×

জাতীয়

বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২০, ১১:০০ এএম

বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু
চার দিন বিরতির পর আজ শুক্রবার ফজরের নামাজ শেষে আমবয়ানের মধ্য দিয়ে টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুরু হয়েছে তাবলিগ জামাতের ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। প্রথম পর্বের মতো ইজতেমার এ পর্বেও যোগ দিচ্ছেন দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লি। ফজরের নামাজের পর থেকে উর্দু ভাষায় বয়ান শুরু করেন মাওলানা ওসমান। বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা আব্দুল্লাহ মনসুর। ইতিমধ্যে কানায় কানায় পরিপূর্ন হয়ে উঠেছে ইজতেমা ময়দান। আজ শুক্রবার জুমার নামাজ শরিক হবার জন্য ইতিমধ্যেই গাজীপুর ঢাকা নরসিংদি সাভার সহ আশেপাশের লক্ষ মুসল্লি পায়ে হেটে বা গাড়িতে চড়ে ময়দানের দিকে আসতে শুরু করেছে। গত সোমবার রাতে মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীরা ময়দানের দায়িত্ব বুঝে পাওয়ার পর মঙ্গলবার থেকেই ছোট ছোট দলে আসতে শুরু করেন মুসল্লিরা। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা মুসল্লিদের ঢল নামে ইজতেমা ময়দানে। রবিবার আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মুসল্লিদের ঢল অব্যাহত থাকবে। ইজতেমাকে সর্বাত্মকভাবে সফল করতে প্রথম পর্বের মতো এ পর্বেও সতর্ক নজরদারি বজায় রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সিটি করপোরেশন এবং জেলা প্রশাসনের তরফ থেকেও নেয়া হয়েছে সব ধরনের প্রস্তুতি। বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের প্রথম দিন শুক্রবার থাকায় ময়দানেই জুমার নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এটিই এ বছরের জন্য বিশ্ব ইজতেমার শেষ জুমার নামাজের জামাত। তাবলিগ জামাতের মুসল্লিদের বাইরেও লাখ লাখ মুসল্লি জুমার নামাজ আদায় করার জন্য আজ ভোর থেকেই ইজতেমা ময়দানে আসবেন। আজ ফজরের নামাজের পর আমবয়ানের মাধ্যমে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও ইজতেমা ময়দানে মুসল্লি এসে পড়ায় বৃহস্পতিবার থেকেই শুরু হয়ে যায় প্রাক বয়ান। বাদ জোহর বয়ান পেশ করেন ভারতের ভূপাল থেকে আসা মুরব্বি ইকবাল হাফিজ। বয়ানের তরজমা করেন, কাকরাইলের শীর্ষ মুরব্বি মাওলানা মনির ইউছুফ। মুসল্লিরা জেলাওয়ারি খিত্তানুযায়ী অবস্থান করছেন। রবিবার জোহরের নামাজের আগে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে এবারের ইজতেমার সমাপ্তি ঘটবে। বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আমির ইঞ্জিনিয়ার ওয়াসেফুল ইসলামের তথ্য মতে, পরিস্থিতি বিবেচনায় ভারতের নিজামুদ্দিন মারকাজের শীর্ষ মুরব্বি মাওলানা সা’দ কান্ধলভি এ ইজতেমায় আসবেন না। তবে নিজামুদ্দিনের পক্ষ থেকে তাবলিগের শীর্ষ মুরব্বি ও আলেমসহ ৩২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ইতোমধ্যে বিশ্ব ইজতেমায় এসে পৌঁছেছেন। তাদের তত্ত্বাবধানেই পরিচালিত হচ্ছে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। নিরাপত্তা : গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রথম পর্বের চেয়ে দ্বিতীয় পর্বে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করা হয়েছে। বিদেশি মেহমানদের কামরায় বিশেষভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। এ ছাড়া যাতায়াতের সুবিধার্থে ট্রাফিক ব্যবস্থা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের ২৪ ঘণ্টা সেবা : দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমায়ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন আগত মুসল্লিদের ২৪ ঘণ্টা সেবাদান করবে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে প্রথম পর্বে যেসব সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে তা দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায়ও অব্যাহত থাকবে। বিদেশি মুসল্লিদের প্রতি সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে, যাতে তাদের কোনো প্রকার বিঘ্ন না ঘটে। তাদের ওজু গোসলের জন্য রাখা হয়েছে গরম ও ঠাণ্ডা উভয় প্রকার পানির ব্যবস্থা। প্রথম পর্বের পর ইজতেমা মাঠের ভিতর কিছুটা সমস্যা দেখা দিলেও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দিন-রাত কাজ করে তা ব্যবহারের উপযোগী করে তোলেন ২য় পর্ব শুরুর আগেই। বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা : প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বেও বিপুল পরিমাণ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইজতেমা মাঠে আগত মুসল্লিদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ বিতরণ করছেন। বৃহস্পতিবার থেকেই তারা নিজ নিজ ক্যাম্পে অবস্থান করছেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো টঙ্গী ওষুধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি, হামদর্দ, ইবনে সিনা, যমুনা ব্যাংক, সিটি করপোরেশন, র‌্যাব, সিভিল সার্জন কার্যালয় ও ইসলামী ফাউন্ডেশন। টঙ্গী ওষুধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি এম এ লতিফ বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ব ইজতেমায় বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ সরবরাহ করে আসছি। ২০২০ সালের বিশ্ব ইজতেমার প্রথমপর্বে আগত মুসল্লিদের সেবা প্রদান করেছি। এ পর্বেও আমরা সেবা প্রদানের জন্য মাঠে এসেছি। আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত এ সেবা অব্যাহত থাকবে। ইজতেমার প্রথম আয়োজন শুরু হয় ১৯৪৬ সালে কাকরাইল মসজিদে। তারপর ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের হাজি ক্যাম্পে ও ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ১৯৬৬ সালে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বর্তমানস্থলে স্থানান্তরিত হয় ইজতেমা। পরে সরকারিভাবে তুরাগ তীরের ১৬০ একর জমি স্থায়ীভাবে ইজতেমার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিদের ওজু, গোসল ও পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য তিন তলা পাকা বিল্ডিং করে দিয়েছে সরকার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App