×

মুক্তচিন্তা

জগৎজ্যোতি দাস : হাওরের বীরশ্রেষ্ঠ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২০, ০৬:৪৮ পিএম

নভেম্বর শহীদ হন জগৎজ্যোতি দাস। হাওর অঞ্চলের এই বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম জাতীয় স্তরের মানুষজনরা জানেন বলে মনে হয় না। ১৬ নভেম্বর তো দূরের কথা, অন্য কোনো দিনও তার নাম কাউকে উচ্চারণ করতে শুনি না। জগৎজ্যোতি যে লড়াইতে শহীদ হন হাওরে তার মতো বড় যুদ্ধও আর হয়নি। তিনি যেভাবে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেছেন তাতে আমরা তাকে কেন যে রাষ্ট্রীয় সম্মান দিইনি তাও আমি জানি না। ইতিহাস আমাদের সেজন্য ক্ষমা করবে না।

\ এক \ মাত্র কদিন আগে ১৬ নভেম্বর পার করলাম আমরা। ১০ জানুয়ারি মুজিববর্ষের ক্ষণ গণনা শুরু হলো। ১২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস পালিত হয়েছে। বাংলাদেশের বিজয়ের ৪৯তম জন্মদিন ১৬ ডিসেম্বর উদযাপিত হলো। ডিসেম্বর মাসটা এলেই আমার অন্তরটা অনেক বেশি আবেগাপ্লুত হয়। বরাবরের মতোই বাঙালি তার এই বিজয়ের দিনটিকে অনন্য সাধারণ করে তোলার সব আয়োজন সম্পন্ন করে। এর মাত্র দুদিন আগে ১৪ ডিসেম্বর আমরা শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করি। সেদিনটার কথা মনে হলে কান্নায় বুকটা ভেঙে পড়ে। অন্যদের কথা বাদ দিলেও শহীদ মুনীর চৌধুরী, শহীদ আনোয়ার পাশা এবং শহীদ মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর কথা আমার মনে পড়ে। বিজয় অর্জন করার মাত্র দুদিন আগে আমার শিক্ষকদেরসহ আলবদর-রাজাকাররা আমাদের দেশের মেধাবীদের যেভাবে হত্যা করেছিল তা আমরা এমনভাবে পালন করব যাতে মনেই হবে যে এরই মধ্যে আমরা শোককে শক্তিতে পরিণত করতে পেরেছি। তবে বিজয় অর্জনের এত বছর পরও আমরা কি নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, আমরা সব শহীদকে সেই সম্মান দিতে পেরেছি- যা আমাদের দেয়া উচিত ছিল? শহীদদের তালিকায় বুদ্ধিজীবীরাই থাকুক বা মুক্তিযোদ্ধারাই থাকুক কিংবা অতি সাধারণ মানুষ যারা গণহত্যার শিকার হয়েছিল তারাই থাকুক, তাদের প্রতি কি আমরা সেই সম্মান দিতে পারছি যা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব। দুঃখজনকভাবে এটিও সত্য যে, আমাদের নতুন প্রজন্ম আমাদের এই শহীদদের চিনে কিনা- জানে কিনা আমরা জানি না। এমনকি আমরা তাদের সেই শহীদদের কথা সঠিকভাবে বলেছি কিনা সেটাও জানি না। প্রশ্ন হতেই পারে সেই চেষ্টাও আমরা করছি কিনা।

