদম রকিং কিছু হয়েছে। খুব ছোটবেলায় আমরা যখন মোহাম্মাদপুরের বাসায় থাকি তখন তিনি মাঝে মাঝে আসতেন। বুলবুল চাচা গিটার বাজাতেন আর প্রয়াত পরিচালক আমির হোসেন বাবু তিনি গামবুট পরে নাচতেন। সুপার! আব্বার সেই ফেলা আসা ড্রয়িং রুম, তাদের আড্ডাগুলো আমার চোখে ভাসে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App