প্রচারণা যুদ্ধে প্রার্থীরা
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২০, ১২:১৬ পিএম
উত্তরের প্রাথী আতিকুলের প্রচারণা। ছবি: ভোরের কাগজ।
দক্ষিণের প্রার্থী তাপসের প্রচারণা। ছবি ভোরের কাগজ।
সিটি নির্বাচনের প্রচারণায় বিএনপির সিনিয়র নেতারা। ছবি: ভোরের কাগজ।
ঢাকা সিটি নির্বাচনী প্রচারণায় বিএনপির প্রার্থী । ছবি: ভোরের কাগজ।
ঢাকা সিটি নির্বাচনের মেয়র প্রার্থী।
রাজধানীজুড়ে ভোটের হাওয়া। প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে প্রচারযুদ্ধে নেমে পড়েছেন প্রার্থীরা। মূল সড়ক ও অলিগলিতে শুরু হয়েছে নৌকা-ধানের শীষের স্লোগান। চায়ের আড্ডা থেকে রাজনৈতিক অঙ্গন- সর্বত্র আলোচনায় রাজধানীর দুই সিটি নির্বাচন। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রতীক পাওয়ার পরপরই প্রার্থীরা নেতাকর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মিছিল ও জনসংযোগ শুরু করেন। প্রচারণার প্রথম দিনে প্রতীক নিয়ে মিছিল, জনসংযোগসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন তারা। নিজ নিজ এলাকায় জনগণের সঙ্গে দলীয় প্রতীক সংবলিত লিফলেট ও পোস্টার নিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় স্লোগান গানসহ দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট চান প্রার্থীদের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।
দুই সিটিতে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয় শুক্রবার (১০ জানুয়ারি)। আগারগাঁওয়ে স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউটে (এনআইএলজি) উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় এবং গোপীবাগের সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারে দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রতীক বুঝে নেন মেয়র প্রার্থীরা। সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলরদের মধ্যেও প্রতীক বরাদ্দ করা হয়।
এ সময় উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেম বলেন, ভোটের যুদ্ধ এখন মাঠে। এই মাঠকে কোনোক্রমেই আমরা ঘোলাটে করতে দেব না। নির্বাচন যেন ‘উৎসব’ হতে পারে, সেই চেষ্টা থাকবে। এটাকে কোনোক্রমেই সংঘর্ষে রূপ নিতে দেব না। মলিন হতে দেব না। দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন বলেন, প্রতীক বরাদ্দের মধ্য দিয়ে প্রার্থীরা এখন আইন মেনে প্রচার চালাতে পারবেন। দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাইকিং করা যাবে। প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নিয়ে ক্যাম্প স্থাপন করতে পারবেন। সেখানে শুধু নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারবেন। কোন ধরনের মিছিল, শোডাউন, বড় ধরনের জনসভা ও তোরণ নির্মাণ করা যাবে না। তবে ঘরোয়া বৈঠকে প্রার্থীরা অংশ নিতে পারবেন। অনেক প্রার্থীর পক্ষে আগেই পোস্টার লাগানো হয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি তদারকি করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে ইতোমধ্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
[caption id="attachment_194650" align="aligncenter" width="700"] উত্তরের প্রাথী আতিকুলের প্রচারণা। ছবি: ভোরের কাগজ।[/caption]উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে নৌকার প্রার্থী আতিকুল ইসলামের পক্ষে প্রতীক বুঝে নেন তার প্রতিনিধি তৌফিক জাহিদুর রহমান। তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যেহেতু তিনি ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী, তাই আমাদের নির্বাচনী আচরণবিধি খুব কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। আর বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পক্ষে প্রতীক বুঝে নিয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, উত্তরা থেকে আমাদের নির্বাচনী প্রচার শুরু। আশাকরি উৎসবমুখর পরিবেশেই ভোট হবে। উত্তর সিটিতে পিডিপির মেয়রপ্রার্থী (বাঘ প্রতীক) শাহীন খান বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা, তা নিয়ে আশঙ্কা করছি। তবে নির্বাচন উৎসবমুখর হোক এটাই চাই। আর এ সিটিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়রপ্রার্থী (হাতপাখা) শেখ মো. ফজলে বারী মাসউদ বলেন, নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ নেই সাধারণ মানুষের মধ্যে। তবু আমরা শেষ পর্যন্ত থাকব। নির্বাচন যদি আমরা ছেড়ে দিই, তাহলে নির্বাচন উন্মুক্ত হয়ে যাবে। উন্মুক্ত হয়ে গেলে জঞ্জাল বাড়বে। আমরা তা হতে দেব না।
মানবিক ঢাকা গড়ার স্লোগান নৌকার প্রার্থীদের : প্রতীক বরাদ্দের পর আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় নামেন আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। দুজনের প্রচারণাতেই প্রাধান্য পেয়েছে মানবিক ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি। উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের ৮ নম্বর রোডে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় শেষে মুসল্লিদের সঙ্গে কথা বলেন নৌকার প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। সবার কাছে দোয়া ও ভোট চেয়ে ভোটারদের প্রত্যাশা অনুযায়ী মানবিক, পরিচ্ছন্ন ও সচল ঢাকা গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। এ সময় নৌকার লিফলেটও বিতরণ করেন আতিক। এরপর উত্তরার বাংলাদেশ ক্লাবের নির্বাচনী কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। সন্ধ্যা ৬টায় মনিপুর বয়েজ স্কুলে আলেম-ওলামা, শিক্ষক প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। প্রচারণার দ্বিতীয় দিন আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা ও সাড়ে ১০টায় বনানী কবরস্থানে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের কবরেও শ্রদ্ধা জানাবেন। ১২টায় মিরপুর শাহ আলী মাজারে এক দোয়া মাহফিলে অংশ নেবেন ও গণসংযোগ করবেন। বিকেল ৩টায় ডিএনসিসির ৭, ৮ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগে অংশ নেবেন। রাত ৮টায় বনানীতে তার নির্বাচনী কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর তাঁতী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন আতিক।
