×

মুক্তচিন্তা

নতুন আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করুন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২০, ০৯:৫৯ পিএম

প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। আগের বছরের তুলনায় ২০১৯ সালে বাংলাদেশে সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সংখ্যা দুটোই বেড়েছে। ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে ১ হাজার ৫৯৯টি, প্রাণহানি বেড়েছে ৭৮৮ জন। জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে শনিবার সড়ক দুর্ঘটনার এ পরিসংখ্যান তুলে ধরেন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের (নিসচা) চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। এই পরিসংখ্যানটি খুবই ভয়াবহ। এমন কোনো দিন নেই যে, সংবাদ মাধ্যমে কোনো সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের খবর থাকে না। সড়কে এরকম প্রাণহানি মর্মান্তিক, অনাকাক্সিক্ষত। সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (এআরআই) গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৩ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনের বেপরোয়া গতি। কিন্তু গতি নিয়ন্ত্রণ, মহাসড়কে ছোট যানবাহন বন্ধ ও বেপরোয়া যানবাহন চলাচল বন্ধে সাফল্য নেই। এখনো দেশের সড়ক-মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ১০ লাখ নছিমন-করিমন-ইজিবাইক। অবাধে আমদানি হচ্ছে অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক। দেশব্যাপী অন্তত ৫ লাখ ফিটনেসবিহীন বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, হিউম্যান হলার অবাধে চলছে। নিবন্ধনবিহীন কয়েক লাখ অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে সড়ক-মহাসড়কে। এসব যানবাহন সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান উৎস। এআরআই গবেষণার সঙ্গে নিসচার তথ্য প্রায় একরকম। নিসচাও বলছে, অশিক্ষিত ও অদক্ষ চালক, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, জনগণের অসচেতনতা, অনিয়ন্ত্রিত গতি, রাস্তা নির্মাণে ত্রুটি, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়া ইত্যাদি মূল কারণ বলে চিহ্নিত করা যায়। ইদানীং মোবাইল ফোন কানে রেখে গাড়ি চালানো যেন ফ্যাশন অনেক চালকের কাছে। যদিও এ কাজ থেকে বিরত রাখতে আইন আছে, কিন্তু সে আইনের ব্যবহার হয় না। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে জাতিসংঘ ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়কে ‘সড়ক নিরাপত্তা দশক’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ সময়ের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ও প্রাণহানি অর্ধেকে নামিয়ে আনার বিষয়ে সদস্য দেশগুলো একমতও হয়েছে। এটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাতে (এসডিজি) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বহু দেশে সড়ক নিরাপত্তায় দৃশ্যমান অগ্রগতি লক্ষ করা যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। আমরা সড়ক নিরাপত্তায় সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দেখতে চাই। সড়কে মৃত্যুর মিছিল আর যেন দীর্ঘ না হয়। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যবস্থা নিতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে নিসচা। সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ পুরোপুরি কার্যকর না হওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো ভ‚মিকা রাখা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে আরো সোচ্চার হওয়া ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া উচিত। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে সড়ক পরিবহন আইনটির যথাযথ প্রয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। এছাড়া এর সঙ্গে জনস্বার্থের প্রশ্নও জড়িত। তাই আমরা আশা করব, সরকার জনস্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে এ প্রতিশ্রুতি রক্ষায় আন্তরিক হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App