×

মুক্তচিন্তা

ধর্ষক, নরপশু ও সভ্যতা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২০, ০৮:২১ পিএম

ধর্ষণের মতো অপরাধ বাংলাদেশে প্রতিদিন বাড়ছে। ধর্ষণের শিকার ক্রমাগতভাবে বাড়লে বাংলাদেশও একদিন আমেরিকার মতো ধর্ষণের তালিকার প্রথম কাতারে চলে আসতে পারে। কারণ পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হয় আমেরিকায়। বাংলাদেশের ধর্ষণ নিরোধকল্পে বিজ্ঞজনরা নানা ধরনের উপদেশ দিচ্ছেন। ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বিধানের জন্য সোচ্চার প্রতিবাদকারীরা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এ পর্যন্ত আলোচিত এবং হাজার হাজার মানুষের প্রতিবাদ করা কতগুলো ধর্ষণের বিচার হয়েছে? তার সঠিক পরিসংখ্যানটিই বা কোথায়। নুসরাত হত্যার বিচার হয়েছে দ্রুত এ কথা ঠিক কিন্তু তনু। ২০১৬ সালে সারাদেশ প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিল তনু হত্যার প্রতিবাদে। তনু হত্যার বিচারের রায় কি কার্যকর হয়েছে। তনু হত্যার বিষয়টি হৃদয়বিদারক, দুবার তনুর লাশ ময়নাতদন্ত হয়। আর এই তদন্ত বিষয়টি যেভাবে গণমাধ্যমে আসে তা হয়ে ওঠে মুখরোচক গল্পের মতো। ২০১৬ সালের ১৩ জুনের দৈনিক সংবাদের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, সাংবাদিকরা মেডিকেল বোর্ডকে প্রশ্ন করেছিল, মৃত্যুর আগে তনু ধর্ষিতা হয়েছিল কিনা? এই প্রশ্নটির জবাব মেডিকেল বোর্ড উত্তর দিয়েছিল এভাবে ধর্ষণ হচ্ছে একটি লিগ্যাল টার্ম এটা সায়েন্টিফিক টার্ম না। যৌনাঙ্গের স্পর্শ লাগলেই ধর্ষণ হয়। এটা লিগ্যাল টার্ম সায়েন্টিফিক না, কিন্তু মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য ডা. ওমর ফারুক যা বলেছিলেন তা হয়তো লিগ্যাল না হয়ে সায়েন্টিফিক ব্যাখ্যা হতে পারে। তিনি বলেছেন, সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স আর ধর্ষণ দুটি ভিন্ন বিষয়, তবে তনুর মৃত্যুর আগে সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স হয়েছে তবে কতক্ষণ আগে হয়েছে তা বলা যাবে না। মৃত্যুর আগে যে যৌন ক্রিয়া হয়েছে ডা. ওমর ফারুক তা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন তনুর যৌন ক্রিয়ার অভিজ্ঞতা ছিল। এখানে প্রশ্ন আসে, অভিজ্ঞ কোনো নারীকে ধর্ষণ করা কি অপরাধ হবে না? যদি ময়নাতদন্তে তনুর যৌন অভিজ্ঞতা প্রমাণ করা যায় তাছাড়া রিপোর্টে বলা হয়েছে মৃত্যুর আগে তনু সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স করেছে, তাহলে এই ইন্টারকোর্সটি ধর্ষণ তো হতে পারে না কেন? মেডিকেল ফরেনসিক টিমের বক্তব্যে কি বৈপরীত্যের সুর বুঝা গিয়েছিল সেই সময়। বিজ্ঞান আর বৈজ্ঞানিক ব্যাখায় আসলে ফরেনসিক টিম বা মেডিকেল টিম কি বুঝাতে চেয়েছেন তা সাধারণ মানুষের বোধগম্যতায় আসবে না। বিষয়টা হলো ডাক্তারি পরীক্ষার বৈজ্ঞানিক ভিত্তির ওপর মন্তব্য করা ঠিক না। তবে ফরেনসিক মেডিকেল টিমের সদস্য মৃত তনুর সম্পর্কে যা বলে ছিলেন তাতে তনু হত্যাকাণ্ডের রহস্য আরো ঘনীভ‚ত করা মতো। ফরেনসিক টিমের সদস্যের বক্তব্যের মাধ্যমে তনুর বিষয়ে অন্য আরেকটা নতুন দিক প্রকাশিত হলে কাউকে দোষারোপ করা যেত না। তনুকে হত্যা করা হয়েছে এটা তো সত্য। কারা তনুকে হত্যা করল এই রহস্য উন্মোচন করাটাই ছিল সেই সময় বেশি জরুরি? কিন্তু তা করা হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়–য়ার ধর্ষণের পর ঢাকায় আরো দুটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। তার মধ্যে একটি কিশোরী ধর্ষণ। প্রতিদিনই কোনো না কোনোভাবে নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হয়। কেন ধর্ষণের মতো অপরাধ বাড়ছে সে বিষয়ে গবেষণা করা দরকার। এদেশে যৌন শিক্ষার রয়েছে অভাব। বয়োসন্ধিকালে শিক্ষার্থীদের যৌন বিষয়ক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। যৌন শিক্ষা সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাবে যৌন সংক্রান্ত অপরাধ এবং যৌন রোগও ছড়ায়। তাছাড়া আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, ধর্ষণ বা হত্যাকাণ্ড যেগুলো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক বা গণমাধ্যম তোলপাড় সৃষ্টি করে, সেই অপরাধগুলোর অপরাধী ধরতে পুলিশ তৎপর হয়ে ওঠে। এদেশের ছিন্নমূল গৃহহারা নারীদের প্রতি যে ব্যাভিচার হচ্ছে তা সাধারণত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা গণমাধ্যমে তেমন একটা আসে না। ফলে এদের ওপর সংঘটিত অপরাধ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও তেমন একটা তৎপরতা দেখায় না। বছরের পর বছর অনেক ঘটনার বিচার হয় না। তাই অপরাধ বেড়েই চলছে। সুতরাং নতুন আইনের চেয়ে বিদ্যমান আইনের আওতায় এনে এই অপরাধগুলোর বিচারটা দ্রুত করাই জরুরি। আর তা করতে না পারলে ধর্ষণ ও অন্যান্য অপরাধ ক্রমাগত হারে বাড়বে। কাদিরগঞ্জ, রাজশাহী। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App