×

সারাদেশ

জমির ‘প্রাণ’ যাচ্ছে ইটভাটায়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২০, ১০:০৯ এএম

জমির ‘প্রাণ’ যাচ্ছে ইটভাটায়

জমির উর্বর মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। ছবি: ভোরের কাগজ।

জমির ‘প্রাণ’ যাচ্ছে ইটভাটায়

উপজেলায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ভ‚মিদস্যুরা। তাদের দৌরাত্ম্যে উর্বর ফসলি জমিগুলো একের পর এক ডোবা-নালা, গর্ত ও পুকুরে পরিণত হচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন কৃষিজমি কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর দেখেও না দেখার ভান করছে। এদিকে এসব বিষয়ে স্থানীয় লোকজন একাধিকবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন জানিয়েও কোনো প্রতিকার পায়নি।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মাটির উপরিভাগের ১০-১২ ইঞ্চির মধ্যে উর্বরতা শক্তি থাকে। তাই জমির এ অংশকে জমির ‘প্রাণ’ বলা হয়। এসব মাটি কেটে বিক্রি করলে উর্বরতা ফিরে আসতে ১০-১৫ বছর সময় লাগে। আর বারবার তা কাটা হলে ফসল উৎপাদনে স্থায়ীভাবে অক্ষম হয়ে পড়তে পারে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ও লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঠ থেকে আমন ধান ওঠার পরপরই ফসলি জমির মাটি বিক্রি শুরু হয়। আর এসব মাটি ট্রাকে ও ট্রলিতে করে নিয়ে যাওয়া হয় ইটভাটায়। বলধারা, বায়রা, জামির্ত্তা, চারিগ্রাম, চান্দহর ও জামশা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে এখন ফসলি জমির মাটি কাটার যেন ধুম পড়ে গেছে। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ এবং আবাসিক এলাকা থেকেও প্রতিদিন স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। প্রতিদিন একাধিক স্থানে এই দৃশ্য এলাকাবাসীর চোখে পড়লেও প্রশাসন যেন অন্ধ। স্থানীয় প্রশাসন জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। তারা হয়ে উঠছে আরো বেপরোয়া।

এদিকে ভূমিদস্যুরা কৃষিজমি মালিকদের আর্থিক সুবিধার টোপ দিয়ে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছে। আর স্থায়ী ক্ষতির কথা না ভেবে কৃষকরাও লোভে পড়ে মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে শত শত বিঘা কৃষিজমি অনাবাদি হয়ে বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হচ্ছে। পরিবেশের ওপর পড়ছে বিরূপ প্রভাব। আর ভ‚মিখেকো চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের অর্থ। এছাড়া দিন-রাত ট্রাক্টর, ট্রলি ও ট্রাক দিয়ে মাটি বহনের কারণে গ্রামীণ কাঁচা-পাকা সড়কগুলো ধসে, দেবে ও ভেঙে যাচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকারি কোটি কোটি টাকায় নির্মিত রাস্তা, ব্রিজ ও কালভার্ট। এ বিষয়ে জামশা ইউনিয়নের বাস্তা-গোলাইডাঙ্গা গ্রামের আফছার আলী সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি।

জানা গেছে, উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ১১২টি ইটভাটা রয়েছে। অধিকাংশ ভাটাই অবৈধ। এর মধ্যে আবার ধলেশ্বরী নদী দখল করে গড়ে উঠেছে তিনটি ইটভাটা। প্রতিটি ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে ফসলি জমি ও জনবহুল এলাকায়। নিয়ম ভেঙে এসব বৈধ-অবৈধ ইটভাটার মালিকরা একের পর এক ফসলি জমি ধ্বংস করছে। তাছাড়া ইটভাটার নির্গত কালো ধোঁয়ায় আশপাশের গাছপালা, ফসল নষ্ট ও বিভিন্ন রোগবালাইসহ পরিবেশকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

বলধারা ইউনিয়ন ভ‚মি সহকারী কর্মকর্তা মো. শাহিনুর ইসলাম বলেন, আমি মাটি কাটা বন্ধ করে দিয়েছি। এখন কাটছে কিনা আমার জানা নেই। সিংগাইর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা টিপু সুলতান স্বপন বলেন, একবার কৃষিজমির টপ সয়েল কেটে নিলে তা পূরণ হতে ১০-১৫ বছর সময় লাগে। জমির উপরিভাগের মাটিতেই মূলত বেশি পুষ্টি থাকে যা ফসল উৎপাদনে সহায়ক। তিনি আরো বলেন, উপজেলা থেকে প্রতিদিন খাদ্যশস্য ও কৃষিপণ্য রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে যায় এবং দেশের খাদ্য চাহিদা পূরণ করে। কৃষিজমি বিলুপ্ত হওয়ায় ফসল উৎপাদন কমে গেছে। কৃষিজমি রক্ষায় আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

সিংগাইর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) মো. হামিদুর রহমান বলেন, কৃষিজমি থেকে মাটি কাটার বিষয়টি আমি অবগত নই। খোঁজখবর নিয়ে ঘটনার সত্যতা পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোসা. শাহিনা আক্তার বলেন, কৃষিজমি থেকে মাটি কাটা নিয়ে সরকারি আইন অনুযায়ী যে ব্যবস্থা নেয়ার সেটা আমরা নেব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App