×

জাতীয়

ঘণ্টায় ৪ নারী ধর্ষণের শিকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২০, ০৯:৫৫ এএম

ঘণ্টায় ৪ নারী ধর্ষণের শিকার

রাস্তা, গণপরিবহন বা নিজের ঘর কোথাও নিরাপদে নেই নারী। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনার পর বিষয়টি আবারো সামনে আসে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য মতে, ২০১৯ সালে দেশে প্রতি ঘণ্টায় ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪ জন নারী। তবে পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে তারা এ সংখ্যা জানায়। যদিও এমন অনেক ঘটনা অন্তরালেই থেকে যাচ্ছে।

দেশের নারী ও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, ধর্ষণ এখন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সমস্যা হয়ে উঠছে। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ধর্ষণ বেড়েছে। ধর্ষণের ঘটনায় প্রতিবাদ, নিন্দা ও ক্ষোভে দেশ উত্তাল হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে অপরাধীরা। যারা আইনের আওতায় আসছে তাদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হচ্ছে না।

ফলে একই ঘটনা প্রতিবাদ করেও কোনো প্রতিকার মিলছে না। আর এই সুযোগে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে ধর্ষকরা। তারা অভিযোগ করছেন, মান্ধাতা আমলের আইন, দুর্নীতিবাজ প্রশাসন ও জবাবদিহিমুক্ত পুলিশের কারণে এ অবস্থা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য মতে, গত ছয় বছরে ৫ হাজার ৩৫০ জন নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪২৬ জনকে। সর্বোচ্চ সংখ্যক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে সদ্য বিদায়ী ২০১৯ সালে। এ সময়ে ১ হাজার ৩৭০ জন নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হন। আর হত্যার ঘটনা বেশি ঘটে ২০১৪ সালে। ওই বছর ৯৯ জন নারী ও কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়।

পরিষদের তথ্য অনুযায়ী ২০১৫, ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছে যথাক্রমে ৬৬৬, ৮০৮, ৮৪০, ৯৬৯, ৬৯৭ জন নারী ও কন্যাশিশু। হত্যা করা হয়েছে যথাক্রমে ৯৯, ৮৫, ৪৪, ৫৮, ৬৩ জনকে। ২০১৯ সালে ৭৭ জনকে হত্যা করা হয়।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, ২০১৮ সালে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে ৭৩২টি। ২০১৯ সালে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৪১৩টি এবং ৭৬ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়।

দেশে ধর্ষণ ও ধর্ষণ পরবর্তী হত্যার মতো অপরাধ বাড়ায় ২০১৯ সালের ২০ আগস্ট ক্ষোভ প্রকাশ করে উচ্চ আদালতও। ওই সময় হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণে বলেন, দ্রুততম সময়ে অপরাধীদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় ধর্ষণের মতো অপরাধ বেড়েছে।

মানবাধিকার কর্মী খুশি কবীর বলেন, যখন একটি ঘটনা ঘটছে তখনই রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। এর জন্য প্রয়োজন ধারাবাহিক আন্দোলন।

মহিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ধর্ষণ একটি সামাজিক ব্যাধি। এ ব্যাধি দুর্নীতি ও বিচারহীনতার ওপর ভর করে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বললে বিচার হয়, না বললে বিচার হয় না। আমরা এ রাজনীতি থেকে মুক্ত হতে চাই এবং ধর্ষণের বিচার চাই। ধর্ষককেই প্রমাণ করতে হবে তিনি ধর্ষণ করেন নাই।

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, নারী ও শিশুর প্রতি নির্যাতনের মাত্রা যে ভায়াবহভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে তা দেখে মনে হয় সমাজ একটি বিবেকহীন, পাশবিক বৈকলাঙ্গের দিকে এগুচ্ছে। উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক আইন, নারী ও মানবাধিকার সংগঠন, সরকারের প্রচেষ্টা থাকার পরও দুর্ভাগ্যজনকভাবে নারীর প্রতি সহিংস আচরণ হচ্ছে, নারীর চরম নিরাপত্তাহীনতায় যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের সংখ্যা বাড়ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App