অন্যদিকে শুক্রবার সকাল পৌনে ১১টায় দক্ষিণের ৭০ নম্বর ওয়ার্ড ডেমরা আমুলিয়া মডেল টাউন, মেহেন্দিপুর বাজার, মীরবাগ থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে তাদের কাছে দোয়া ও ভোট চান এবং নৌকার লিফলেট তুলে দেন। এ সময় উন্নত, সচল ও সুশাসিত ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে জনগণ পাশে থাকবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। রাত পর্যন্ত নতুন ওয়ার্ডগুলোর বেশ কয়েকটি এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালান তাপস। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও সাবেক ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাত, ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোর্শেদ কামালসহ স্থানীয় দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থী এবং থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তাপসের নির্বাচনী মিডিয়া সমন্বয়ক তারেক শিকদার জানান, আজ শনিবার সকাল ১০টায় সূত্রাপুরের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের রোজ গার্ডেন থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন তাপস। দিনব্যাপী পুরান ঢাকায় নির্বাচনী গণসংযোগ করবেন তিনি।
[caption id="attachment_194653" align="aligncenter" width="687"] দক্ষিণের প্রার্থী তাপসের প্রচারণা। ছবি ভোরের কাগজ।[/caption]ধানের শীষের প্রচারণায় খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যু : প্রতীক বরাদ্দের পরপরই জনসংযোগসহ আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেন বিএনপি প্রার্থীরা। প্রথম দিনে দুই সিটিতেই ধানের শীষের প্রচারণায় প্রাধান্য পেয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যু। সেই সঙ্গে আধুনিক ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করেছেন তারা। আনুষ্ঠানিক প্রচারণার অংশ হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন জুরাইন কবরস্থানে প্রথমে তার পিতা অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের টানা দুইবারের মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার কবর জিয়ারত করেন। পরে বায়তুল মোকাররম মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। মসজিদের উত্তর গেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ইশরাক বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি, গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য আমরা আন্দোলনে নেমেছি। আপনারা ধানের শীষে ভোট দেবেন। বিজয় আমাদের আসবে এবং খালেদা জিয়াকে মুক্ত করেই ছাড়ব।
[caption id="attachment_194654" align="aligncenter" width="687"] সিটি নির্বাচনের প্রচারণায় বিএনপির সিনিয়র নেতারা। ছবি: ভোরের কাগজ।[/caption]এর আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য এই নির্বাচনে আমরা অংশ নিয়েছি এবং ইশরাক হোসেনকে সামনে নিয়ে সেই আন্দোলন আমরা শুরু করলাম। পরে মহাসচিবসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে পথচারীদের কাছে লিফলেট বিতরণ করেন। এ সময় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম উপস্থিত ছিলেন।
[caption id="attachment_194655" align="aligncenter" width="687"] ঢাকা সিটি নির্বাচনী প্রচারণায় বিএনপির প্রার্থী । ছবি: ভোরের কাগজ।[/caption]অন্যদিকে উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের ১ নং রোডের মসজিদে মুসল্লিদের সঙ্গে জুমার নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে প্রচারণা শুরু করেন তাবিথ আউয়াল। এ সময় তাবিথের সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও তাবিথের পিতা আবদুল আউয়াল মিন্টু, মোহাম্মদ শাহজাহান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, ঢাকা উত্তর যুবদলের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর, সাধারণ সম্পাদক জিলানী মিলটন, যুগ্ম সম্পাদক ও উত্তর সিটির ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী শরীফ উদ্দীন জুয়েল, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমুখ। এ সময় তাবিথ আউয়াল বলেন, জনগণ ধানের শীষে ভোট দেয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। আমরা ভোটারদের সঙ্গে নিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব। ভোটাররা দুর্নীতি, অপশাসন ও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। তারা এর জবাব চায়, বিচার চায়। সেই বিচার আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে করব। ঢাকাকে বাঁচাতে আমাদের সব পরিকল্পনা শুরু করতে হবে। আধুনিক ঢাকা গড়ে তুলতে হবে।
প্রসঙ্গত, আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। মেয়র পদে দুই সিটিতে লড়ছেন ১৩ প্রার্থী। এদিকে উত্তরে ভোটের লড়াইয়ে রয়েছেন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ৫৪টি পদে ২৫১ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের ১৮টি পদে ৭৭ জন। আর দক্ষিণে সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ৭৫টি পদে প্রার্থী হয়েছেন ৩৩৫ জন। সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের ২৫টি পদে মোট ৮২ জন এবার প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ভোটার আছেন ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন; আর দক্ষিণে ২৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৮ জন।