×

আন্তর্জাতিক

যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে দুপক্ষেই নরম সুর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২০, ১০:০৩ এএম

যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে দুপক্ষেই নরম সুর
শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলেমানির হত্যার বদলা হিসেবে গত বুধবার ভোর রাতে ইরাকে অবস্থিত মার্কিন দুটি বিমান ঘাঁটিতে মিসাইল হামলা চালায় ইরান। এতে ‘৮০ মার্কিন সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে বলেও দাবি করে তারা। তবে বুধবার চালানো ওই হামলায় একজন মার্কিন সেনাও হতাহত হয়নি, শুধু ঘাঁটি দুটির সামান্য ক্ষতি হয়েছে বলে জানান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান কী তবে সচেতনভাবেই মার্কিনিদের মৃত্যু এড়িয়ে গিয়েছে? তা ছাড়া ইরানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ঐক্য চাইলেও দেশটির মিসাইল হামলার পর পাল্টা মার্কিন হামলার কোনো দরকার নেই বলেও মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। এদিকে জাতিসংঘের তদন্ত দল জানিয়েছে, গত বছরের শেষদিকে সৌদি আরবে আরামকোর তেল-স্থাপনায় বিতর্কিত হামলায় ইয়েমেনের হুতি যোদ্ধাদের কোনো হাত ছিল না। এদিকে উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্য ঘটনাবলির গতি কোনদিকে মোড় নিতে যাচ্ছে সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় সূত্রগুলো রয়টার্সকে জানায়, তাদের বিশ্বাস, সংকট যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়, যার সমাধান করার ইঙ্গিত তারা এখনো দিচ্ছে, তার জন্য ইরানিরা হতাহত সীমিত রাখার চেষ্টা করেছে। সচেতনভাবেই জীবননাশ হবে না, এমন লক্ষ্যগুলোই বেছে নিয়েছে তারা, পেন্টাগনের কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানান সিএনএন সাংবাদিক জেইক টাপার। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনেও বলা হয়, ইরাকে মার্কিন লক্ষ্যস্থলগুলোতে ইরান হামলা করতে যাচ্ছে, গত মঙ্গলবার বিকেলেই এ খবর জেনে যান মার্কিন কর্মকর্তারা। যদিও ঠিক কোন লক্ষ্যস্থলে হামলা হচ্ছে তা পরিষ্কার জানা ছিল না তাদের। গোয়েন্দা সূত্রগুলোর আগাম সতর্কতার পাশাপাশি ইরাকের টেলিযোগাযোগ থেকেও ইরানের হামলার বিষয়ে ধারণা পাওয়া গিয়েছিল বলে জানায় ওয়াশিংটন পোস্ট। বিবিসির মার্কিন অংশীদার সিবিএসের পেন্টাগন সংবাদাতা ডেভিড মার্টিন জানান, হামলার ‘বেশ কয়েক ঘণ্টা আগেই’ যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করা হয়েছিল বলে তাকে জানান এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা। এতে মার্কিন সেনারা বাংকারে আশ্রয় নেয়ার জন্য যথেষ্ট সময় পেয়ে যায়। সূত্রগুলো জানায়, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক পরীক্ষার ওপর নজরদারির জন্য যে ধরনের আড়িপাতার স্যাটেলাইট, সিগন্যাল ও যোগাযোগের সমন্বিত পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, সেই একই পদ্ধতির মাধ্যমে ইরানের হামলার বিষয়ে আগাম সতর্কতা পাওয়া যায়। তবে ইরানের ব্যর্থতা ‘ইচ্ছাকৃত’ বলেও মনে করেন