×

মুক্তচিন্তা

অভিনন্দন জননেত্রী শেখ হাসিনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২০, ০৯:৫৭ পিএম

২০২০ সাল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বর্ষ অপরদিকে এই একই বছর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের মাধ্যমে যুগপূর্তির বর্ষে পদার্পণ করছে। বাঙালির বিস্তৃত ইতিহাস ও নানা মহিমামণ্ডিত মাহেন্দ্রক্ষণের এসব প্রেরণায় জনকল্যাণকর কর্মসূচি নিয়ে দল ও বর্তমান সরকার জনকল্যাণকর আরো বহুবিধ স্বপ্ন বিস্তারের মাধ্যমে দেশবাসীকে আপ্লুত ও উদ্বুদ্ধ করুক।
টানা তৃতীয় এবং সর্বমোট চতুর্থবারের শেখ হাসিনা সরকারের এক বছর পূর্ণ হলো। আগামীকাল ৭ জানুয়ারি তারই বার্ষিকী উদযাপনের পালা। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি বর্তমান সরকার তার পথচলা শুরু করেছিল। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগ ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী এবং ৩ জন উপমন্ত্রী নিয়ে যে নতুন সরকার গঠন করে তার এক বছর পূর্ণ হলো। আবার এই বর্ষপূর্তির মধ্য দিয়ে সামগ্রিকভাবে ১১তম বর্ষ অতিক্রম করে ১২তম বর্ষে অর্থাৎ শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা যুগপূর্তির বর্ষে পদার্পণ করল। যুগপূর্তির বর্ষে পদার্পণের শুভলগ্নে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তার এই সরকারকে আমরা অভিনন্দন জানাই। বিগত ১১ বছরে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমগ্র বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত হয়েছে। যুগপূর্তির বর্ষে আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের কাছে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ও কর্মকাণ্ড প্রত্যাশা করব। যার মধ্য দিয়ে ‘রূপকল্প ২০৪০’ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সর্বজনগ্রাহ্য বাস্তব রূপ লাভ করে। পেছনে ফেলে আসা এই একটি বছর সরকার তথা আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা বা সাফল্যের খতিয়ান হাজির করা বর্তমান লেখার প্রতিপাদ্য বা উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য হলো দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে সরকারের নানা কাজে ও নানা উদ্যোগে সৃষ্ট নানা অভিব্যক্তির প্রকাশ। অভিব্যক্তি প্রকাশ নানারূপ সমালোচনা এবং প্রতিক্রিয়ারও। বলে রাখা ভালো যে, ব্যক্তিগত অভিব্যক্তির এ প্রকাশে যুক্তির বলিষ্ঠতার চেয়ে আবেগের আবেদনই হয়তো বেশি থাকবে। কারণ বাস্তবতার চেয়ে আবেগ নির্ভরতাকে আমরা অনেক সময় বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আর বর্তমান সরকার যেহেতু একটি ‘স্বপ্ন’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কর্মমুখর তাই স্বপ্নের সঙ্গে আবেগের সংশ্লেষ আশা করি অচ্ছুৎ বা অস্পৃশ্য বোধ হবে না অসঙ্গতও হবে না। আমরা স্বপ্ন নিয়েই বাঁচি তাই জোর দিয়ে বরং এ কথাও বলতে চাই যে, আমরা গভীর আবেগের সঙ্গেও বাঁচি। আবেগ না থাকলে মানুষের মধ্যে স্বপ্ন দেখার স্পৃহা তৈরি হয় না। আর স্বপ্ন না থাকলে একজন মানুষ জীবিত থাকলেও কখনো প্রাণবন্ত থাকে না। তাই স্বপ্ন ও আবেগ মানবের এক অবিচ্ছেদ্য ও অনির্বচনীয় অনুভ‚তি। এই অনির্বচনীয় অমিত অনুভ‚তি নিয়েই একদা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপলব্ধি করেছিলেন উপমহাদেশীয় রাজনীতির ভেতর-বাহির সার্বিক কাঠামো। আর তারপর বাংলাদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে সেই স্বপ্ন ও আবেগের সম্মিলিত অনুভ‚তির উত্তরাধিকার হিসেবে দেখতে পাই বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় পরাধীন