×

জাতীয়

নির্বাচনে কারচুপি হলে আইনি লড়াইয়ে নামব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২০, ০১:২১ পিএম

নির্বাচনে কারচুপি হলে আইনি লড়াইয়ে নামব

তাবিথ আউয়াল

নির্বাচনে কারচুপি হলে রাজনৈতিক লড়াইয়ের পাশাপাশি আইনি লড়াইয়ের হুমকি দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল। একই সঙ্গে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। নির্বাচনে বিজয়ী হলে নাগরিক দুর্ভোগ দূরীকরণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ঢাকার উন্নয়নে ধারাবাহিক কর্মসূচি গ্রহণ করবেন। সম্প্রতি ভোরের কাগজকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব তথ্য জানান।

ভোটাররা কেন আপনাকে ভোট দেবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার ব্যক্তিগত জীবনে সাফল্যের কারণগুলো ভোটাররা অবশ্যই বিবেচনা করবেন। আমরা ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে কৃষি, স্বাস্থ্য নিয়ে ব্যাপক কাজ করছি। রিসাইক্লিন ব্যবসা শুরু করেছি। যেখানে প্লাস্টিক বর্জ্যকে রিসাইক্লিন করে নতুন প্রোডাক্ট তৈরি করছি। ক্রীড়া ক্ষেত্রে অবদান রাখার চেষ্টা করছি। সুষ্ঠু পরিকল্পনার জন্যই আমার এই সাফল্য। নগরবাসী এ বিষয়টি বিবেচনা করে আমাকে ভোটের মাঠে এগিয়ে রাখবেন বলে বিশ্বাস করি।

অনিয়মের অভিযোগে এর আগে মাঝপথে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার পর ফের ভোটের নামে নামার কারণ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজকাল প্রতিটি নির্বাচনেই ভোট ডাকাতি হচ্ছে। গত নির্বাচনে আমি একা নই, সব প্রার্থীই ভোটের অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন। এবারো প্রচারণার শুরুতেই আমাদের কাউন্সিলরা হামলা-মামলার শিকার হচ্ছেন। ভোট ডাকাতির প্রস্তুতি অংশ হিসেবে ক্ষমতাসীনরা এসব করছে। তবে আমরা শেষ পর্যন্ত ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য লড়ব। গণতন্ত্র রক্ষার যে বৃহত্তর আন্দোলন আমরা যোগ দিয়েছি, বিশ্বাস করি যে আন্দোলন বেগবান করতে নির্বাচনে এই নির্বাচনে অংশগ্রহন অনেক বড় ভূমিকা রাখবে। দুটো উদ্দেশ্যে সফল হবে ভোটের অধিকার এবং গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত হবে।

তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকা এবং জেতার জন্য নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। আমরা হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকব না। পারিপাশ্বিক সব কিছু মেনে নিয়েই পরিকল্পিতভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। বরং কমিশনের কিছু বক্তব্য যেমন বিতর্কের সৃষ্টি করছে তেমনি আশঙ্কা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের অংশ হিসেবেই আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি। এর সঙ্গে দেশের মানুষের মুক্তির বিষয়টিও জড়িত। অর্থৎ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, খালেদা জিয়া এবং দেশবাসীর মুক্তির জন্যই বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।

নির্বাচনে জয়ী হলে জনসম্পৃক্ত বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে নাগরিক বান্ধব ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাবিথ আউয়াল বলেন, নগরবাসী কী চায়, সে কথা আগে শুনব। তাদের মতামত নিয়ে সমাধানের উপায় খুঁজব। বর্তমানে ঢাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৫ হাজার লোক বসবাস করেন। আর এই বিপুল জনগোষ্ঠীর সুযোগ-সুবিধার দেখভাল ও সমস্যা দূরীকরণ বড় বিষয় হলেও তা সমাধানযোগ্য। নগরের দুর্ভোগ লাঘবের বিষয়টি সবার আগে প্রাধান্য পাবে। নগরবাসীর উন্নয়নে ধাপে ধাপে প্ল্যানমাফিক কার্যক্রম থাকবে।

