×

জাতীয়

চাপের মুখে পিছু হটলো ইসি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২০, ১০:১৮ পিএম

চাপের মুখে পিছু হটলো ইসি

পূজার দিনে ভোট না করার জোরাল দাবির মুখে পিছু হটে ঢাকা সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণের তারিখ পরিবর্তন করেছে নির্বাচন কমিশন-ইসি। ঢাকা দু সিটির নির্বাচন ৩০ জানুয়ারীর পরিবর্তে এখন ১ ফেব্রুয়ারী শনিবার অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। শনিবার (১৮ জানুয়ারি) রাতে নির্বাচন ভবনে এক সংক্ষিপ্ত ব্রিফিং এ সাংবাদিকদের এসব কথা জানান তিনি।

এর আগে শনিবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেল ৪টা থেকে কমিশনের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একই সঙ্গে ইসির নির্দেশনায় চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ২ দিন পিছিয়ে ১ ফেব্রয়ারির পরিবর্তে ৩ ফেব্রুয়ারী থেকে শুরুর করার ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও সরস্বতী পূজা আগামী ৩০ জানুয়ারি। পূজা ও নির্বাচনের সময় সমন্বয় করতে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা পিছিয়ে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, রবিবার পরীক্ষার নতুন সুচি প্রকাশ করা হবে। অন্যদিকে ভোটের তারিখ পিছিয়ে দেয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনশনরত শিক্ষার্থীরা তাদের চলমান কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়। সরস্বতী পূজার দিনে ভোট না করে দুদিন পিছিয়ে দেয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদসহ সব সমমনা সংগঠন।

সিইসি বলেন, একটি জটিল পরিস্থিতি ছিল। তাই প্রস্তুতি নেবার জন্য কিছুটা সময় লেগেছে। কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত যাতে না লাগে সে বিষয়টা মাথায় রেখে আমরা নির্বাচন ৩০ জানুয়ারীর পরিবর্তে ১ ফেব্রুয়ারি করবো। বিষয়টা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তার সঙ্গে শেয়ার করেছি, ১ তারিখের পরীক্ষা পেছানো সম্ভব কি না। তিনিও সম্মত হয়েছেন। তারা ১ তারিখের পরীক্ষা পিছিয়ে ৩ তারিখ থেকে শুরু করবেন বলে সম্মত হয়েছেন। সিইসি বলেন, ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৯ তারিখ পূজার ঐচ্ছিক ছুটি ছিল। সেখানে ৩০ তারিখ পূজার দিন নেই, সে প্রেক্ষাপটে আমরা ভোটের দিন ৩০ জানুয়ারি নির্ধারণ করেছিলাম।

তিনি বলেন, ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও নির্বাচনের কারণে তা শুরু হবে ৩ ফেব্রুয়ারি। আন্দোলনরতদের জন্য কোনো বক্তব্য আছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারিখ পরিবর্তন তো হয়েই গেল। কোনো বক্তব্যের প্রয়োজন নেই। আগেও আন্দোলন হয়েছে, তখন তারিখ পরিবর্তন হলো না এখন হলো, কমিশনের কোনো গ্রাউন্ড আছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো গ্রাউন্ড নেই। সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে সিইসি বলেন, কোন চাপ নয়, আমরা পুজার বিষয়টি আমলে নিয়েছি। দু দিন ভোট পিছানোয় প্রচারণাও কিছুটা সময় বাড়লো। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী ভোটের ৩৬ ঘন্টা আগে থেকে প্রচারণা বন্ধ হবে বলেও জানান তিনি।

এর আগে গত ২২ ডিসেম্বর ৩০ জানুয়ারি ভোটের দিন রেখে ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছিল ইসি। সে অনুযায়ী সব প্রক্রিয়া শেষে প্রার্থীরা বর্তমানে প্রচারণায় আছেন। দুই সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে ১৩ প্রার্থীসহ প্রায় সাড়ে ৭শ প্রার্থী ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৩০ জানুয়ারী ভোটের দিন সরস্বতী পূজা বলে তফসিল ঘোষণার পরপরই তার বিরোধিতা করেছিল পূজা উদযাপন পরিষদ ও হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদও ভোটের দিন পরিবর্তনের দাবি জানায়। কিন্তু তা আমলে নেয়নি ইসি। এরমধ্যে ভোটের তারিখ পরিবর্তনে হাই কোর্টে রিট আবেদন হলে তা খারিজ হয়ে যাওয়ার পর ইসি ৩০ জানুয়ারি ভোট করার বিষয়ে আরো শক্ত অবস্থান নেয়। যদিও রবিবার আপিল বিভাগে রিটের শুনানী হবার কথা। তার আগে পিচু হটলো ইসি।

ইসির পক্ষ থেকে যুক্তি দেখানো হয়েছিল, ৩০ জানুয়ারিই ভোটগ্রহণের জন্য ‘উপযুক্ত’ দিন। কারণ তার পরের দিন ৩১ জানুয়ারি শুক্রবার বলে সেদিন ভোটগ্রহণের নজির নেই। এরপর ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে বলে প্রায় এক মাস আর ভোট করা যাবে না। আওয়ামী লীগসহ অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলো জানায়, ভোটের তারিখ পরিবর্তনে তাদের আপত্তি নেই। প্রধান প্রধান প্রার্থীরাও ভোটের তারিখ পরিবর্তনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে ইসিকে আহ্বান জানায়।

শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে অযৌক্তিক বললেও তাদের পক্ষে জনমত জোরাল হয়ে ওঠার প্রেক্ষাপটে শনিবার আকস্মিকভাবে জরুরি বৈঠকে বসে ইসি। বৈঠকে অংশ নিতে নির্বাচন কমিশনারদের টেলিফোনে ডেকে নেওয়া হয়। বৈঠকের আগে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সব কিছু বিবেচনা করেই তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।

উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন একযোগে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আর উত্তরের মেয়র আনিসুল হক মারা গেলে উপ-নির্বাচন হয়েছিল গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি। সিটি করপোরেশন আইন অনুযায়ী, করপোরেশনের মেয়াদ হচ্ছে প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। আর ভোটের আয়োজন করতে হয় মেয়াদপূর্তির আগের ১৮০ দিনের মধ্যে। সে অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের ১৩ মে, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের ১৬ মে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App