×

জাতীয়

টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২০, ০২:০৩ পিএম

টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে

টঙ্গীর ইজতেমাস্থল। ছবি: ফাইল।

গাজীপুরের টঙ্গীতে মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গীর তুরাগ তীরে ময়দানের প্রস্তুতি কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইজতেমাকে সফল ও স্বার্থক করতে ইজতেমার স্বেচ্ছাসেবক ছাড়াও পুলিশ, র‌্যাব, সিটি করপোরেশন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, স্বাস্থ্য বিভাগসহ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ময়দানের ৯০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। প্রতি বছরের ন্যায় বাড়তি পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন মাঠের ভেতর ও বাইরে বিভক্ত হয়ে কাজ করবে। ইজতেমা ময়দানকে ৫ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানিয়েছে পুলিশ প্রশাসন।

আগামী ১০, ১১ ও ১২ জানুয়ারি তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের শীর্ষ মুরুব্বি ও কাকরাইল জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা জোবায়ের আহমেদের অনুসারী মুসল্লিরা এই বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেবেন। ১২ জানুয়ারি রবিবার দুপুরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ইজতেমা। ১৩ জানুয়ারি সকালের মধ্যে ময়দান ত্যাগ করতে হবে। পরে মাওলানা সাদ অনুসারী মুসল্লিরা আগামী ১৭ জানুয়ারি শুক্রবার বাদ ফজর থেকে শুরু হওয়া ইজতেমায় অংশ নেবেন। ১৯ জানুয়ারি মধ্যাহ্নের আগে যে কোনো সময় আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ২০২০ সালের বিশ^ ইজতেমা।

সরেজমিন দেখা গেছে, ইজতেমা ময়দানের বিশাল শামিয়ানা টাঙানো, রাস্তাঘাট মেরামত ও পয়ঃনিষ্কাশনের কাজ চলছে জোরেশোরে। আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তা ও নাশকতারোধে থাকছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এরই মধ্যে মাঠের ৯০ ভাগ প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। ১৬০ একর জমির ওপর প্রায় ২ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিশাল চটের প্যান্ডেলের শামিয়ানার নিচে আগামী ১০ জানুয়ারি শুক্রবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ব ইজতেমা শুরু হবে। স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্রসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ময়দানে প্যান্ডেল তৈরির কাজ করছেন। এছাড়া রাস্তা মেরামত, মাইক টানানো, টয়লেট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ময়দানের আগাছা পরিষ্কারের কাজ করছেন আগত মুসল্লিরা। বিদেশিনিবাস, বয়ানমঞ্চ, তাশকিল কামরা এরই মধ্যে নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। আগত বিদেশি মুসল্লিদের সুবিধার্থে বিদেশিনিবাসে বিদ্যুৎ, গ্যাস সংযোগ ও পয়ঃনিষ্কাশনের উন্নত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

মঞ্চ তৈরি : ইজতেমা উপলক্ষে ময়দানের পশ্চিম পাশে বিদেশি মেহমানদের জন্য তৈরি টিনশেড সংলগ্ন পশ্চিম কোণে লোহার পাইপ দিয়ে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। বিদেশি মেহমানদের জন্য টিন দিয়ে তৈরি তাঁবুতে বিগত বছরের ন্যায় এবারো পাকা টয়লেট, তাদের সুবিধার্থে তাঁবুগুলো উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আরো আরামদায়ক করে তোলা হবে বলে ইজতেমা প্রস্তুতি কাজে নিয়োজিত জোবায়ের অনুসারী মুরুব্বিরা জানান।

ডাস্টবিন : ইজতেমা চলাকালে ময়দানে আগত মুসল্লিদের উচ্ছিষ্ট ফেলার জন্য ময়দানের চারপাশে রিংয়ের তৈরি পোর্টেবল ডাস্টবিন স্থাপন করা হচ্ছে। যাতে ময়লা-আর্বজনা যেখানে সেখানে না ফেলে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতে পারে।

ঢাকা লালবাগ এলাকা থেকে আসা মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, প্রায় ৭০ জন ইজতেমার সাথী ভাই নিয়ে ময়দানে কাজ করতে এসেছেন। তিনি বলেন, আল্লাহর মেহমানরা ইবাদত বন্দেগি করতে আসবেন। তারা যেন সুন্দরভাবে ইবাদত বন্দেগি করতে পারেন সেদিকে খেয়াল রেখে ময়দানের কাজ করতে এসেছি। বিদেশি মেহমানদের জন্য কামরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছি। যাতে বিদেশি মেহমানরা ইজতেমা ময়দানে এসে চলাফেরায় কোনো প্রকার কষ্ট না পায় সেদিকে খেয়াল রেখে কাজ করে যাচ্ছি।

