×

জাতীয়

অর্জিত অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চাই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২০, ০১:০৪ পিএম

ফের মেয়র নির্বাচিত হলে কাজের ধারাবাহিকতায় নাগরিক সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার কথা জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়ে গত ৯ মাস সংস্থাটির মেয়র হিসেবে দায়িত্ব শেষে তিনি বলেছেন, নগরীর সমস্যা আগে থেকেই চিহ্নিত। নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ৯ মাস কাজের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। আবার মেয়র হলে আগামী ৫ বছর ঢাকাবাসীর সেবায় তা কাজে লাগাতে চাই।

সম্প্রতি ভোরের কাগজকে এমন কথা জানান আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে দ্বিতীয় দফায় মেয়র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী আতিকুল ইসলাম। এরই মধ্যে কাজ ও ব্যক্তিগত আচরণের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মাঝে মনে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। তার বিশ্বাস ঢাকাবাসী ৩০ জানুয়ারি তাকে নিরাশ করবেন না। তারা পুনরায় নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাকে মেয়র নির্বাচিত করবেন। কাজ করার সুযোগ দেবেন আগামী ৫ বছর। এই সময়ের মধ্যে তিনি ঢাকা উত্তরকে পরিকল্পিত, বাসযোগ্য, স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে চান।

৯ মাসের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে আতিকুল ইসলাম বলেন, দায়িত্ব নেয়ার পর আবরার হত্যার প্রতিবাদে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে রাস্তায় নেমে ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করেছি। এরপরেই বনানীতে এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ড ঘটল। সেটা যেতে না যেতেই গুলশান মার্কেটে আগুন। সেটা শেষ না হতেই ডেঙ্গুর ভয়াবহতা। নানামুখী চ্যালেঞ্জ। কিন্তু আমি পিছপা হইনি। কালশী খাল সংস্কার করেছি। ডেঙ্গুর বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে সর্বত্র ছুটে বেরিয়েছি।

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালনে নিজস্ব মূল্যায়ন তুলে ধরে তিনি বলেন, উপনির্বাচনে দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ শুরু করেছি। আমি বলেছিলাম জলাবদ্ধতামুক্ত শহর গড়ব। সে অনুযায়ী কালসী খাল উদ্ধার করতে কাজ করেছি। পৃথক বাইসাইকেলের জন্য লেনের কাজ শুরু করেছি। নগরীকে আলোকময় করতে কাজ শুরু করেছি। তা শেষ পর্যায়ে। খুব শিগগিরই এলইডি প্রকল্পের টেন্ডার হবে। পুরো ডিএনসিসি আলোয় ঝলমল করবে। আমরা কথায় না, কাজে বিশ্বাসী। মানুষ আমার প্রতি যে আস্থা রেখেছে। অল্প সময়ে তার প্রতিদান দেয়ার চেষ্টা করেছি।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে আতিকুল বলেন, ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ ওয়াসার। বিদ্যুৎ সিটি করপোরেশনের হাতে নেই। অথচ এসব সমস্যা সমাধানের জন্য জনপ্রতিনিধি হিসেবে মেয়রের ওপরই আসে। সুতরাং সব সংস্থাগুলোর মধ্যে একটা সমন্বয় জরুরি। এসব সংস্থাকে সিটি করপোরেশনের আওতায় আনার চেষ্টা করব।

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া নিয়ে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনে কোনো কীটতত্ত¡বিদ ছিল না। এটা অত্যন্ত জরুরি। নির্বাচিত হলে মশক নিধনে যা যা করা দরকার তাই করব। এরই মধ্যে সে কাজও আমি শুরু করেছি। মশার ওষুধ নিয়ে যে সিন্ডিকেট ছিল, সেটা ভেঙে দিয়েছি। মশক নিধনে বছরব্যাপী আমাদের কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

