×

অর্থনীতি

পুঁজিবাজারে বিপর্যয় দুই কারণে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২০, ০৯:৫৯ এএম

পুঁজিবাজারে বিপর্যয় দুই কারণে
দরপতন এখন নিত্যসঙ্গী। একদিন মূল্যসূচক সামান্য বাড়ে তো পরের দিন দ্বিগুণ কমে। দরপতন নিত্যসঙ্গী হওয়ায় থামছে না বিনিয়োগকারীদের রক্তক্ষরণ। পতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে করতে ক্লান্ত হয়ে অনেক বিনিয়োগকারী মার্কেট থেকে বিদায় নিয়েছেন এবং বিদায় নিচ্ছেন প্রতিদিন। তাদের আশঙ্কা ২০১০ সালকেও ছাড়িয়ে যাবে এবারের ধস। গত মঙ্গলবার সরকারি ৪ ব্যাংককে অর্থ মন্ত্রণালয়ের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের নির্দেশের খবরে গতকাল বুধবার লেনদেনের শুরুতে বড় উত্থানের দেখা দেয়। তবে দিন শেষে গ্রামীণফোনের পতনের কারণে সেই উত্থান ধরে রাখতে পারেনি। পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন, ১৯৯৬, ২০১০ সালকেও ছাড়িয়ে যাবে কি এবারের পতন? সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ভাষ্যমতে, অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় ভালো অবস্থায় রয়েছে দেশের অর্থনীতি। প্রতি বছর বাড়ছে প্রবৃদ্ধি। অথচ অর্থনীতির আয়না ‘পুঁজিবাজারে’ চলছে ধস। এ পতনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বহীনতাকে দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। পাশাপাশি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নেতৃত্বের ব্যর্থতা, বাজারে আস্থাহীনতা, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি করে চলে যাওয়া, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নিষ্ক্রিয়তাকেও দায়ী করছেন। কেউ কেউ আবার এমন পরিস্থিতিকে ‘ফলিং নাইফ’ বা পতনশীল ছুরি বলছেন। সূত্র জানায়, পুঁজিবাজারের ধস রোধে গত বছরে নানা সংস্কার হয়েছে। বিনিয়োগসীমা সংশোধন, প্লেসমেন্ট শেয়ারে লক-ইনের মেয়াদ বাড়ানো, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কোটা বাড়ানো ও মিউচুয়াল ফান্ডের রি-ইনভেস্টমেন্ট ইউনিট (আরআইইউ) বাতিল করা হয়েছে। সংশোধিত হয়েছে বিতর্কিত বুক বিল্ডিং পদ্ধতিও। তারপরও বাজারের পতন থামছে না। গতকাল বুধবার ডিএসইর মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৩২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০৬৮ পয়েন্ট, যা সোমবার ৮৯ পয়েন্ট ও মঙ্গলবার ৮৭ পয়েন্ট কমেছিল। এ বিষয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ ভোরের কাগজকে বলেন, পুঁজিবাজারে আস্থাহীনতার কোনো স্থান নেই। অথচ প্রতিদিনই আস্থার পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এর কারণ আমাদের পুঁজিবাজার অত্যন্ত ভঙ্গুর, দুর্বল কিছু কোম্পানি নিয়ে গঠিত। সরকারি বা বড় কোনো কোম্পানিকে এখানে আনতে পারছে না। এছাড়া যে অনিয়মগুলো বিগত দিনে হয়েছে, দৃশ্যত তার কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সুতরাং আস্থা সৃষ্টির জন্য যা যা করা দরকার সেই বিষয়গুলো দৃশ্যমান করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ড. খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, বর্তমান অর্থমন্ত্রী নিজেই শেয়ার মার্কেটের একজন বড় খেলোয়াড় ছিলেন। সে কারণে তিনি কিছু করতে পারবেন না বা করবেনও না। আর এ জন্য বলছি, বিএসইসিকে ঢেলে সাজালে হয়তো শেয়ার মার্কেট আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতির জন্য সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনকে দায়ী করে তিনি বলেন, কমিশনের চেয়ারম্যান নিজেই একজন দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি। আইনত এক ব্যক্তি দুই টার্ম সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান থাকতে পারেন। কিন্তু তিনি তৃতীয় টার্মেও আছেন। সুতরাং কেউ নিজেই আইন ভঙ্গ করলে তার পক্ষে আইন তৈরি করা বা রক্ষা করা সম্ভব নয়। আরেকটি বড় বিষয় হচ্ছে তিনি অনৈতিকভাবে তৃতীয় টার্মে আছেন মানে তদবির করে আছেন। সুতরাং তিনি ক্রাইমি স্বার্থে এত বেশি জড়িয়ে পড়েছেন যে, তার দ্বারা ভালো কিছু আশা করা সম্ভব না। আর এসব কারণে বিনিয়োগকারীদের এখন কোনো আস্থাই নেই মার্কেটের প্রতি। এ জন্য প্রয়োজন সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনকে পুনর্গঠিত করা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবু আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, বর্তমান সরকার বুঝতে অক্ষম যে, শেয়ার মার্কেটের সমর্থন ছাড়া অর্থনীতি এগিয়ে নেয়া সম্ভব না। পুঁজিবাজারের সমর্থন ছাড়া চীন, ভারত কেউই অর্থনীতিতে উন্নতি করতে পারত না। ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করার জন্য আমাদের অর্থমন্ত্রীর কোনো তৎপরতা নেই। তিনি আরো বলেন, ভালো কোম্পানি না আনতে পারার ব্যর্থতা এসইসিরও রয়েছে। ২০১০ পরবর্তী পুঁজিবাজারে ৯৬টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে, যার বড় অংশই মানহীন। এর মধ্যে অধিকাংশ আইপিও এসেছে কয়েকটি মার্চেন্ট ব্যাংকের সমন্বয়ে গঠিত একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। গত ৮ বছরে যত আইপিওর অনুমোদন দেয়া হয়েছে, তার ৫৩ শতাংশের আয় কমে গেছে। প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালের পুঁজিবাজার বিপর্যয়ের পর বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরতে এক যুগেরও বেশি সময় লেগেছে। এরপর আবার বিপর্যয় ঘটে ২০১০ সালে। ২০১০ সালের বিপর্যয়ের পর নতুন গঠিত নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ৩ মাসের মধ্যে বাজার পরিস্থিতির উন্নতির ওয়াদা করে সংস্থাটির দায়িত্ব নিলেও গত ৮ বছরে এ লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে, এমনটাই মনে করেন বিশ্লেষকরা। তাদের আশঙ্কা আগের বিপর্যয়গুলোর সময় পুঁজিবাজারের যে আকার ছিল এখন তার চেয়ে অনেক বড়। সুতরাং আবার যদি বিপর্যয়ের মুখে পড়ে পুঁজিবাজার, তাতে লোকসান যেমন বাড়বে তেমনি বাড়বে লোকসানের শিকার বিনিয়োগকারীর সংখ্যাও।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App