×

পুরনো খবর

গলার কাঁটা বিদ্রোহী প্রার্থী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২০, ১০:০৬ এএম

গলার কাঁটা বিদ্রোহী প্রার্থী

আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক। ফাইল ছবি

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে বিপাকে আওয়ামী লীগ। ঢাকা দক্ষিণে ওয়ার্ড ৭৫টি ও উত্তরে ৫৪টি। মেয়র প্রার্থীর পাশাপাশি এবারো দুই সিটিতে ১২৯টি ওয়ার্ডে প্রার্থী ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। সেই সঙ্গে ৪৩টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডেও দলের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তবে দলীয় সমর্থনের বাইরেও বিভিন্ন ওয়ার্ডে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন স্থানীয় অনেক নেতা। এই ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীরা ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত মেয়র প্রার্থী ও সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর জয়ের পথে কাঁটা হয়ে উঠতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন সিনিয়র নেতারাও। কারণ দলের নেতারা পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় আওয়ামী লীগের ভোট ভাগাভাগির আশঙ্কা রয়েছে। এর প্রভাব পড়বে মেয়র প্রার্থীর ভোটের হিসাবেও। দলীয় নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বাগে আনার নানা চেষ্টা করা হলেও শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকার বিষয়ে অনড় অনেকেই। অবশ্য এ বিষয়ে হার্ডলাইনে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশ, কোনো ওয়ার্ডেই যেন বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকে। সে জন্য কাজও শুরু করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এদিকে দলীয় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন আওয়ামী লীগের দুই বর্ষীয়ান নেতা আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ। তারা দুজনই দলটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। আমির হোসেন আমুকে ঢাকা দক্ষিণ ও তোফায়েল আহমেদকে ঢাকা উত্তর সিটির সমন্বয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। শনিবার আওয়ামী লীগের যৌথসভায় প্রতিটি ওয়ার্ডে একক প্রার্থী নিশ্চিত করার বিষয়ে দলীয় প্রধানের নির্দেশনার পর এ নিয়ে জোরেসোরে কাজ শুরু করেছেন দুই সিনিয়র নেতা। কথা বলছেন বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গেও। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান এ বিষয়ে ভোরের কাগজকে বলেন, কোনো ওয়ার্ডেই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকবে না। ৯ জানুয়ারি মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। যারা দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তাদের বিষয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঢাকা উত্তর : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন পল্লবী থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কদম আলী। এই ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর ইসমাইল হোসেন বেণু। ৩ নম্বর ওয়ার্ডে সমর্থন পেয়েছেন মো. জিনাত আলী মাদবর। এই ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর কাজী জহিরুল ইসলাম মানিক। ৫ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন সংগঠনটির তেজগাঁও থানার সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল মঞ্জুর। এই ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর শেখ মজিবুর রহমানসহ মোট ৫ জন বিদ্রোহী প্রার্থী। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে মনোনয়ন পেয়েছেন সালাউদ্দিন রবিন। এখানে বিদ্রোহী হয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর রজ্জব হোসেন। ৮ নম্বর ওয়ার্ডে আ.লীগের প্রার্থী আবুল কাশেম। এই ওয়ার্ডে বিদ্রোহী রয়েছেন ৩ জন। তারা হলেন বর্তমান ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী টিপু সুলতান, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মান্নান শেখ ও যুগ্ম সম্পাদক আনিছুর রহমান। ১১ নম্বর ওয়ার্ডে দলের সমর্থন পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর আবদুল মান্নান। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গাজী আলিয়ার রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মনসুর আলী, আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল হাসান ও মো. লিটন। ১২ নম্বর ওয়ার্ডে দলের প্রার্থী মুরাদ হোসেন। এখানে বিদ্রোহী হয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মইজউদ্দিন। এখানে বিদ্রোহী আছেন দুজন। বর্তমান কাউন্সিলর হুমায়ুন রশিদ ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রেজাউল হক ভূঁইয়া। ২০ নম্বর ওয়ার্ডে দলের প্রার্থী জাহিদুর রহমান। এখানে বিদ্রোহী হয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর মো. নাছির। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন। বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর মোস্তাক আহমেদ। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে আবদুল্লাহ আল মঞ্জুর। বিদ্রোহী হয়েছেন শেখ মুজিবুর রহমান। ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল হাসেম। এর বাইরে প্রার্থী হয়েছেন ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি মাসুদ খান, আদাবর থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রিয়াজ উদ্দীন খান ও সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন। ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে সমর্থন পেয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের শেখ মোহাম্মদ হোসেন। এই ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফাহিম সাদেক খান। তিনি ঢাকা-১৩ আসনের এমপি সাদেক খানের ছেলে। ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে শুরুতে দলের সমর্থন পেয়েছিলেন সাতারকুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মতিন। পরে বর্তমান কাউন্সিলর সফিকুল ইসলামকে দলীয় সমর্থন দেয়া হয়। ঢাকা দক্ষিণ : ঢাকা দক্ষিণে কাউন্সিলর পদে ক্ষমতাসীন দলের একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। ১ নম্বর ওয়ার্ডে দলের সমর্থন পেয়েছেন খিলগাঁও থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম। ২ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর আনিসুর রহমান আনিস। ৩ নম্বর ওয়ার্ডে সমর্থন পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর মাকসুদ হোসেন মহসীন। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন। ৫ নম্বর ওয়ার্ডে দলের প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর আশ্রাফুজ্জামান ফরিদ। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম ভাট্টি। এই ছয়টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতেই দলের একাধিক নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মতিঝিলের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইসমাইল জবিউল্লাহ। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর ও হাজী সুলতান মিয়া। ৯ নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোজাম্মেল হক। এখানে দলটির আরো ৬ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে ক্যাসিনো ব্যবসায়ী, বিতর্কিত ও বহিষ্কৃত কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ, তার স্ত্রী বৈশাখী সাঈদ, ঢাকা দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি আমিনুল ইসলাম শামীম, আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট বাহার, মানিক আসলাম, আবদুল কাদের। শাহজাহানপুরের ১১ নং ওয়ার্ডে প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর হামিদুল হক শামীম। এখানে আরো প্রার্থী হয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান বাবুল ও আওয়ামী লীগ নেতা নুরুন্নবী ভূঁইয়া। ১২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রথমে মনোনয়ন দেয়া হয় মামুন রশীদ শুভ্রকে। ওইদিন রাতে তা পরিবর্তন করে বর্তমান কাউন্সিলর গোলাম আশরাফ তালুকদারকে ফের মনোনয়ন দেয়া হয়। ফলে শুভ্রও মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। পল্টন থানার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী থানা সভাপতি এনামুল হক আবুল। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সালাম খান সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন। ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হেলেন আক্তার। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সদস্য সামসুজ্জোহা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসান আশকারী। ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে দলের বর্তমান কাউন্সিলর প্রার্থী শহীদ উল্লাহ মিনু। এখানে আরো প্রার্থী হয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কৃষক লীগের সহসভাপতি গোলাম মর্তুজা। যাত্রাবাড়ী ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর আবুল কালাম। এখানে আরো মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক মহানগর দক্ষিণের দুই নেতা জাহিদুল কবির রাজু ও জাহিদ হোসেন জুয়েল। ৭৪ নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফজর আলী। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুল হক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App