×

মুক্তচিন্তা

বিশ্ব ইজতেমা নির্বিঘ্ন হোক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২০, ০৫:৩৩ পিএম

গাজীপুরের টঙ্গীতে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। চলবে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত। আর দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ১৭ জানুয়ারি। চলবে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লি সমবেত হয়েছেন রাজধানী ঢাকার অদূরে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে। এখানে বিশে^র বড় বড় ইসলামি পণ্ডিত বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মুসল্লিদের মধ্যে ধর্মীয় বয়ান করেন। বিশ্বমানবের শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এ গণজমায়েত। তিরিশের দশকে লক্ষ্নৌর হজরত মওলানা ইলিয়াস (রহ.) যে তাবলিগ জামাতের সূচনা করেন পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশেও এর বিস্তার ঘটে।

এ পরিপ্রেক্ষিতেই বিশ্ব ইজতেমার উদ্ভব হয়। বাংলাদেশে প্রথম ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৬ সালে বর্তমান কাকরাইল মসজিদ-সংলগ্ন মাঠে। এরপর ১৯৪৮ সালে দ্বিতীয় বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর হাজি ক্যাম্প-সংলগ্ন মাঠে। ১৯৫৮ সালে তৃতীয় বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে। এরপর থেকে টঙ্গীর তুরাগ তীরে বর্তমান জায়গায়ই ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এবারে হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমার ৫৫তম সমবেশ। এই মহতী সমাবেশ এখন মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধ ও সংহতি প্রতিষ্ঠায় এক অনন্য ভ‚মিকা পালন করছে। ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশ নেয়া একটি বিশেষ ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। বিগত সময়ে দেশ-বিদেশের বিপুলসংখ্যক মানুষের সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধানসহ গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীরা ও দেশের বিশিষ্টজনরা আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করেছেন, এবারো নিশ্চয়ই তার ব্যতিক্রম হবে না।

আমরা দেখছি, অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে এ সমাবেশটি প্রতি বছর সম্পন্ন হয়ে আসছে। লাখ লাখ মুসল্লির ইজতেমায় যাতায়াত নিয়ে কিছু ভোগান্তি থেকে যায়। কয়েক বছর ধরে সরকারের পক্ষ থেকে ইজতেমা স্থলে যাতায়াতে বিশেষ যানবাহনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এবারো তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লিদের সুষ্ঠু যাতায়াতের জন্য বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। আমরা আশা করছি এতে যাতায়াত সহজ হবে। সম্প্রতি দেশে বেশকটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও উপাসনাস্থলে সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব ইজতেমায় নিরাপত্তার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষের তরফে ইজতেমা উপলক্ষে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

এবার ইজতেমায় সাড়ে ৮ হাজার পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। যাতায়াত ও নিরাপত্তা ছাড়াও এই বিশাল জমায়েতে স্বাস্থ্যসেবা, পানি-বিদ্যুৎ-স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ। সরকারের পক্ষ থেকে উল্লিখিত সবরকম সেবা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এবারে শীতে বয়োবৃদ্ধদের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। তাদের সুস্থতার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। ভিন দেশ থেকে যেসব মুসল্লি ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন তারা আমাদের অতিথি, তারা যেন কোনোরকম প্রতারণা বা বিড়ম্বনার শিকার না হন সেদিকেও সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। বিশ্বব্যাপী যখন উগ্র সাম্প্রদায়িকতাবাদ, জঙ্গিবাদ ও ধর্মীয় হানাহানি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, তখন ইসলামের শান্তির বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দেয়ার এই বৃহৎ সম্মিলনটি খুবই তাৎপর্যবহ। আমরা বিশ্ব ইজতেমার নির্বিঘ্ন ও সফল সমাপ্তি প্রত্যাশা করি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App