ডিএনসিসির নতুন ওয়ার্ড ও অনগ্রসর এলাকার উন্নয়ন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এলাকভিত্তিক আলাদা পরিকল্পনা করেছি। কোনো এলাকাই বঞ্চিত হবে না। নতুন ওয়ার্ডগুলোতে পরিকল্পিত নগরায়ন করব। আর গত ৯ মাস মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে গুলশান-বনানীর চেয়ে রামপুরা-বনশ্রী, মিরপুর, মোহাম্মদপুর ও নতুন সংযুক্ত এলাকাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। তাছাড়া নতুন এলাকায় কোথায় বাজার হবে, কোথায় খেলার মাঠ হবে, কোথায় কমিউনিটি সেন্টার হবে- সেভাবে ডিজাইন করে ১৮টি ওয়ার্ডে আধুনিকায়ন করব। প্রান্তিক এলাকাকে গুরুত্ব দিয়ে পুরো ডিএনসিসি এলাকাকে পরিকল্পিত শহর হিসেব গড়ে তুলব। এ জন্য প্রথমে কিছু মডেল ওয়ার্ড করব। এগুলোকে বেইজ ধরে উন্নয়ন করব। এতে সফলতা পেলে অন্যান্য ওয়ার্ডেও একই ধরনের কর্মসূচি নেয়া হবে।

ঢাকার সমস্যা এবং উত্তরণের কৌশল সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকা শহরে অনেক সমস্যা। প্রতিনিয়ত মানুষ বাড়ছে। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করাই বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বহুমুখী পদক্ষেপ নেয়ার চিন্তা রয়েছে। এগুলো আস্তে আস্তে বাস্তবায়ন করা হবে। তাছাড়া যানজট, জলজট ও গণপরিবহনের বড় ধরনের সমস্যা রয়েছে। এগুলো সমাধানের পরিকল্পনা করেছি। এরইমধ্যে গত ৯ মাসে বিভিন্ন খাল পরিষ্কার করেছি। মানুষকে সচেতন করতেও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। আবারো মেয়র নির্বাচিত হলে সুশৃঙ্খল গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলব। ঢাকার মানুষকে যানজট ও জলজট থেকে মুক্তি দিতে কাজ করব।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নাগরিকদের প্রয়োজনে সব কাজকেই গুরুত্ব দিতে হবে। সবাই সবকিছু চায়। মশার সমস্যা সমাধানে বেশি গুরুত্ব দিলে, অন্যজন বলবে যানজটের কী হবে। আবার যানজটকে বেশি গুরুত্ব দিলে জলজটের কী হবে। এসব কারণে কোনো সমস্যাকে ছোট করে দেখা যাবে না। নাগরিকদের সব সমস্যা সমাধানে কাজ করব।

সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক কাজে স্বচ্ছতা বিষয়ে আতিক বলেন, মানুষের যাতে হয়রানি না হয়, ভোগান্তি না হয়, এ জন্য সিটি করপোরেশনের সব পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করব। আমি নির্বাচিত হলে সিটি করপোরেশনকে একটি শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত করে ছাড়ব। এটি হলো আমার অঙ্গীকার। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবেন এমন কথা পুনর্ব্যক্ত করে আতিকুল বলেন, এরই মধ্যে এই সড়কটি প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের নামে নামকরণ করা হয়েছে। তেজগাঁওয়ের সেই সড়কটি বেশ কয়েকবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। দুই পাশের দেয়ালও পরিষ্কার করে সৌন্দর্যমণ্ডিত করা হয়েছে। এসব কাজ অব্যাহত থাকবে। মোট কথা সবাই মিলে সবার ঢাকা গড়ে তোলা হবে।

প্রসঙ্গত; আতিকুল ইসলাম মূলত একজন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে আ. লীগের মনোনয়নে মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। ৭ মার্চ শপথ নেন। এরপর ৯ মাস দায়িত্ব পালনের সুযোগ পান। আতিক ১৯৬১ সালের ১ জুলাই নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে জনগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস কুমিল্লা দাউদকান্দি। তার পিতার নাম মমতাজউদ্দিন আহমেদ ও মাতার নাম মাজেদা খাতুন। ৬ বোন ও ৫ ভাইয়ের মধ্যে আতিকুল ইসলাম সবার ছোট।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App