×

মুক্তচিন্তা

ধর্ষণরোধে চাই নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২০, ১১:৪৩ এএম

পত্রিকার পাতায় বা বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে চোখ বুলালেই যে সংবাদটি আমাদের হরহামেশাই নাড়া দেয়, শরীরে শিহরণ জাগায় বা তীব্র ঘৃণাবোধ সৃষ্টি করে, তা হলো ধর্ষণ। গত রবিবার কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। সমাজের প্রতিটা মানুষ ধর্ষণকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখার পরও কেন বারবার এমন নিকৃষ্ট ঘটনা আমাদের দেশে ঘটে। এর পেছনে দোষ কার। রাষ্ট্রের, আইনের না জনগণের, কে হবে সচেতন?

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যানুসারে ২০১৭ সালে ধর্ষিত হয়েছে ৮১৮ জন, ২০১৮ সালে ৭৩২ জন ও ২০১৯ সালে ১ হাজার ৪১৩ নারী। চিন্তা-চেতনা ভিন্ন হওয়ায় অনেকেই দাবি করেন নারীর আঁটসাঁট পোশাকে আবেদনময়ী দেখায়, তাই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অনেকেই ঝাঁপিয়ে পড়েন নিজের ক্ষুধা মেটাতে। তবে নারীবাদীরা এটা মেনে নিতে নারাজ। তারা নিজের মনমতো পোশাক পরিধান করবেন, এতে কারো জিহ্বার লালা প্রবাহিত হলে নিজেকেই সংবরণ করতে হবে বলে দাবি করেন।

পত্রিকার পাতায় এমনো দেখা যায়, প্রেমে রাজি না হওয়ায় বা সম্পর্কোচ্ছেদ ঘটানোর কারণে ক্রোধে কয়েকজন একত্রে প্রেমিকাকে গণধর্ষণ করে। আবার যার শরীরে আবেদনময়ী কোনো নিদর্শনই দেখা যায় না এমন শিশুদের স্পর্শকাতর জায়গা ব্লেড দিয়ে কেটে ধর্ষণ করার ঘটনাও আমরা শুনতে পাই। এই কাপুরুষজনিত ধর্ষণ ঠেকাতে কে হবে সচেতন? নিজের আত্মনিয়ন্ত্রণের কথা বিবেচনা না করে অনেক পুরুষ ঢিলেঢালা পোশাক না পরিধান করাকে ধর্ষণের কারণ উল্লেখ করে। তবে সমাজের রীতিনীতি খাপ খাইয়ে পোশাক পরিধান করা উচিত। সমাজের রীতিনীতি মেনে চলাই শ্রেয়। যখন কোনো মেয়ের প্রতি হিংসাত্মক মনোভাব নিয়ে কয়েকজন একত্রে গণধর্ষণ বা শিশুর যৌনাঙ্গ কেটে ধর্ষণ করা হয়, এক্ষেত্রে অবশ্যই পোশাককে দায়ী করার কোনো ফুরসতই নেই। যে মেয়েকে দেখে উত্তেজিত হওয়ার কোনো নিদর্শনই নেই, এমন মেয়েকে ধর্ষণ করে একমাত্র বিকৃতমস্তিষ্ক সম্পন্ন কাপুরুষ বলে মনে করি।

ধর্ষণের শাস্তি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ৯ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ড। ধর্ষিতের মৃত্যু ঘটলে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড। ধর্ষণ করে মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টা করলে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ড। ধর্ষণের চেষ্টার শাস্তি অনধিক ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড। কতটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে এই আইন? মনীষী সালোন বলেছেন, আইন হচ্ছে মাকড়সার জালের মতো। বড়রা পড়লে ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে ছোটরা যায় আটকে। এমনো ঘটে যে মামলা পরিচালনা করতে গুনতে হয় হাজার হাজার টাকা। যার ফলে অনেক পরিবার মামলা বা আইনি আশ্রয় গ্রহণ করে না। সরকারের উচিত সব প্রকৃত অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা ও ধর্ষণ কেন হচ্ছে, এ বিষয়ে গবেষণা করে নারীর মর্যাদা সমুন্নত রাখা।

ধর্ষণ রোধ করতে প্রথমেই প্রয়োজন আমাদের নৈতিক মূল্যবোধের। নৈতিকতার কথা এজন্য বললাম, এমনো সংবাদ দেখতে হয়েছে আমাদের যে, পাগলীটা মা হয়েছে বাবা হয়নি কেউ। একজন ভারসাম্যহীন নারীর সঙ্গে যে যৌনসঙ্গম করে তার অবশ্যই নৈতিক স্খলন রয়েছে। আর যৌনাঙ্গ ব্লেড দিয়ে কেটে যারা যৌনসঙ্গম করে তারা অবশ্যই বিকৃতমস্তিষ্ক সম্পন্ন মানুষ। এদের চিকিৎসা করানো উচিত। নৈতিকভাবে জীবনযাপন করলে, আইনের শাসন বাস্তবায়িত হলে শুধু ধর্ষণ নয় রাষ্ট্র থেকে সব অপরাধ ধুয়ে-মুছে বিলীন হয়ে যাবে সমুদ্রতটে। আসুন আমরা নৈতিকভাবে জীবনযাপন করি ও রাষ্ট্রীয় আইন মেনে চলি।

শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App