×

সারাদেশ

শঙ্কা-ঘনকুয়াশার মধ্যেই চলছে বোরো রোপন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২০, ০৬:৫১ পিএম

শঙ্কা-ঘনকুয়াশার মধ্যেই চলছে বোরো রোপন

বোরো ধানের চারা বপন করছেন কৃষিশ্রমিকরা।

নওগাঁ জেলার খাদ্যশস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত আত্রাই উপজেলার প্রতিটি মাঠে মাঠে চলছে বোরো ধান রোপনের জন্য কৃষকের জমি প্রস্তুতির কাজ। উত্তরের হিমেল হাওয়া, হাড়কাঁপানো প্রচন্ড শীত ও ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করেই বোরো ধান রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার কৃষকরা। উপজেলার শাহাগোলা, ভোঁপাড়া, বাঁকা, রাইপুর, কালিকাপুর, ভবানীপুর, রসুলপুর, দমদমা, বেওলা, কাশ্যবপাড়া মাঠসহ বিভিন্ন মাঠে চলছে বোরো ধানের চারা রোপনের কাজ। তবে ধান রোপনে বিলম্ব হওয়ায় ফলন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

প্রচন্ড শীত আর ঘনকুয়াশায় বোরো বীজতলা তৈরি করা থেকে শুরু করে চারা রোপন করা পর্যন্ত ব্যস্ততার মধ্যে সময় কাটছে চাষিদের। ইতোমধ্যে নানা সমস্যার মধ্যেও বোরো চারা রোপনের জন্য কোমর বেঁধে মাঠে নেমে পড়েছেন কৃষকরা। এখন গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ দিয়ে ধানের চারা রোপনের কাজ চলছে। কোনো জমিতে চলছে চাষ, বীজতলা থেকে তোলা হচ্ছে বীজ, চলছে রোপন সব মিলিয়ে মাঠে মাঠে জোরেশোরে চলছে বোরো ধান রোপনের কাজ।

কৃষকরা বলছেন, এক ফসল বিক্রি করে অন্য ফসল আবাদ করা হয়। এবারো তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। তবে ধান চাষে বারবার লোকশান হওয়ায় কৃষকরা ধান চাষ থেকে অনেকটাই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। লোকশানের কারণে উপজেলার কৃষকরা পাইকারী হারে কৃষিজমিগুলো লিজ দিয়ে তৈরি করছেন মাছ চাষের পুকুর। এতে করে স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ফসলী কৃষি জমি।

মির্জাপুর গ্রামের চাষি মিঠু মন্ডল বলেন, গত বছর তিনি ৮ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছিলেন। এবার করছেন ৫বিঘা জমিতে। প্রচন্ড শীত আর ঘনকুয়াশাকে উপেক্ষা করে প্রায় জমি তৈরির কাজ শেষের দিকে। আর ক’দিনের মধ্যে চারাগাছ রোপন করা শুরু করবো।

তিনি আরোও বলেন, লাগাতার ধানের দাম না থাকার কারণে আবাদি জমির পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। আবার যতদিন যাচ্ছে আবাদ খরচও বেড়ে যাচ্ছে। গত বছর বিঘা প্রতি আবাদে খরচ হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। এবার বিঘা প্রতি খরচ ৬ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ কারণে শ্রমিকের মজুরি ৩৫০টাকার উপরে দিতে হচ্ছে। ডিএপি সার প্রতি বস্তা ৭৮০ থেকে ৭৯০ টাকা। আমদানি কম হলে দাম বেড়ে যাবে। ইউরিয়া সার বস্তা প্রতি ৮০০, এমওপি ৭৫০টাকা। এছাড়াও রয়েছে অন্যান্য খরচ। এবছর শুধুমাত্র ডিএপি সারের দাম কমেছে। বাকি সারগুলোর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এই সারগুলোর দাম কমলে উৎপাদন খরচ কমতো। এছাড়া কীটনাশকের দাম কখন বাড়ে আর কখন কমে তা বলা অসম্ভব।

ভবানীপুর গ্রামের কৃষক ইয়াচিন আলী বলেন, পৌষ মাসের শুরুতেই বোরো ধান রোপন করা শেষ হওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু প্রচন্ড শীত আর ঘনকুয়াশার কারণে কৃষকরা মাঠে নামতে পারেননি। তাই চলতি মৌসুমে বোরো ধান রোপনে কিছুটা বিলম্ব হয়ে গেলো। এতে করে ফলনও একটু ব্যাহত হতে পারে। এবছর তিনি ৫ বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গত মৌসুমে তিনি ১০বিঘা জমিতে বোরোর আবাদ করেছিলেন। মূলত ধানের দাম না থাকার কারণে আবাদ কমিয়ে দিয়েছেন। বাজারে ধানের দাম, ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা মণ বিক্রি করতে হচ্ছে। ধানের এমন দামে আবাদ করলে চাষাবাদের খরচও উঠবে না বরং ঋণের বোঝা আরো বৃদ্ধি পাবে।

সিংসাড়া গ্রামের কৃষক মুরশেদ আলী বলেন, কৃষির উপর নির্ভর করে আমাদের চলতে হয়। সার, কীটনাশকসহ দৈনিক কাজের মুজরীর যে অবস্থা আর ধানের দাম না থাকায়,আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কে এম কাউছার হোসেন বলেন, ধানের দাম না থাকায় গত কয়েক বছর থেকে বোরো ধানের আবাদ আশঙ্কাজনক হারে কম হচ্ছে। এছাড়াও অন্যান্য ফসলের তুলনায় বোরো ধানে অধিক পরিমাণে সেচ দিতে হয়। আর সেচ দেয়ার জন্য গভীর নলকূপের উপর ভরসা করতে হয়। ফলে ভূগর্ভস্থ পানি অধিক পরিমাণে উত্তোলনের কারণে পানির স্তরও নীচে নেমে যাচ্ছে। বাড়াতে হবে আমন, আউশ, গম, আলুসহ বিভিন্ন লাভজনক রবি শস্যের আবাদ। এতে করে একদিকে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App