ডেঙ্গু, জলাবদ্ধতা, যানজট, পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে নিজস্ব পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, অনেক প্ল্যান সিটি করপোরশনে প্রজেক্ট হিসেবে পড়ে আছে। বাস্তবায়ন নেই। বাস্তবায়ন না হলে শুধু প্ল্যান করে লাভ নেই। তবে ডেঙ্গু প্রতিরোধ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেব সবার আগে। কারন, কয়েক মাস আগে আমরা ডেঙ্গুর কষ্টকর মহামারি রূপ দেখেছি। জলাবদ্ধতা দূরীকরণ এবং পরিচ্ছন্ন ঢাকা গড়লে ডেঙ্গু বা মশক উপদ্রব অনেক কমে যাবে। এ জন্য এ দুটি বিষয় বিশেষ গুরুত্ব পাবে। পানি নিষ্কাশন কর্মসূচির মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে উজ্জীবিত করব। এ বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়াও ঢাকা শহরের নিয়মিত সমস্যা- বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ ও পানিদূষণ প্রতিরোধে মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষিত জনবল নিয়োগ দেয়া হবে।

নিরাপদ ঢাকা তৈরির পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ঢাকা শহরের অপরাধের মাত্রা বেড়েই চলছে। আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। এক সময় বাসে, যাত্রাপথে মলম পার্টির দৌরাত্ম্য সর্বস্ব হারিয়েছেন অনেকে। এরপর সেটি পরিবর্তিত হয়ে আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করে অজ্ঞান পার্টিতে। এখন তো ধর্ষণ পার্টি দেখছি। তাই নারীরা যেন নিরাপদে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে সে ব্যাপারে আলাদা বাস এবং রাস্তায় মোড়ে মাড়ে নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দেব। এ ছাড়াও প্রশাসনের সব বিভাগকে একত্রিত হয়ে অপরাধমুক্ত ঢাকা গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

নির্বাচনী প্রচারণার কৌশল সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি নগরবাসীর ঘরে ঘরে যেতে চাই তাদের ভালোবাসা ও সমর্থন চাই। এ জন্য নগরবাসীর কাছে যাব। প্রচারণার আলাদা কোনো পরিকল্পনা নেই। ভোটে অনিয়ম প্রতিরোধে শুরু থেকেই সচেতন রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধি এবং রাজনীতিবিদ- দুটো দায়িত্ব পালনের জন্যই আমরা মাঠে নেমেছি। নির্বাচনের ফলাফল যদি আমার পক্ষে না গেলেও আমরা চুপ থাকব না। রাজনীতিবিদ হিসেবে নগরবাসীর সঙ্গেই থাকব। নাগরিক সমস্যা সমাধানে নগরবাসীকে নিয়েই এগিয়ে যাব। আমরা নির্বাচিত হলে প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নে সামাজিক ঐক্য গড়ে তুলব।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আমি সম্পূর্ণ আশাবাদী। এরপরও অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে যে কোনো জনরায় মেনে নিবো। তবে অনিয়ম হলে অবশ্যই সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া ব্যবহার করব।

গত নির্বাচনে আপনারা সেনাবাহিনী চেয়েছিলেন এবার ইভিএম সেনাবাহিনীর হাতেই নিয়ন্ত্রিত হওয়ার কথা রয়েছে। এরপরও ইভিএমে আপত্তির কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ইভিএমে ভোটারদের আস্থা নেই। অনেক যুক্তিতর্কের পরেও নির্বাচন কমিশন থেকে কোনো স্বস্তিকর আচরন পাচ্ছি না। ইভিএমের সফটওয়্যার যে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তৈরি করা হয়নি তার নিশ্চয়তা কে দেবে? ইভিএমের বাক্সটা সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকলে ভেতরের সফরওয়্যার তাদের হাতে থাকছে না। সুতরাং বাহ্যত সুষ্ঠু নির্বাচন হলেও ভেতরে ফলাফল বদলে দেয়ার সিস্টেম চালু রাখা হয়নি এটা বিশ্বাস করতে পারছি না। তবে আশা করছি নির্বাচনের আগে কমিশন আমাদের ব্যাপারে আন্তরিক হবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App