মাত্র দুবছর আগে, ৯ নভেম্বর ১৭ আমার প্রিয় মানুষদের একজন বাসদ নেতা আ ফ ম মাহবুবুল হক চলে গেলেন। ভিন্ন মতের রাজনীতিক বীর মুক্তিযোদ্ধা এই মানুষটিকে দেশে আনা হলো না। আমার জানা মতে তাকে মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্রও দেয়া হয়নি। মুজিববাহিনীর প্রশিক্ষক এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে কানাডার মাটিতে শুয়ে থাকতে হলো। এর ফলে তার সহযোদ্ধারা বা দেশের মানুষ, এমনকি তার কবরও জিয়ারত করতে পারল না। আমি তাকে সেই ১৯৬৮ সাল থেকে দেখে এটা নিশ্চিত জানি যে, এই দেশের কোনো সুযোগ-সুবিধা তিনি কোনোদিন কোনো আকারে গ্রহণ করেননি। দেশ তাকে কোনো প্রতিদান না দিক অন্তত সম্মানটা তো তার প্রাপ্য ছিল। কিন্তু সেটি আমরা দিতে পারিনি। ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহম্মদ আলী জিন্নাহ হলে প্রবেশ করার পর থেকে যতদিন তিনি ঢাকায় ছিলেন ততদিনই একেবারে বড় ভাই বা অভিভাবকের মতো মাথার ওপরে ছিলেন। সেই মানুষটি অপঘাতে প্রাণ হারালেন- তার বিচারও হলো না। সেই কষ্টটা এখনো সামলাতে পারছি না। ব্যক্তিগতভাবে আমি মাহবুব ভাইয়ের কাছে এত ঋণী যে, এই অপারগতার দায় থেকে নিজেকে কোনোভাবেই মুক্ত করতে পারছি না। আমার নিজের কষ্ট লাগে যখন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধায় দেশ ভরে যায় আর প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ খবর রাখে না। এটি নিশ্চিত যে, কোনো মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও ভাতার জন্য যুদ্ধ করেনি। কিন্তু রাষ্ট্রের দায় হচ্ছে তাকে স্বীকৃতি প্রদান করা। অথচ রাষ্ট্র আমার মতো হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে স্বীকৃতিই দেয়নি। কদিন আগে এক মুক্তিযোদ্ধা রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় সম্মান গ্রহণে নিষেধ করে মারা যান।

আরো অনেক দায় থেকে এখনো নিজেকে মুক্ত করতে পারছি না। ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর চলে গেল মুক্তিযোদ্ধা বন্ধু শেখ আব্দুল কাইয়ুম। ওর জন্যও কিছুই করতে পারিনি। যতবার ওর মেয়ে ফারজানার সঙ্গে ওর ছবি দেখি ততবারই মনে হয় আমরা বন্ধু ও সহযোদ্ধাদের জন্য এমন কিছু করতে পারিনি যা আমাদের করা উচিত। মুক্তিযোদ্ধা বন্ধু আফতাব আহমদকে বিএনপি আমলে গুলি করে হত্যা করা হলো- তারও কোনো তদন্ত বা বিচার হয়নি। এদের কারো কারো সঙ্গে আমি রাজনৈতিকভাবে ভিন্ন মত পোষণ করি। আফতাব তো এক সময়ে আমাদের ভাবনার বিপরীত রাজনীতি করেছে। মাহবুব ভাই বিপরীত রাজনীতি করেননি- তবে তার রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক ছিল না। কাইয়ুম শেষ জীবনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনীতি করে গেছে। তবে কোনোভাবেই কোনো মুক্তিযোদ্ধার অপঘাতে মৃত্যু আমি বিচারহীনভাবে পার করাটা সমর্থন করি না। আমার নিজের কাছে এটিকে একটি দায় বলে মনে হয়।

আরো একটি দায় নিজের কাঁধে আছে। ১৯৭১ সালের ১৬ নভেম্বর শহীদ হন জগৎজ্যোতি দাস। হাওর অঞ্চলের এই বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম জাতীয় স্তরের মানুষজনরা জানেন বলে মনে হয় না। ১৬ নভেম্বর তো দূরের কথা, অন্য কোনো দিনও তার নাম কাউকে উচ্চারণ করতে শুনি না। জগৎজ্যোতি যে লড়াইতে শহীদ হন হাওরে তার মতো বড় যুদ্ধও আর হয়নি। তিনি যেভাবে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেছেন তাতে আমরা তাকে কেন যে রাষ্ট্রীয় সম্মান দিইনি তাও আমি জানি না। ইতিহাস আমাদের সেজন্য ক্ষমা করবে না।

