×

মুক্তচিন্তা

মা-বাবা থাকবে সন্তানের হৃদয়ে, বৃদ্ধাশ্রমে নয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২০, ০৬:৩৫ পিএম

মা-বাবা থাকবে সন্তানের হৃদয়ে, বৃদ্ধাশ্রমে নয়

পৃথিবীতে প্রায় বেশিরভাগ পরিবারে শেষ বয়সে অবহেলার শিকার হন বাবা-মা। কিন্তু কেন এই অবহেলা, কেন তাদের হেয় করা? অতি স্নেহ-আদরে যাদের বড় করে তুলেন, তারাই কেন তাদের দুঃসময়ে বৃদ্ধাশ্রমের ঠিকানা দেখান। নিজে কষ্ট করে যে বাবা তার ছেলের খরচ চালিয়ে যান দিনের পর দিন, সেটাই কি ছিল তার অপরাধ? বছরের পর বছর যে বাবা পুরনো শার্ট, প্যান্ট পরে অফিস করে ছেলের পরীক্ষার খরচ চালিয়ে যেতেন, নিজে না খেয়ে ছেলেকে টাকা পাঠাতেন, যাতে সে অন্য বন্ধুদের কাছে ছোট না হয়, সেটা হয়তো ছিল বাবার অপরাধ।

যে বাবা-মা এক সময় নিজে না খেয়েও সন্তানের মুখে তুলে খাইয়ে দিতেন, তারা আজ কোথায় আছেন, কেমন আছেন, তাদের খোঁজখবর নেয়ার সময় আমাদের নেই। তার নিজের সন্তানও হয়তো একদিন তার সঙ্গে এমন আচরণই করবে। বিভিন্ন উৎসবে, যেমন ঈদের দিনেও যখন তারা তাদের সন্তানদের কাছে পান না, সন্তানের কাছ থেকে একটি ফোনও পান না, তখন অনেকেই নীরবে অশ্রুপাত করেন আর দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। আজ আমরা চাকরি করি, ব্যবসা করি, প্রতিষ্ঠিত হচ্ছি, সুনাম কুড়াচ্ছি। তারপর বিয়ে করে নতুন সংসার নিয়ে আলাদাভাবে থাকছি। অন্যদিকে বৃদ্ধ মা-বাবা কী করছেন, কী খাচ্ছে, কোন জটিল ও কঠিন রোগে ভুগছেন সেদিকে বিন্দুমাত্র কোনো খেয়াল নেই আমাদের। শুধু নিজের স্ত্রী এবং সন্তান নিয়ে কীভাবে চলব সেটা ভেবে থাকি।

নিজে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে একটু ভালো থাকার জন্য মা-বাবার ঠাঁই করে দিয়েছেন বৃদ্ধাশ্রমে। আবার এমনো দেখা যায় যে সন্তানের টাকা-পয়সার অভাব নেই, কিন্তু মা-বাবাকে নিজের কাছে রাখার প্রয়োজন বোধ করছেন না বা বোঝা মনে করছেন। হয় নিজেই পাঠিয়ে দিচ্ছেন বৃদ্ধাশ্রমে, নয়তো অবহেলা-দুর্ব্যবহার করে এমন অবস্থার সৃষ্টি করছেন যেন তাদের মা-বাবা নিজেরাই সরে যান তার সাধের পরিবার থেকে। তবে এমন সন্তানের সংখ্যা অসংখ্য নয়। একবার বৃদ্ধনিবাসে পাঠাতে পারলেই যেন সব দায়মুক্তি। এভাবে নানা অজুহাতে মা-বাবাকে দূরে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। অনেক নামিদামি বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, শিক্ষক, চাকরিজীবী যারা এক খুব বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ছিলেন, বৃদ্ধ বয়সে এসে নিজের সন্তানের দ্বারাই অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হয়ে বৃদ্ধাশ্রমে।

আজ যে সন্তান তার মা-বাবাকে জোর করে কিংবা এমনভাবে অবহেলা করছে যাতে, তার মা-বাবা নিজেই যেনও বৃদ্ধাশ্রমে যেতে বাধ্য হয়, সেই সন্তানকেই যখন তার সন্তান এভাবেই বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাবে, তখন তার কেমন লাগবে? সন্তান যখন বেশি সুখ, ভোগ করার আশায় তার অসহায় বৃদ্ধ মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠায় তখন তার বিবেক ঘুমিয়ে থাকে কেমনে? সময় বড় বেরসিক। আবর্তিত হয়ে বদলা নেবেই! মা-বাবা সর্বোত্তম, তাদের দোয়া ছাড়া পার হতে পারবে না, পরপারের বাধা, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের স্বর্গ রাখা, আমাদের মনে রাখা উচিত- আজ যিনি সন্তান, তিনিই আগামী দিনের বাবা কিংবা মা। বৃদ্ধ বয়সে এসে মা-বাবারা যেহেতু শিশুদের মতো কোমলমতি হয়ে যান, তাই তাদের জন্য সুন্দর জীবনযাত্রার পরিবেশ তৈরি করাই সন্তানের কর্তব্য। আর যেন কখনো কোনো মা-বাবার ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রম না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

বৃদ্ধ বয়সে মানুষ তার সন্তান, নাতি-নাতনিদের সঙ্গে একত্রে থাকতে চান। তাদের সঙ্গে জীবনের আনন্দটুকু ভাগাভাগি করে নিতে চান। সারাজীবনের কর্মব্যস্ত সময়ের পর অবসরে তাদের একমাত্র অবলম্বন এই আনন্দটুকুই। বলা যায় এর জন্যই মানুষ সমগ্র জীবন অপেক্ষা করে থাকে। বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় পাওয়া যায়, সঙ্গী-সাথী পাওয়া যায়, বিনোদন পাওয়া যায়, কিন্তু শেষ জীবনের এই পরম আরাধ্য আনন্দটুকু পাওয়া যায় না, যার জন্য তারা এই সময়টাতে প্রবল মানসিক যন্ত্রণা আর ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে ওঠেন। যে বাবা-মা একসময় নিজে না খেয়েও সন্তানকে মুখে তুলে খাইয়ে দিতেন- আজ কীভাবে, কোথায়, কেমন আছেন সেই খবর নেয়ার সময় যার নেই তার নিজের সন্তানও হয়তো একদিন তার সঙ্গে এমনই আচরণ করবে। কোনো মা-বাবার ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রমে যেন না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। আমাদের সবার তাদের জন্য তৈরি করতে হবে একটা নিরাপদ ও সুন্দর পৃথিবী। এ ক্ষেত্রে সরকারকেও আইনের মাধ্যমে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

 সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, সিলেট। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App