না ওই কর্মকর্তা। আমাদের প্রস্তুতিই মার্কিন জানমাল রক্ষা করেছে, বলেন তিনি। তবে ইরাকি সেনাবাহিনী জানায়, বুধবার ভোর রাতের দিকে ৩০ মিনিটে প্রায় ২২টি মিসাইল নিক্ষেপ করে ইরানিরা। এর মধ্যে ১৭টির লক্ষ্য ছিল আস-আসাদ বিমান ঘাঁটি। বিবিসি সংবাদাতা জোনাথন মার্কাস বলেন, সঠিক কী ঘটেছে তা এখনো অস্পষ্ট। তবে মার্কিন ঘাঁটির বিরুদ্ধে দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে সাফল্য অর্জন অত্যন্ত কঠিন। এদিকে আইআরজিসি জানায়, আগ্রাসী মার্কিন সেনাবাহিনীর দখলকৃত বিমান ঘাঁটি আল-আসাদ গুঁড়িয়ে দিতে এক ডজনের বেশি স্যাম মিসাইল ছোড়া হয়েছে। পশ্চিম ইরাকে অভিযান চালানোর জন্য আইন-আল-আসাদকেই প্রধান ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে মার্কিনিরা। টেলিভিশন বিবৃতিতে এ নিয়ে ট্রাম্প বলেন, বাহিনীগুলোকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা এবং আগাম সতর্কতার ভালো ফল পাওয়া গেছে। ইরান তাদের যুদ্ধংদেহী অবস্থান থেকে সরে আসছে বলেই অনুমান হচ্ছে। তবে শীর্ষ মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল মার্ক মিলি বলেন, হামলাটি মারাত্মক ছিল বলেই তার বিশ্বাস। স্থাপনার ক্ষতি, সামরিক যান, সরঞ্জাম ও এয়ারক্রাফট ধ্বংস এবং সৈন্যদের হত্যা করার অভিপ্রায় ছিল ইরানের, যোগ করেন তিনি। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ইরানের শীর্ষ জেনারেল হত্যার জেরে দেশে-বিদেশে তীব্র সমালোচনা কুড়ালেও ট্রাম্প আপাতত ইরানের সঙ্গে বড় যুদ্ধের শঙ্কা কাটাতে পেরেছেন। বুধবার সকালে টেলিভিশন ভাষণে যখন কথা বলছিলেন, তখন ‘সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতির শঙ্কা’ কাটাতে পেরে ট্রাম্প অনেকটাই দুশ্চিন্তামুক্ত ছিলেন বলে জানান তার উপদেষ্টারা। ভাষণে ট্রাম্প শীতল কণ্ঠে বলেন, ইরান পিছিয়ে গেছে। এটা সবার জন্যই ভালো হয়েছে। কয়েকদিন হুমকি-ধামকির পর এদিন তার বিবৃতিও ছিল অনেকটাই নমনীয়। ভাষণে তিনি ইরানি হামলার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা হামলা চালানোর দরকার নেই বলেও মন্তব্য করেন। যদিও এর আগেই ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাভাদ জারিফ জানান, সোলেমানি হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়া দেখানো ‘শেষ করেছে’ তেহরান। প্রভাবশালী ইরাকি শিয়া নেতা মোক্তাদা আল-সদরও সংকটের ‘সমাপ্তির’ ঘোষণা দেন। এদিকে সৌদি আরবে আরামকোর তেল-স্থাপনায় হামলায় ইয়েমেনি যোদ্ধার হাত ছিল না বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের তদন্ত দল। সৌদি আরবের তেল শিল্পের কেন্দ্রস্থলে গত সেপ্টেম্বরের ওই হামলা ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির অনুমোদনে হয়েছিল বলে কয়েকটি সূত্রের বরাতে গত নভেম্বরে জানিয়েছিল রয়টার্স। কোনো বেসামরিক বা মার্কিন নাগরিক ওই হামলায় আঘাত পাবে না, এমন কঠোর শর্তে খামেনি ওই হামলায় সম্মতি দেন বলে, চার ব্যক্তির বরাত দিয়ে ওই খবরে জানায় রয়টার্স। তবে হামলা সংক্রান্ত এ ভাষ্যটিও অস্বীকার করেছে ইরান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App