উল্লিখিত সব মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়েই আমি কিছু কথা লিখতে পারি। সময় পেলেই ওদের নিয়ে আমি লিখবও। আপাতত জগৎজ্যোতির ইতিহাসটা পড়ুন। মাহবুব ভাই, আফতাব আর কাইযুমের সঙ্গে আমার যতটা গাঢ় সম্পর্ক ছিল, জগৎজ্যোতির সঙ্গে তেমনটা ছিল না। তিনি আমার চাইতে এক শ্রেণি ওপরে একই স্কুলে পড়তেন। আমার চাচাতো ভাই আব্দুল হান্নান ও দুই ভাগিনা আবিদ ও হেলিম তার সহপাঠী ছিল। আবিদ আজ আর নেই। তবে সে জগৎজ্যোতির গ্রামের বাড়ি জলসুখাতেই লজিং থাকত। ওরা একসঙ্গে স্কুলে আসতো। শুকনো মৌসুমে একসঙ্গে পায়ে হেঁটে আসতো তারা। বর্ষায় আসতো এক নৌকায়। দারুণ বন্ধুত্ব ছিল ওদের। ওরা ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল অবধি ৫ বছর একসঙ্গে পড়েছেন। আমরা তাদের ১৯৬১ থেকে ১৯৬৫ এই চার বছর দেখেছি। আমরা স্কুল ছাড়ার আগের বছর তারা এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে স্কুল ছাড়েন। তবে এরপর আমার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ ছিল না। অন্যদিকে আমার সঙ্গে জগৎজ্যোতির সম্পর্কটা স্কুলেই সীমিত থাকেনি। বরং আরো গাঢ় হয়েছে একাত্তরের যুদ্ধের জন্য। তিনি ১৯৭১ সালে যে যুদ্ধে শহীদ হন আমি সেই এলাকারই বাসিন্দা। আরো একটি বড় বিষয় হচ্ছে, আমি ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে জগৎজ্যোতির খুনি ও পলাতক রাজাকারদের আমার গ্রামের বাড়িতে আত্মসমর্পণ করিয়েছিলাম যাদের শাল্লার মুক্তিযোদ্ধারা পরে হত্যা করে। আমি সেই ইতিহাসটি আমার লেখা ১৯৭১ ও আমার যুদ্ধ বইতে লিখেছি। জগৎজ্যোতি আমার গ্রামে বা তার পাশের গ্রাম কল্যাণপুরে সাধারণ মানুষের ভরসার কেন্দ্র হিসেবে আসা-যাওয়া করতেন। আমাদের গ্রামের বাজার কৃষ্ণপুর ছিল তাদের অস্থায়ী ক্যাম্পের মতো। যদিও আমি তখন ভারতে তথাপি আমি পরে জেনেছি যে শাল্লা ও আজমিরীগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের গ্রামটিকে তাদের নানা কাজে ব্যবহার করত। আমাদের বাজারটি তাদের রসদ জোগাতো। আমার চাচাতো ভাই ডা. নিয়াজ মুহম্মদ তাদের সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন আর বাবা আব্দুল জব্বার তালুকদার তাদের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ জগৎজ্যোতির লড়াইয়ের প্রেক্ষিতটা একটু বর্ণনা করা দরকার। জগৎজ্যোতি বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওরের সন্তান। হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ থানার জলসুখা গ্রামে তার পিতৃভ‚মি। আমি জগৎজ্যোতির গ্রামের বাড়ির পাশে বিরাট গ্রামের এএবিসি হাই স্কুলে পড়েছি যেখানে তিনিও পড়েছেন। বাংলাদেশের অন্য অঞ্চলে যেভাবে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে হাওর অঞ্চলে যুদ্ধটা সেভাবে হয়নি। বিশেষ করে শাল্লা থানায় যুদ্ধটা ভিন্ন চিত্রের ছিল। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পরও হাওরে পানি আসার আগে সেখানে পাকিস্তানের পক্ষের কোনো মানুষ কোথাও নজরে আসেনি। একটি মুক্ত স্বাধীন অঞ্চল হিসেবে খালিয়াজুরি-শাল্লাসহ হাওরের থানাগুলো মুক্তাঞ্চল হিসেবে স্বাধীন বাংলার পতাকা উঁচিয়ে রেখেছিল। আমার থানা খালিয়াজুরি পুরো ৯ মাসই মুক্তাঞ্চল ছিল। পাক বাহিনী দূরে থাক তাদের দেশীয় দোসররাও কোথাও দৃশ্যমান ছিল না।

