আরেক যুদ্ধাপরাধীর কবলে যুক্তরাষ্ট্র?
nakib
প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২০, ০৭:৩৬ পিএম
জর্জ বুশ ও টনি বে্লয়ার একত্রে মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে আফগানিস্তান ও ইরাক আক্রমণ করে যা যা করেছেন তা জঘন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের চেয়ে এক বিন্দুও কম নয়। কিন্তু লাখ লাখ নিরীহ মানুষকে হত্যা, পঙ্গু ও বাস্তুহারা করার পর আজ এ কথা বলে তেমন লাভ নেই। ২০১৬ সালে ব্রিটেনে জন চিলকটের নেতৃত্বে ‘ইরাক তদন্ত কমিটি’ তাদের প্রতিবেদনে দ্ব্যর্থহীনভাবে এই দুই বেহায়া নেতার নৃশংস অপরাধী কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে। কিন্তু তাতে কী আসে যায়! নামেমাত্র একটা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আছে, যাদের কোনো ক্ষমতা নেই এই দুই অপরাধীকে ধরার ও তাদের বিচার করার। তবে বিশ্বব্যাপী প্রতিদিনই অনেক ক্ষুদে অপরাধী ধরা হয় ও তাদের বিচার করা হয়।
বুশ-বে্লয়ার জোটের এই যুদ্ধাপরাধী কর্মকাণ্ড এখনো চলমান, ওবামা আমলের একটা সামান্য বিরতিসহ। সে সময় আমেরিকার শত্রু তালিকায় ছিল ইরাক। ইরাক-আফগানিস্তান ধ্বংস করার পর তারা চোখ দিয়েছে ইরানের ওপর। অবশ্য অনেকদিন ধরেই দেশটি আমেরিকার শত্রু তালিকায় আছে। বুশ ইরানকে দুষ্ট পক্ষের (অ্যাক্সিস অব ইভিল) তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার পর থেকে এটি ধীরে ধীরে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠছে। অত্রএব ইরানের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক আক্রমণে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই, এতে তার তেমন কোনো চরিত্রস্খলন হয়নি। দেশটির একজন সামরিক নেতাকে তৃতীয় আরেকটি দেশে কয়েকজন সঙ্গীসহ হত্যা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার দেশের নয়া সাম্রাজ্যবাদী ইরান নীতিকে অনুসরণ করছেন মাত্র।
২০২০ সাল শুরু হলো বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্টের যুদ্ধের দামামা দিয়ে। ইরানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর নেতা কাসেম সোলেমানিকে হত্যা করে ট্রাম্প বুক ফুলিয়ে ঘোষণা করেন যে, ‘এক দৈত্য’কে হত্যা করা হয়েছে। সত্যকে উল্টে দেয়ার চমৎকার অরওয়েলীয় উদাহরণ এটি। এবার যুদ্ধের রথে চড়ে ক্ষমতায় আরোহনের হিসাব কষেছেন ট্রাম্প। সোলেমানির হত্যাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে তিনি ডেমোক্র্যাট ক্যাম্পে বিভাজনের বীজ বুনতে সক্ষম হয়েছেন। ডেমোক্র্যাট নেতা ও প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরা দ্ব্যর্থহীনভাবে এই খুনের নিন্দা করছেন না। তারা দুই নৌকায় পা দিয়ে চলার তেলেমসমাতি খেল দেখানোর কৌশল অবলম্বন করেছেন। বাইডেন থেকে ওয়ারেন পর্যন্ত কেউই এ খুনকে নৈতিকতা-বিবর্জিত ও আন্তর্জাতিক সভ্য আচরণের লঙ্ঘন বলে মনে করছেন না, তাদের ক্ষোভ ট্রাম্পের পরিকল্পনায় দুর্বলতার প্রতি। ব্যতিক্রম কেবল বার্নি স্যান্ডার্স, যিনি তীব্র ভাষায় এ ট্রাম্পীয় হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করেছেন।
প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির বায়োএথিকসের অধ্যাপক পিটার সিঙ্গার Was Killing Suleimani Justified? শীর্ষক নিবন্ধে (প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, ৬ জানুয়ারি) এই মার্কিন ভণ্ডামির দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘মার্কিন সংবিধান যুদ্ধ ঘোষণার সব কর্তৃত্ব কংগ্রেসকে অর্পণ করেছে আর কংগ্রেস ইরানের বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধ ঘোষণা করেনি। স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলতে চেয়েছেন, সোলেমানিকে হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল। এটি যদি যুদ্ধের পদক্ষেপ হয়, তবে তিনি ঠিকই বলেছেন। অন্যদিকে যদি এটি যুদ্ধের পদক্ষেপ না হয়, একটি হুমকি মোকাবেলা করতে এরূপ বিচারবহিভর্‚ত হত্যার জন্য ওই আলোচনার প্রয়োজন নেই। এ রকম পদক্ষেপ বেআইনি ও অনৈতিক। মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিশোধের স্পৃহাকে জাগানো ছাড়াও আন্তর্জাতিক আইন-কানুনের অবনতিসহ অনেক খারাপ প্রতিফলের ঝুঁকি আছে এতে।’
নির্বাহী সম্পাদক, শিক্ষালোক।