×

জাতীয়

শীত কমলেও বাড়ছে রোগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২০, ১০:১৪ এএম

শীত কমলেও বাড়ছে রোগ
শীতের তীব্রতা কমে এলেও শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট রোগীর সংখ্যাই বেশি। সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ মাস এই পাঁচ মাসজুড়েই শীতকালীন রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ। আক্রান্তের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী গত আড়াই মাসে (২০১৯ সালের পহেলা নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত) শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৫৪ জন। এর মধ্যে ২০ জন শিশু। গত পাঁচ বছরের তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার শীতজনিত রোগে আক্রান্ত মৃতের সংখ্যা বেশি। ২০১৮-১৯, ২০১৭-১৮, ২০১৭-১৬ এবং ২০১৫-১৬ সালে যথাক্রমে মৃতের সংখ্যা ছিল ১১, ১৯, ১১ ও ৩৭ জন। চিকিৎসকরা বলছেন, বছরের শীতের এই মৌসুমে অ্যাজমা, ডায়রিয়া, ব্রংকিউলাইটিস, নিউমোনিয়া, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগে মানুষ আক্রান্ত হয়। শৈত্যপ্রবাহের সঙ্গে এ বছর যোগ হয়েছে বায়ুদূষণ। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। তারা বলছেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসবে। আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)-এ দৈনিক পাঁচশ রোগী ভর্তি হচ্ছে। ভর্তিকৃত রোগীদের ৬৫ শতাংশই শিশু। আইসিডিডিআরবির হাসপাতাল বিভাগের প্রধান ডা. আজহারুল ইসলাম খান ভোরের কাগজকে বলেন, ২০১৯ সালে শীতজনিত (রোটা ভাইরাস) ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেশি ছিল। কারণ অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর শীত বেশি ছিল। শীতের তীব্রতা বাড়লে রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া রোগীর প্রকোপ বাড়ে। সাধারণত শিশুরা এতে বেশি আক্রান্ত হয়। তবে শীতের তীব্রতা কমায় রোগীর সংখ্যাও কমে এসেছে। গত সপ্তাহে দৈনিক গড়ে সাড়ে ৬০০ রোগী ভর্তি হয়েছিল। এ সপ্তাহে এ সংখ্যা পাঁচশ। রোগ থেকে বাঁচতে হাত ধুয়ে খাবার খাওয়া ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শ দেন তিনি। কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, দেশে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮০৮ জন। দেশের ২৯৬টি উপজেলা থেকে পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে কন্ট্রোল রুমের হিসাব অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় এআরআইতে (অ্যাবস্ট্রাক্টিভ রিসপারেটরি ইনফেকশন) ৯৪৫ জন, ডায়রিয়ায় দুই হাজার ৮৬ জন এবং অনান্য অসুস্থতায় (জন্ডিস, আমাশয়, চোখের প্রদাহ, চর্মরোগ, জ্বর ইত্যাদি) তিন হাজার ৪০ জন আক্রান্ত হয়েছে। আর ২০১৯ সালের পহেলা নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত এআরআইতে ৬০ হাজার ৮৪ জন, ডায়ারিয়ায় এক লাখ ৪৬ হাজার ৫৭৪ জন এবং অনান্য রোগে এক লাখ ৭১ হাজার ১৫০ জন আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে এআরআইতে ২০, ডায়রিয়ায় ৪ এবং অন্যান্য রোগে ৩০ জন মোট ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ সালে এআরআইতে আক্রান্ত ১৮ হাজার ৭৯১ জনের মধ্যে ২৩ জন, ডায়রিয়ায় ৬৬ হাজার ৮৭৫ আক্রান্তের মধ্যে পাঁচ জন এবং অন্যান্য রোগে আক্রান্ত ২১ হাজার ৭১৩ জনের মধ্যে ৯ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৬-১৭ সালে এআরআই, ডায়রিয়া ও অনান্য রোগে যথাক্রমে আক্রান্ত হয় ১৬ হাজার ৪৯০ জন, ২৬ হাজার ৩৪১ জন ও ১৮ হাজার ৭৩৩ জন। মৃতের সংখ্যা যথাক্রমে ৯, ২ ও শূন্য। ২০১৭-১৮ সালে ১৮ হাজার ৬৮৭ জন এআরআইতে আক্রান্ত হলে মারা যায় ১৮ জন। ৬৫ হাজার ৪৩৯ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্তের মধ্যে মারা যায় একজন। অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয় ২৯ হাজার ৯৪১ জন। এ রোগে কেউ মারা যায়নি। ২০১৮-১৯ সালে ২০ হাজার ৪৪৬ জন এআরআইতে আক্রান্ত হয়। মারা যায় ৭ জন। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয় ৩৫ হাজার ৮৮১ জন। মারা যায় ৪ জন। অন্যান্য রোগে ৩০ হাজার ৪৩২ জন আক্রান্ত হলেও মৃতের সংখ্যা শূন্য। গত পাঁচ বছরের তুলনায় এবার শীতজনিত রোগে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ সম্পর্কে কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার ভোরের কাগজকে জানান, অনেক বছর পর শীত পড়েছে। শৈত্যপ্রবাহের কারণে রোগীসংখ্যা বেড়েছে। এ ছাড়া আগে দেশের ২০টি জেলা থেকে কন্ট্রোল রুমে আক্রান্তের তথ্য এলেও এবারই প্রথম দেশের ২৯৬টি উপজেলা থেকে তথ্য আসছে। ফলে সংখ্যাটা বেশি। তবে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসবে বলে জানান তিনি। আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে হাসপাতালের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শীতজনিত রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে হাসপাতালগুলো প্রস্তুত। সারাদেশের সিভিল সার্জন ও বিভাগীয় প্রধানদের শীতজনিত রোগের সঠিক চিকিৎসা দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ইতোমধ্যেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ঢাকা শিশু হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. রবি বিশ্বাস ভোরের কাগজকে বলেন, মৌসুম পরিবর্তনের কারণে ভাইরাসজনিত রোগ জ্বর, সর্দি ও কাশিসহ ইনফ্লুয়েঞ্জা হয়ে থাকে। ঠাণ্ডা লাগানো থেকে বিরত থাকতে হবে। ঠাণ্ডায় অনেক সময় শিশুদের নাক বন্ধ হয়ে যায়। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এ ক্ষেত্রে নাকে ড্রপ দেয়া দরকার। এ ছাড়া ইনফ্লুয়েঞ্জার ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। তবে এ সময় জ¦রে আক্রান্ত ও দুর্বল শিশুদের অবশ্যই চিকিৎসকদের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App