১৯৭০ সালের নির্বাচনের সময় আমরা আমাদের থানাটিকে যেমনভাবে মুক্তিযুদ্ধের অনুক‚লে নিতে পেরেছিলাম সেটি পুরো মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেও ছিল। থানা সদরে পুলিশ থাকলেও বস্তুত বেসরকারিভাবে প্রশাসন চালাতাম আমরা। কিন্তু পাশের থানা শাল্লার ছিল রাজাকারদের দখলে। হাওরে পানি আসার সঙ্গে সঙ্গেই হাওরের গ্রামগুলো জ্বলতে থাকে। বাহারা ইউনিয়নের এককালীন চেয়ারম্যান সরাফত আলী এবং শ্যামারচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেকের নেতৃত্বে সেই এলাকার মানুষদের মধ্য থেকে বাছাই করে ১৬০ জনের একটি রাজাকার বাহিনী সুনামগঞ্জ থেকে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে সশস্ত্র হয়ে শাল্লা থানার হিন্দু গ্রামগুলো পোড়ানো শুরু করে। পুরো হাওর এলাকায় এত বিশাল আকারের রাজাকার বাহিনী আর কোথাও ছিল না। তাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক প্রতিরোধ করার ক্ষমতাও মুক্তিযোদ্ধাদের ছিল না। বস্তুত অনেকটা সময় লেগে যায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত হতে। ২৬ মার্চের পরই জগৎজ্যোতিদের মতো অনেক তরুণ টেকেরহাটে পৌঁছে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রায় একই সময়ে শাল্লা এলাকায় আসে। টেকেরহাটে সুরঞ্জিত সেন ছিলেন। শাল্লা থানাটির দেখাশোনা করতেন প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা সালেহ চৌধুরী। আমার গ্রামের আবুল কাসেম মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে টেকেরহাট চলে যান। জগৎজ্যোতির বিশাল বাহিনীর অন্যতম যোদ্ধা হিসেবে কাশেমও যোগ দেয়। আমি আরো পরে যুদ্ধে যোগ দিই। তবুও রাজাকারদের প্রচÐ দাপট শাল্লার হিন্দু গ্রামগুলোর অস্তিত্ব বিপন্ন করে তোলে।

বাংলাদেশের হাওর অঞ্চল সম্পর্কে খুব স্পষ্ট ধারণা যাদের নেই তারা সেই এলাকার রাজনীতিটাও বুঝতে পারবেন না। এই এলাকাটি সারা বাংলার চেয়ে ভৌগোলিক দিক থেকে যেমন আলাদা তেমনি এর বাসিন্দাদের অনুপাতটাও ভিন্ন। ১৯৭০ সালের দিকে পুরো হাওর এলাকায় জনসংখ্যার অর্ধেক ছিল মুসলমান ও বাকিটা হিন্দু। শত শত বছর ধরে এই দুই সম্প্রদায়ের মানুষ সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে আসছে। এলাকাটি বাম রাজনীতিরও কেন্দ্র ছিল। মুসলিম লীগ বা পাকিস্তান ঘরানার কোনো দলের বাস্তব অস্তিত্ব এই এলাকাটিতে ছিলই না। আমার বাড়ি খালিয়াজুরিতে এখনো একটি ইউনিয়ন আছে যার সব মানুষই হিন্দু। ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাব ছিল সেই এলাকাতে। আমার থানায়ও আওয়ামী লীগ তেমন প্রবল শক্তিশালী ছিল না। থানা সদরে একজন মানুষ নৌকার পক্ষে কাজ করতেন। শিক্ষায় পিছিয়ে বলে ছাত্র সংগঠনও তেমন ছিল না। আমি ও জগৎজ্যোতি যে স্কুলের ছাত্র তাতে শতকরা ৭০ জন ছাত্র হিন্দু ছিল। মুসলমানরা তাদের সন্তানদের পড়াত না।

মোস্তাফা জব্বার : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও কলাম লেখক।

[email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App