×

মুক্তচিন্তা

এ কলঙ্ক ঘোচাতে হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২০, ০৬:৪১ পিএম

সম্রাট নেপোলিয়ান বলেছেন, ‘আমাকে একটা শিক্ষিত মা দাও আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি উপহার দিবো।’ আমাদের ঘুণে ধরা শিক্ষা ব্যবস্থায় মানুষ তৈরি হচ্ছে? নাকি নৈতিকতাবর্জিত শিক্ষিত মানুষ তৈরি হচ্ছে! শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। আর শিক্ষকদের বলা হয়ে থাকে মানুষ গড়ার কারিগর।

এমনও দেশ আছে যে দেশের প্রায় সবাই শিক্ষিত বা প্রকৃত শিক্ষার হার খুবই বেশি। এ ব্যাপারে আমরা শ্রীলঙ্কার উদারহণ টানতে পারি। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেমন শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই উপযোগী তেমনি শিক্ষক-শিক্ষিকা বা পাঠদানকারীরাও শিক্ষার্থীদের খুব আপনজনের মতো। বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা যেন আরো বেশি। কারণ মাঝে মধ্যেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ছাত্রী কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশ পাচ্ছে গণমাধ্যমে। হঠাৎ করে এ ধরনের ঘটনা ফের বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। শিক্ষকদের দেখাদেখি একশ্রেণির ছাত্র বা বখাটেও একের পর এক এ ধরনের জঘন্যতম ঘটনা ঘটাচ্ছে।

দেশসেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বসুন্ধরা শাখায় শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী ধর্ষণের ন্যক্কারজনক খবর ছাপা হয়েছে পত্রপত্রিকায়। জানা গেছে, ওই শিক্ষক (ভিকারুননিসা নূন স্কুলের) ছাত্রী কেলেঙ্কারির অভিযোগে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকেও বহিষ্কৃত হয়। আরো জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির বসুন্ধরা শাখার আরো কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধেও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। ধিক্কার জানায় দেশবাসী ও অভিভাবকরা!

ঈশ্বরদীর একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওই স্কুলের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করতে গেলে তার চিৎকারে এলাকাবাসী দৌড়ে এসে ছাত্রীটিকে উদ্ধার করে এবং প্রধান শিক্ষককে আটকে রেখে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। জানা যায়, আদালত অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে চার মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে জেলহাজতে পাঠান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের একটি বিদ্যালয়ের একজন ইংরেজি শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ তাকেও গ্রেপ্তার করে।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী বা শিশুদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনকে অবৈধ ও সংবিধান পরিপন্থী হিসেবে রায় দেন আদালত। নির্যাতন বন্ধ ও তা নজরদারির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদালত নির্যাতনের বিষয়কে অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করে তা জেলা প্রশাসকের (ডিসি) নেতৃত্বাধীন জেলা উন্নয়ন কমিটির এখতিয়ারভুক্ত করারও নির্দেশ দেন।

শিক্ষকের নির্যাতন বা যৌন নির্যাতনের ভয়ে অনেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া থেকে বিরত থাকে। সামান্য শাস্তি প্রদানের নামেও অনেক সময় ছাত্রীদের গায়ে শিক্ষকের হাত পড়ে। গ্রামে স্কুলের বড় বড় ছাত্রীর গায়ে অনেক শিক্ষক হাত দেয়। বেশিরভাগ ছাত্রীর সরলতার সুযোগ নিয়েই শিক্ষকরা এসব করে থাকে।

শিক্ষকরা এখন ছাত্রীদের ওপর চড়াও হওয়ার নানা সুযোগ ও কৌশল খুঁজে বেড়াচ্ছে। তবে ভালো শিক্ষক যে নেই তা বলা যাবে না। শিক্ষার্থীর ওপর শিক্ষকের নির্যাতন মৃত্যুর মতো ঘটনাও ঘটাতে পারে। মনোবিজ্ঞানীরা বলেছেন, নির্যাতনের কারণে অনেকে মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলতে পারে। অকালে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার পেছনে এটাও কারণ বলে জানা গেছে। অনেকে শাস্তির ভয়ে স্কুলে না গিয়ে নানা অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয় অল্প বয়সেও।

আমাদের দেশের সরকার শিক্ষার হার বাড়ানোর ব্যাপারে বেশি উদ্যোগী। কিন্তু আগে বাড়ানো উচিত শিক্ষার মান। শিক্ষার মান বাড়ানোর প্রশ্ন উঠলে অবশ্য শিক্ষকদের উন্নত মানসিকতার প্রশ্ন এমনিতেই চলে আসে। এ দেশে শিক্ষকদের মেধা বৃদ্ধি, চরিত্র গঠন ইত্যাদি সম্বন্ধে সরকারি নজরদারির খুবই অভাব। দুর্নীতি বা নানা প্রভাব খাটিয়ে অনেকে শিক্ষকতায় ঢুকে বলেও অভিযোগের কথা শোনা যায়। দেশের কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান এতটাই নিচে নেমে গেছে যে, ছাত্রীদের পাশাপাশি শিক্ষিকাকেও যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়। এ সংক্রান্ত সব খবর মিডিয়াতে আসে না। না হলে শিক্ষাঙ্গনে যৌন সন্ত্রাসের খবর আরো বেশি করে প্রচার হতো। আমরা চাই না শিক্ষাঙ্গন অরক্ষিত হয়ে পড়ুক।

আমরা চাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়ালেখা করার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসুক। এজন্য সরকারের পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েও কমছে না যৌন সন্ত্রাস। সেখানেও মাঝে মধ্যে ঘটছে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা। অনেকে বলছেন, শিক্ষাঙ্গনে বর্তমানের মতো এত বেশি যৌন সন্ত্রাস আগে কখনো লক্ষ করিনি। এ কলঙ্ক সহজে ঘোচার মতোও নয়।

শুধু শিক্ষিত নয়, সুশিক্ষিত জাতি গঠন করতে আমাদের পাঠ্যপুস্তকে নৈতিকতার শিক্ষা ও ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করলে আগামী প্রজন্ম শিক্ষাঙ্গনের মতো পূত-পবিত্র স্থানে যৌন সন্ত্রাসের মতো এক শ্রেণির বিকৃত মস্তিষ্কের ন্যক্কারজনক কার্যক্রম বন্ধ হবে।

মীরসরাই, চট্টগ্রাম। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App