×

জাতীয়

মুজিববর্ষ ঘিরে মহাযজ্ঞ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২০, ০৯:৫৬ এএম

মুজিববর্ষ ঘিরে মহাযজ্ঞ
‘ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের ওপর রৌদ্র ঝরে/চিরকাল, গান হয়ে/নেমে আসে শ্রাবণের বৃষ্টিধারা, যাঁর নামের ওপর/কখনো ধুলো জমতে দেয় না হাওয়া।’ স্বদেশের সবুজ প্রান্তর থেকে বাঙালি জাতিসত্তার নিশ্বাসে-বিশ্বাসে চির অম্লান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কৃতজ্ঞতার বন্ধনে সিক্ত বাঙালি প্রস্তুত মৃত্যুঞ্জয়ী মহানায়কের জন্মশতবর্ষ উদযাপনে। বছরব্যাপী জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ উদযাপিত হবে উৎসবে-ছন্দে-বর্ণে-গীতিতে-শিল্পের আলোয়। বছরজুড়ে সরকারের উন্নয়ন-সাফল্য প্রচার, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে আগামী দিনের শুভসূচনা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সাহিত্যে নান্দনিকতায় উপস্থাপিত হবে মুজিববন্দনা। ছাপান্ন হাজার বর্গমাইল পেরিয়ে বহির্বিশ্বে বিস্তৃত সুবিশাল এই কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নে চলছে শেষ তুলির আঁচড়। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর শুরু জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের কাউন্টডাউন। আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে জাতির পিতার জন্মোৎসব আয়োজন। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ ১০ জানুয়ারি বিকেল ৩টায় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময়ের প্রস্তুতির পরজাতির পিতার শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের জাঁকজমকপূর্ণ ক্ষণ গণনা উদ্বোধন করবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর লোগো উন্মোচন ও ক্ষণ গণনার ঘড়ির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এই আয়োজনে প্রতীকী বিমান অবতরণ ছাড়াও আলোক প্রক্ষেপণ, তোপধ্বনি, গার্ড অব অনার প্রদানসহ এক হাজার লাল-সবুজ বেলুন ও ১০০ সাদা পায়রা ওড়ানো হবে। অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করা ১০ হাজার দর্শক ছাড়াও আমন্ত্রিত প্রায় ২ হাজার অতিথি উপভোগ করবেন সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। উপস্থিত থাকবেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও। এরপর প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও সব পাবলিক প্লেসে একইসঙ্গে কাউন্টডাউন শুরু হবে। সারাদেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের ২৮টি পয়েন্টে, বিভাগীয় শহরগুলো, ৫৩ জেলা ও ২ উপজেলা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীতে মোট ৮৩টি পয়েন্টে কাউন্টডাউন ঘড়ি বসানো হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী জাতীয় উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, জন্মবার্ষিকী উদযাপনে জনগণের সামনে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম উপস্থাপন এবং ত্বরান্বিত উন্নয়ন কার্যক্রম এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত ‘সোনার বাংলা’ নির্মাণের জন্য পরিষেবাগুলো তুলে ধরা হবে। কাউন্টডাউনের জন্য বিভাগীয় শহরগুলোতে বিভিন্ন জনসমাগমের জায়গায়, সারাদেশে জেলা, সিটি করপোরেশন এবং উপজেলায় এই ডিভাইস বসানো হয়েছে বলে জানান তিনি। বাংলাদেশে বিশ্ব নেতারা : চলতি বছরের ১৭ মার্চ জাতির পিতার শততম বছর পূর্ণ হবে। মূল অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং বঙ্গবন্ধুর সময়ের রাজনৈতিক, সামাজিক ব্যক্তিত্বকে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ওআইসি সেক্রেটারি জেনারেল, সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনসহ বিশ্বনেতারা উপস্থিত থাকবেন। আমন্ত্রিত বিশ্বনেতাদের মধ্যে রয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল, ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুুডো, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ, ভুটানের রাজা জিগমে নামগিয়েল ওয়াংচুক প্রমুখ। বছরজুড়ে আয়োজিত অন্যান্য অনুষ্ঠানে তারা যোগ দেবেন বলে আশাবাদী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বহির্বিশ্বে মুজিব : দেশের বাইরেও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে এসব কর্মসূচি পালিত হবে। লন্ডন, নিউইয়র্ক, টোকিও, দিল্লি মিশনে ব্যাপকভাবে কর্মসূচি পালিত হবে। লন্ডনের অ্যালবার্ট হলে ঘটা করে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড, কলাম্বিয়া ও লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সেও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন আরো জানান, এ উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশের ৭৭টি মিশনে ৩০০-এর মতো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। তিনি জানান, ইতোমধ্যে ৩টি বঙ্গবন্ধু চেয়ার স্থাপন করা হয়েছে। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা একটি বঙ্গবন্ধু সেন্টার স্থাপন করেছি। পাকিস্তানের মিশনে আমরা বঙ্গবন্ধুর বড় একটি ম্যুরাল স্থাপন করছি। ৪টি দেশের বড় বড় শহরে বঙ্গবন্ধুর নামে রাস্তার নামকরণ করা হচ্ছে। রঙ-তুলিতে হাজার বছর : আট ফুট দৈর্ঘ্য ও ২৪ ফুট প্রস্থের ভিন্ন আঙ্গিকে নিখুঁতভাবে উদ্ভাসিত হবেন বঙ্গবন্ধু। দশটি বিশাল ক্যানভাসে ইতিহাসের একটি অধ্যায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে বঙ্গবন্ধুকে আঁকবেন প্রখ্যাত দশজন শিল্পী। এই দশ শিল্পীর নেতৃত্বে আবার কাজ করবেন ৫ থেকে ৬ জন শিল্পী। এই দশটি ছবি যেন হাজার বছর টিকে থাকে সেজন্য ক্যানভাসসহ রঙের প্রয়োগে দেয়া হবে বিশেষ গুরুত্ব। ছবিগুলো আঁকা হয়ে গেলে সেগুলোকে স্থায়ীভাবে মেহেরপুরের মুজিবনগর স্মৃতি জাদুঘরে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। পরিকল্পনার বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে শিল্পী নিসার হোসেন জানান, প্রাথমিকভাবে আমরা এসব প্রস্তাব তুলে ধরেছি। এগুলোর বাস্তবায়ননির্ভর করছে বাজেটের ওপর। প্রাথমিকভাবে বাজেট ধরা হয়েছে ১০ কোটি টাকা। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তথ্যচিত্র নির্মাণ ও বই প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মুজিববর্ষে বাংলা একাডেমি থেকে বঙ্গবন্ধুর জীবনকর্মসহ নানা দিক নিয়ে ১০০টি বই প্রকাশিত হবে। এ ছাড়া ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ১২টি ভাষায় অনুবাদ করা হবে। বিশ্বের খ্যাতনামা প্রকাশনা থেকে এসব বই প্রকাশ করা হবে। নানা ভাষায় অনূদিত হবে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর জীবনের ওপর ভিত্তি করে বেশ কয়েকটি তথ্যচিত্র নির্মাণেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। টার্গেট গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড : সরকারের পাশাপাশি দলীয়ভাবেও কর্মসূচি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। দেশ-বিদেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, প্রমাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, বঙ্গবন্ধুর নামে আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন, ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড’ এবং হাতে হাত রেখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রতিকৃতি গড়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্তকরণ। এ ছাড়া কনসার্টসহ নানা আনন্দ আয়োজন ও রক্তদানসহ সেবাধর্মী কর্মসূচি থাকবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App