মানিকগঞ্জ থেকে আসা আরেক মুসল্লি জাফর বলেন, আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য ২০ বছর ধরে ইজতেমা মাঠে কাজ করছি। আমরা সব সময় দুনিয়াদারি কাজে মগ্ন থাকি। আখিরাতের নেকি হাসিলের উদ্দেশ্যে ইজতেমা ময়দানে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছি। আগামী বছর আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে এ ময়দানে আবারো কাজ করতে আসব। ইজতেমা ময়দানে আসার উদ্দেশ্য হলো আল্লাহকে রাজি-খুশি করা ও আখিরাত সম্পর্কে জানা। গাজীপুরের কালীগঞ্জ থেকে আসা ৫৫ বছরের হাসান আলী জানান, এ দুনিয়া হচ্ছে ধোঁকার ঘর। আমরা জীবনে মানুষকে ধোকা দিয়েছি, সেই গুনাহ থেকে মাফ পাওয়ার জন্য ইজতেমা মাঠে এসেছি।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় ৮টি কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ১৫টি তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে ১৪টি এবং র‌্যাবের পক্ষ থেকে ১০টি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া মাঠে ব্লিচিং-পাউডার ও মশক নিধনের পর্যাপ্ত ওষুধ ছিটানোর কাজ শুরু করা হয়েছে। এছাড়া ৭৫০টি বৈদ্যুতিক বাতি স্থাপন ও ধুলাবালু যাতে না ওঠে সেজন্য পানি ছিটানোর ব্যবস্থা থাকছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ জানান, বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশনে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ২০ লাখ মুসল্লির সমাগমকে সামনে রেখে প্রতিদিন সাড়ে ৩ কোটি গ্যালন পানির ব্যবস্থা থাকছে। বাড়তি টয়লেট নির্মাণ ও পাকা টয়লেটগুলো ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারো পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনে মুসল্লিদের কোনো সমস্যা হবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।

গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার আনোয়ার হোসেন জানান, আগত লাখ লাখ মুসল্লির নিরাপত্তায় এখানে ৫ স্তরের নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা হবে। সিসিটিভি, আর্চওয়ে, মেটাল ডিটেক্টর থাকছে পুরো ময়দানজুড়ে। খিত্তায় খিত্তায় নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলা হবে। সার্বিক নিরাপত্তায় এবার ইজতেমায় সাড়ে ৮ হাজার পুলিশ সদস্য কাজ করবে।

মুসল্লিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ময়দানে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় ২০১১ সাল থেকে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা ৩ দিন করে দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হয়। তবে ২০১৮ সালে মুসল্লিদের দুপক্ষের মারামারি ও হতাহতের ঘটনার পর আলাদাভাবে দুগ্রুপ ইজতেমার আয়োজন করছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ১০ জানুয়ারি শুরু হয়ে ১২ জানুয়ারি জোহরের নামাজের আগে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে জোবায়ের গ্রুপের বিশ্ব ইজতেমা। মাঝে ৪ দিন বিরতি দিয়ে ১৭ জানুয়ারি শুরু হবে সাদ অনুসারীদের ইজতেমা। ১৯ জানুয়ারি আখেরি মোনাজতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ২০২০ সালের দুগ্রুপের দুপর্বের বিশ্ব ইজতেমা।

ইজতেমা ময়দানের জিম্মাদার ফকির আতাউর রহমান জানান, আগামী ১০ জানুয়ারি শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এ উপলক্ষে ইজতেমার প্রস্তুতি দ্রুত এগিয়ে চলছে। এ প্রস্তুতি কাজে সার্বিক সহযোগিতা করে আসছে গাজীপুর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের শীর্ষ মুরুব্বি ও শূরা সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মেজবাহ উদ্দিন আরটিভি অনলাইনকে জানান, ময়দানের প্রস্তুতি কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আশা করি, আগামী ১০ তারিখের আগেই প্রস্তুতি কাজ শেষ হবে ইনশাল্লাহ।

উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সাল থেকে টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে তাবলিগ জামাতের উদ্যোগে এ মহাধর্মীয় সমাবেশ হয়ে আসছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App