×

সম্পাদকীয়

ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন জরুরি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২০, ০৬:২৮ পিএম

ব্যাংক পরিচালনায় অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা, অনিয়ম-দুর্নীতি, মন্দঋণ বৃদ্ধি- সব মিলিয়ে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে ব্যাংকিং খাতে। ফলে আর্থিক খাতে ঝুঁকি বাড়ছে। যা দেশের সার্বিক অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত। গতকালের ভোরের কাগজে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা, যা ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের প্রায় ১২ শতাংশ। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসে। তখন ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা। এমন অবস্থা চলতে থাকলে কেবল আমানতকারী বা ব্যবসায়ীরাই ব্যাংকবিমুখ হবেন না, উৎপাদন, বিদেশি বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এখনই সরকারকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শক্ত হাতে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ব্যাংক খাতের নিয়ম-শৃঙ্খলা ফেরাতে নানা কঠোর বার্তা ও পদক্ষেপের কথা শুনিয়েছেন। খেলাপি কমাতে ঋণখেলাপিদের নানা সুবিধা দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে খেলাপি কমার পরিবর্তে আরো বেড়েছে। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, অনিয়ন্ত্রিত খেলাপি ঋণ ও খেলাপিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ার কারণেই মূলত ব্যাংকিং খাতে এমন অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। খাতটি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কবলে পড়েছে। অবস্থার পরিবর্তনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু জোরালো তৎপরতা দেখা গিয়েছিল। খেলাপি ঋণ আদায় ও ঋণ বিতরণে অনিয়ম বন্ধ করতে রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি পাঁচ ব্যাংকের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে।

খেলাপি ও কু-ঋণ আদায়ে আলাদা কোম্পানি গঠন, বড় ঋণখেলাপিদের যৌথভাবে তদারকি করা, দক্ষ ব্যাংক কর্মকর্তাদের ভালো কাজের জন্য পুরস্কৃত করা এবং ব্যর্থদের সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া ঋণ অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া ও ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের কোনোভাবেই ছাড় না দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো খুবই জরুরি ছিল। কিন্তু উদ্যোগগুলো কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে তা আমাদের নজরে পড়েনি। এগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন হলে নিশ্চয় ব্যাংকিং খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন সূচিত হবে। গত বছরের শুরু থেকেই সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল ঋণ আমানতের ‘নয়-ছয়’ ফর্মুলা। ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশের মধ্যে বা সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও বেশ কয়েকবার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সুদের হার কমানোর শর্তে ব্যাংকগুলোকে ৫ ধরনের বিশেষ ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কিন্তু এসব সুবিধা নিয়েও তারা সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামাননি। আমরা মনে করি, ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন ফিরিয়ে আনার বড় চ্যালেঞ্জ এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা সরকারের সামনে। শক্ত হাতে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এ জন্য গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়ন, ব্যাংকগুলোর ওপর তদারকি ও নজরদারি বাড়ানো, প্রয়োজনে আইনি সংস্কার- সবকিছুই করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App