×

অর্থনীতি

বিদায়ী বছরে কৃষিতে ব্যাপক সাফল্য

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২০, ০১:৫১ পিএম

বিদায়ী বছরে কৃষিতে ব্যাপক সাফল্য

কৃষিতে বেড়েছে নারীশ্রমিক। ছবি: সংগ্রহ।

বিদায়ী বছরে কৃষিতে ব্যাপক সাফল্য

ফাইল ছবি

কৃষিতে ঈর্ষণীয় সাফল্য যাত্রা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ। জনসংখ্যার আধিক্য, জমির পরিমাণ কমে যাওয়াসহ জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট বৈরী প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে খাদ্যশস্য উৎপাদনে নজির সৃষ্টি করে চলেছেন এ দেশের কৃষকরা। অর্থনীতিতে কৃষির আনুপাতিক অবদান কিছুটা কমলেও বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে প্রতিনিয়ত এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। বিদায়ী ২০১৯ সালেও অব্যাহত ছিল এ অগ্রযাত্রা।

ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশে^ চতুর্থ। নিবিড় চাষের মাধ্যমে বাংলাদেশ সবজি উৎপাদনে বিশে^ তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশে^ সপ্তম এবং প্রতি বছরই উদ্বৃত্ত থাকে বিপুল পরিমাণ আলু। এ ছাড়া আম উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশে^ সপ্তম এবং পেয়ারায় অষ্টম। সংশ্লিষ্টদের মতে, এ সাফল্যের পেছনে রয়েছে উন্নত প্রযুক্তি, বীজ, সার ও যন্ত্রের ব্যবহার। এর সঙ্গে বিশেষ অবদান রয়েছে আমাদের কৃষিবিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর নিবিষ্ট গবেষণায় উচ্চ ফলনশীল, কম সময়ে ঘরে তোলা যায় এমন জাত ও পরিবেশ সহিষ্ণু নতুন জাত উদ্ভাবন। পাশাপাশি, বর্তমান সরকার কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে কৃষক যাতে তাদের ফলন বাড়াতে পারে এ জন্য ৯ বছরে কৃষিতে ভর্তুকি দিয়েছে ৬০ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা।

স্বাধীনতা পূর্ব সময়ে সাড়ে সাত কোটি মানুষের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে যে দেশকে হিমশিম খেতে হয়েছে, আজ ১৭ কোটি মানুষের চাহিদা পূরণ করে বিশে^র বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও হচ্ছে খাদ্যসামগ্রী। সময়ের বিবর্তনে এসেছে নতুন নতুন ফসল, প্রসারিত হচ্ছে নতুন সব প্রযুক্তি। বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব নীতি প্রণয়ন ও সময়োপযোগী সব প্রযুক্তি ব্যবহারের পদক্ষেপ নেয়ার ফলে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে রেকর্ডের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দানাদার খাদ্যশস্যের উৎপাদন হয়েছে ৪৩২.১১ লাখ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬.৩৭ লাখ টন বেশি। ভুট্টা উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ৪৬ লাখ টন। বেড়েছে সবজির উৎপাদনও। গত অর্থবছরে সবজি উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৭২ লাখ ৪৭ হাজার টন আর আলু উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৯ লাখ টন। চাহিদা মিটিয়েও উদ্বৃত্ত রয়েছে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টন আলু। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ফল উৎপাদনও বেড়েছে। গত মৌসুমে আম উৎপাদন প্রায় ২৪ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে।

[caption id="attachment_193931" align="aligncenter" width="700"] কৃষিতে বেড়েছে উৎপাদন। হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। ছবি: সংগ্রহ।[/caption]

কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আলুসহ বিভিন্ন সবজি, ফল ও ফুল রপ্তানি সম্প্রসারণের জন্য উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থা উন্নয়নসহ কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি ও ভোক্তা পর্যায়ে নিরাপদ সবজি, ফল সহজলভ্য করতে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে কৃষকের বাজার চালু করা হয়েছে, যেখানে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বাজারজাত করছে। ক্রমান্বয়ে এই ব্যবস্থা জেলা-উপজেলা শহরে সম্প্রসারিত করা হবে। ডাল, তেলবীজ, মসলা ও ভুট্টা চাষ বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন সহায়তা অব্যাহত আছে। এ ছাড়াও কাজু বাদাম, কফি ইত্যাদি অর্থকরি ফসল চাষ ও বাজার ব্যবস্থা উন্নয়নে মন্ত্রণালয় কাজ করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ২০০৮-০৯ অর্থবছর হতে এ পর্যন্ত ৯৬০ কোটি ৩৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে ৮৬ লাখ ৪০ হাজার ৪৪ জন কৃষক উপকৃত হয়েছেন। কৃষির উন্নয়নে ৪ দফা নন-ইউরিয়া সারের মূল্যহ্রাস করে (কেজিপ্রতি) টিএসপি ২২ টাকা, এমওপি ১৫ টাকা ও ডিএপি ২৫ টাকা দাম নির্ধারণ করেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে কৃষক পর্যায়ে ডিএপি সারের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা থেকে কমিয়ে ১৬ টাকা করা হয়েছে। কৃষকদের জন্য এটা ছিল গত বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেরা উপহার। এ ছাড়া ডিজিটাল কৃষি তথা ই-কৃষির প্রবর্তন (৪৯৯টি এআইসিসি, কৃষি কল সেন্টার ১৬১২৩, কৃষক বন্ধু ফোন-৩৩৩১, কৃষি কমিউনিটি রেডিও, সব সংস্থার তথ্যসমৃদ্ধ ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপস, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ও সফটওয়্যার, ই-বুক, ইন্টারনেট সংযোগ ইত্যাদি) করায় সহজেই কৃষিবিষয়ক পরামর্শ ও সেবা পাচ্ছেন কৃষকরা। ফলে ফসলের উৎপাদন বাড়ছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বীজতুলা বিক্রয়ে ই-সেবা, পোকা দমনে পরিবেশবান্ধব ইয়েলো স্টিকি ট্র্যাপ ব্যবহার, নগর কৃষি, ডিজিটাল কৃষি ক্যালেন্ডার বাছাই করে দেশব্যাপী ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর আগেই ১০ টাকার বিনিময়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। সেচের পানির ভর্তুকির টাকা সরাসরি কৃষকের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করার পাশাপাশি ১ কোটি ৮২ লাখ কৃষকের মাঝে উপকরণ সহায়তা কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। যুগান্তকারী এসব পদক্ষেপের ফলে কৃষিতে এসেছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। ফসলের উন্নত ও প্রতিক‚লতা সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনেও অভূতপূর্ণ সাফল্য এসেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অবমুক্তকৃত উদ্ভাবিত জাত ১২টি, উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ৯৫টি এবং নিবন্ধিত জাত ২৬টি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App