×

মুক্তচিন্তা

ধর্ষণ : কারণ ও প্রতিরোধের উপায়

Icon

nakib

প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২০, ০৭:২৯ পিএম

একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বে ধর্ষণ একটি মহামারি আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া একের পর এক ধর্ষণ গোটা জাতিকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। আর এই উদ্বিগ্নতা থেকেই ধর্ষণের পেছনের কারণগুলো ভাবতে হলো। কারণ একজন ধর্ষক কিন্তু ধর্ষক হয়েই জন্মায় না। জন্মের পর বিভিন্ন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তার আচরণগত, চারিত্রিক ও মনস্তাত্তি¡ক বিকৃতি ঘটে। অর্থাৎ ধর্ষক কিন্তু একদিনে তৈরি হয় না। আর ধর্ষণের মতো মহামারি যদি রুখতে হয় তাহলে সেই জায়গাগুলোতে আগে পৌঁছাতে হবে, যেখানে সে একটু একটু করে ধর্ষক হতে থাকে। একজন ধর্ষকেরও সমাজে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। তাই তারও মনোজগতের চিকিৎসা করা প্রয়োজন। আর এই চিকিৎসার জন্যই আগে রোগ চিহ্নিত করা আবশ্যক। সাম্প্রতিক ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষকের ব্যাপারে বলা হচ্ছে সে মাদকাসক্ত ও মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত ছিল। হ্যাঁ, সে মাদকাসক্তই ছিল। এখন ধর্ষণ রুখতে হলে আগেই এই মাদক নির্মূল করতে হবে। উগ্র যৌনতার আরেক উৎস প্রেমিক-প্রেমিকার অবৈধ আলাপন, অবৈধ সম্পর্ক। সাম্প্রতিক সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেশব্যাপী অভিযানে ও মিডিয়ার কল্যাণে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পার্ক, উদ্যানসহ ঝোপঝাড়ে তরুণ-তরুণীদের আপত্তিজনক অবাধ মেলামেশার দৃশ্য উঠে এসেছে। এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসন যথেষ্ট আন্তরিক থাকলেও এই তরুণ-তরুণীদের নিয়ে কখনো কি ভেবেছি আমরা! আমাদের সমাজকর্তারা কিংবা বুদ্ধিজীবীদের কি এসব বিষয়ের কারণ, পরবর্তী ফলাফল, সমস্যা এবং সমাধান নিয়ে গভীর গবেষণা করা উচিত নয়? সমাজে বহুল প্রচলিত ও বিতর্কিত নারীর পোশাকের বিষয়টিও পুরুষজাতিকে নারীদেহের প্রতি আকৃষ্ট করে এবং যৌনতায় প্রণোদনা দেয়। কথা হতে পারে সেটা নারীর দোষ নয়; বরং পুরুষের বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গির দোষ। যদি এটাই হয় তবে দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ এবং অবাধ মেলামেশা রোধ করাও অতীব জরুরি। সবশেষে এসে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তো আছেই। একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ অসুস্থ হয়ে ওঠে উপর্যুক্ত প্রক্রিয়ায় আর সমাজকে অসুস্থ করে তোলে এই বিচারহীনতার সুযোগটি কাজে লাগিয়ে। ধর্ষণ করে বারবার পার পেয়ে যাওয়া বিকৃতমনা জনগোষ্ঠী বারবার ধর্ষণে লিপ্ত হয়, সিরিয়াল র‌্যাপিস্ট হয় কিংবা ধর্ষণের সেঞ্চুরিও করে। অর্থাৎ ধর্ষণের পেছনে কেবল একটিমাত্র কারণ নয়, বরং ধর্ষকদের ধর্ষক হয়ে ওঠার গল্পকে বিশ্লেষণ করলেই বেরিয়ে আসবে ধর্ষণের কারণ। আমি সুস্পষ্টভাবে বলতে পারি একজন ধর্ষক আর একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের মধ্যে উপরোল্লিখিত বিষয়গুলোই প্রধান পার্থক্য। মাদক, পর্নোগ্রাফি, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, নৈতিক স্খলন, প্রেমিক-প্রেমিকার বিবেক বর্জিত অসামাজিক কার্যকলাপ, অশ্লীল সিনেমা, গান কিংবা সাহিত্য, পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণ, অশ্লীল ও অসামাজিক, কুরুচিপূর্ণ বিজাতীয় সংস্কৃতি, তথাকথিত আধুনিকতার নামে অসামাজিক শব্দচয়ন, সামাজিক, ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের অভাব এ সবকিছুই আল্টিমেটলি একজন মানুষকে বিকৃতমনা করে তুলতে পারে। আর বিচারহীনতার সংস্কৃতির সুযোগে সমস্যা থেকে সৃষ্টি হয় মহা সমস্যার, আকার ধারণ করে মহামারির। আর ধর্ষণমুক্ত একটি সুস্থ ও সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ করতে হলে অবশ্যই এসব প্রাথমিক কারণ থেকেই সমস্যাগুলোকে রুখতে হবে আর নিশ্চিত করতে হবে ন্যায্য বিচার। এভাবেই গড়ে উঠুক আদর্শ সমাজ। আগামীর দেশ, আগামীর বিশ্ব হোক আলোয় আলোয় উদ্ভাসিত। শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App