×

সারাদেশ

ডিলার না হলেও তিনি সার সিন্ডিকেটের হোতা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২০, ০৮:৪১ পিএম

ডিলার না হলেও তিনি সার সিন্ডিকেটের হোতা

প্রতীকী ছবি

ডিলার না হয়েও সার সিন্ডিকেটের হোতা সেজে বসে আছেন ধোবাউড়া বাজারের মাজহারুল ইসলাম নামে এক সার ব্যবসায়ী। মনিটরিং না থাকায় ইচ্ছেমতো বিভিন্ন বাজারের সাব-ডিলার ও কৃষকদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকায় সার কিনতে বাধ্য করছেন। সরকারি নিয়ম মোতাবেক প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে ‘বিসিআইসি’ ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যাদের স্ব স্ব ইউনিয়নেই ব্যবসা পরিচালনা করার শর্তে ডিলারশিপ দেয়া হয়েছে। যা কখনওই হস্তান্তর যোগ্য নয়।

তবে ধোবাউড়ার চিত্র ভিন্ন। এখানে প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে নামেমাত্র ‘বিসিআইসি’ ডিলার রয়েছেন। তবে শুধু দু'একজন ডিলারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ফলে সার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধোবাউড়া উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন নিয়ন্ত্রণ করছেন একা মাজহারুল ইসলাম।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সিন্ডিকেটের হোতা ধোবাউড়া উপজেলা যুবদলের সভাপতি মাজহারুল ইসলামের কোনো ডিলারশিপ নেই। তারপরেও ডিলারশিপের মালিককে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ লাভের বিনিময়ে একাই দাদাভাই এন্টারপ্রাইজ ধোবাউড়া ইউনিয়ন ও আহসান এন্টারপ্রাইজ পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়নের ডিলারশিপ চালাচ্ছেন। যা সরকারি নিয়মে সম্পূর্ণভাবে অবৈধ। সাধারণ কৃষকরা ধারণা করছেন, সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্যই তিনি অবৈধ এ সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ধোবাউড়া উপজেলার প্রতিটি বাজারে সারের দাম অনেক বেশি। বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সাধারণ কৃষক ডিএপি সারের বস্তা প্রতি সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও দুশ থেকে তিনশ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। যেখানে সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য প্রতি বস্তা ৮শ টাকা।

ধোবাউড়া বাজার জাহাঙ্গীর এন্টারপ্রাইজের পরিচালক জানান, আমাদের কিছু করার নেই। আমরা দাদাভাই এন্টারপ্রাইজ তথা মাজহারুল ইসলামের কাছ থেকে সার কিনে থাকি। আমাদের ডিএপি (হলুদ বস্তা) ৯৮০ টাকা দামে কিনতে হচ্ছে। সে কারণে ১০২০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ডিলাররা যদি বেশি দাম ধরে আমরা কম দামে কীভাবে বিক্রি করবো।

একইভাবে দুধনই বাজার ভাই ভাই স্টোরের মালিক আলহাজ্ব মো. মানিক মিয়া, পোড়াকান্দুলিয়া বাজার মেসার্স খালেক স্টোরের পরিচালক আব্দুল কদ্দুস, পোড়াকান্দুলিয়া বাজার বিক্রম সাহাও একই অভিযোগ করলেন। অতিরিক্ত দামে সার বিক্রির কারণ জানতে চাইলে ঘোষগাঁও বাজার রফিক এন্টারপ্রাইজের পরিচালক বলেন, আমি গত ৮ জানুয়ারি ধোবাউড়া দাদাভাই এন্টারপ্রাইজ তথা মাজহারুল ইসলামের কাছ থেকে সাদা ইউরিয়া প্রতি বস্তা পাইকারি দামে ৮৩০ টাকা করে কিনেছি। আর ডিএপি সারের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি অন্য ব্যবসায়ীদের মতো অভিযোগ তুলে ধরেন।

একই চিত্র ধোবাউড়া উপজেলার প্রতিটি বাজারে লক্ষ্য করা গেছে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষি বান্ধব সরকার হিসেবে কৃষকদের মাঝে সুলভ মূল্যে কৃষি উপকরণ পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকারাবদ্ধ সেখানে ধোবাউড়ায় সাধারণ কৃষক জিম্মি হয়ে পড়েছেন এক মাজহারুল ইসলাম ও অবৈধ সিন্ডিকেটের কবলে। দায়িত্বে থাকা ধোবাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না। উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ অতি শিগগিরই যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।

তবে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে মাজহারুল ইসলাম বলেন, আমি দুটি ডিলারশিপ আহসান এন্টারপ্রাইজ এবং দাদাভাই এন্টারপ্রাইজ চালাচ্ছি ঠিকই, তবে সরকার নির্ধারিত দামেই সার বিক্রি করছি। আর অতিরিক্ত দামের বিষয়টিও তিনি অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, ঘোষগাঁও ইউনিয়নে সরকার নিয়োগ করা জুমা এন্টারপ্রাইজ নামে একজন বিসিআইসি সার ডিলার নামে মাত্র রয়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, দীর্ঘ এক বছর ধরে ওই ডিলার কোনো সার তার ইউনিয়নে আনেননি। এমনকি তিনি সার উত্তোলন না করে অবৈধভাবে ডিও বিক্রি করে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। অথচ তার ডিলারশিপ বহাল তবিয়তেই আছে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পরিলক্ষিত হয়েছে যে, ডিলারদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সাইনবোর্ড ও সরকার নির্দেশিত খুচরা মূল্য তালিকা লালসালুতে প্রদর্শনের কথা থাকলেও বেশিরভাগ দোকানেই তা পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ধোবাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, সরকারি নিয়মে সব ডিএপি সারের দামই সর্বোচ্চ ৮শ টাকা। কেউ যদি অতিরিক্ত দামে বিক্রি করে থাকে তার প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App