জাতিকে মুক্ত করার স্বপ্ন-আবেগে মথিত ছিলেন আর জননেত্রী শেখ হাসিনা ‘তলাহীন ঝুড়ি’-রূপ বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রের সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করার স্বপ্ন-আবেগে মথিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাঙালিকে মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়ে, স্বপ্নের সঙ্গে দেশবাসীর সম্পৃক্তি ঘটিয়ে বহু বছরের সাধনায় রাজনৈতিক সেই চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম হয়েছিলেন আর তাই ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তাঁর বজ্রকণ্ঠে নিনাদিত হয়ে উঠেছিল ‘এবারে সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। তাঁর সেই সক্ষমতার প্রকাশ রেসকোর্স ময়দানে সমবেত জনসমুদ্রে তুফান তুলেছিল। লাখো বাঙালি তাঁর সেই অমর ঘোষণাকে জীবনের মন্ত্র ও মুক্তির মন্ত্র হিসেবে বক্ষে ধারণ করে স্বপ্ন ও আবেগে মথিত চিত্তে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মরণপণ যুদ্ধে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সেই আহ্বানে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য দিয়ে তার পরাধীনতার গ্লানি ঘুচিয়েছিল। এখন জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বাপ্নিক অভিলাষের আহ্বানে সাড়া দেয়ার পালা। সবার সম্মিলিত স্বপ্ন ও আবেগের সাড়ায় ‘তলাহীন ঝুড়ি’-র অপবাদ ঘুচিয়ে দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার পালা। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তার দেখানো স্বপ্ন-আবেগে আমরা মথিত চিত্তে জনম দুঃখিনী বাংলা মাকে, রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের কল্পনার সোনার বাংলাকে, বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রের দ্বারপ্রান্তে অধিষ্ঠিত করার প্রত্যয়ে সংগ্রামশীল। এ সংগ্রাম সশস্ত্র না হলেও এক পরিবর্তিত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় জননেত্রী এ দেশের মানুষকে তার স্বপ্নের সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন। দেশবাসীও স্ব-স্ব দায়িত্বের ক্ষেত্র থেকে আন্তরিক প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রের অভিমুখে চালনা করার স্বপ্নে। আমাদের সম্মুখে জননেত্রী শেখ হাসিনা একটি সময়ও নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। ২০৪০ সালের মধ্যে আমাদের আবেগায়িত উন্নত রাষ্ট্র গঠনের সেই স্বপ্নটি একটি বাস্তব রূপ লাভ করবে। ‘অতি-বাস্তববাদিতার’ পরিচয় দিয়ে স্বপ্ন বলে, আবেগ বলে এই গন্তব্য থেকে আমাদের কাউকেই দূরে বসে থাকলে চলবে না। স্বপ্ন ও আবেগের সম্মিলিত এই অনুভবকে একটি পরিকল্পিত রূপরেখার মাধ্যমে এগিয়ে চলার মধ্যেও থাকা দরকার নৈতিক দৃঢ়তা। যে নৈতিক দৃঢ়তা জননেত্রী শেখ হাসিনাই লালন করেন তার অনবদ্য ও আপসহীন মনোভাব প্রকাশের মাধ্যমে, তার নেতৃত্বের মাধ্যমে। আমরা জনত্রেীর আপসহীনতার কথা জানি, তার স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষার কথা জানি, জানি তার নৈতিক শক্তির প্রখরতা সম্পর্কেও। আমরা অবগত বাংলাদেশ নিয়ে জননেত্রীর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কেও। কিন্তু তা সত্তে¡ও নেত্রীর চারপাশের সবার এমনকি যাদের তিনি রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন তাদের সবার মধ্যে জননেত্রীর স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষার কথা যথার্থরূপে প্রতিফলিত হয় না। দায়িত্বপ্রাপ্তরা নিজেদের কাজকর্মে শতভাগ স্বচ্ছতার প্রমাণ রাখতে পারছেন বলেও সব সময় আমাদের মনে হয় না। তাই জননেত্রীর স্বাপ্নিক অভিলাষের অভিযাত্রা মাঝেমধ্যে কেমন থমকে যায়, কেমন হোঁচট খায়, কেমন এলোমেলো হয়ে যায়! দায়িত্বকে ‘ক্ষমতা’ মনে করা অনেকের কর্মকাণ্ডে তখন সাধারণের মনে অবিরত কেবল বিচিত্র সব প্রশ্ন জন্ম নিতে থাকে। এসব প্রশ্ন দিনের পর দিন আমাদের বিব্রত করে, বিচলতি করে, আড়ষ্ট করে, এক কথায় আমাদের ব্যস্ত-সমস্ত করে রাখে! তখন কেউ কেউ সব দোষ সরকারের ওপরই চাপাতে চায়। সাধারণের এই প্রবণতা আবার একেবারেই যে অযৌক্তিক তাও নয়। বিগত বছরের শেষদিকে শুরু হওয়া সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকে দেশের সব স্তরের মানুষ স্বাগতই শুধু জানায়নি, ব্যাপক সমর্থনও জানিয়েছিল। সে সময় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে গোপনে চলা ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা সরকারের এই অভিযানের প্রধান শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। বলার অপেক্ষা রাখে না সরকার দলীয় বিভিন্ন পদস্থ নেতাকর্মীরাই ছিলেন লক্ষ্যবস্তু। আওয়ামী লীগেরও স্পষ্ট বক্তব্য ছিল ‘ঘর’ পরিষ্কারের। অর্থাৎ দলের ভেতরকার আবর্জনা পরিষ্কারের স্পষ্ট ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া শুদ্ধি অভিযানে ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন সারির নেতাকর্মীদের আতঙ্কিত করলেও দেশের সাধারণ মানুষ স্বস্তির নিশ^াস ফেলেছিল। সরকারের শক্তি সম্পর্কে মানুষের মনে আস্থার সঞ্চার ঘটেছিল। এ শুদ্ধি অভিযানে স্বভাব অনুযায়ী সাধারণ মানুষের প্রত্যাশাও বেড়ে গিয়েছিল সরকারের প্রতি। মানুষ বিশ্বাস করেছিল শেখ হাসিনা ইচ্ছে করলেই ‘অনেক অসম্ভব’ সহজেই ‘সম্ভব’ হয়ে যায়। কিন্তু সম্প্রতি এই অভিযান থেমে গেলে মানুষ পুনরায় স্ব-স্ব স্বপ্নের ঘোর থেকে আবার বাস্তবের রূঢ়তার মধ্যে এসে পড়ে কিছুটা হলেও হতাশ হয়ে পড়ে। অর্থাৎ অন্যায়, অনৈতিক ও জবরদস্তিমূলক কর্মকাণ্ডে সরকার যখন ‘ছাড়’ দেয় সাধারণ মানুষ তখনই হতাশ হয়ে পড়ে। কেননা এতে সমাজের সুনীতিভ্রষ্টরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সাম্প্রতিককালে আওয়ামী লীগসহ দলটির প্রায় সবক’টি অঙ্গ সংগঠন কাউন্সিলের মাধ্যমে পুনর্গঠিত হয়। এতে মাঠপর্যায় থেকে বেশ কিছু নতুন নেতৃত্ব উঠে আসে। এসব নতুন নেতৃত্ব দলকে আরো সংগঠিত করবে বলে আমরা বিশ্বাস করতে চাই। বিশ্বাস করতে চাই নতুন এই নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে দলের পাশাপাশি সরকারও সুসংগঠিত হবে। সরকার সুসংগঠিত হলে জনকল্যাণেও গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে চাই দল ও সরকার উভয়েই যদি সুসংগঠিত হয় তাহলে বিগত বছরের মতো আগামীতে সরকারকে বিব্রত ও বিচলিত করার মতো বালিশ কাণ্ড, পর্দা কাণ্ড, ক্যাসিনো কাণ্ডসহ নানা রকমের অপকর্মের সঙ্গে জড়িতরা অনুরূপ দুর্নীতি করতে সহসা সাহসী হবে না। দুর্নীতিবাজরাও সতর্ক হবে। আমরাও বর্তমান সরকারে তথা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বপ্নের সঙ্গী, জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নেরও সঙ্গী। সরকারের স্বপ্নের সঙ্গে নাগরিক হিসেবে আমরাও অংশীদার এবং অংশগ্রহণ করে থাকি। এই অংশগ্রহণ পরোক্ষ হলেও তা কোনো মতেই অকিঞ্চিৎকর নয়। একদিকে ২০২০ সাল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বর্ষ অপরদিকে এই একই বছর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের মাধ্যমে যুগপূর্তির বর্ষে পদার্পণ করছে। বাঙালির বিস্তৃত ইতিহাস ও নানা মহিমামণ্ডিত মাহেন্দ্রক্ষণের এসব প্রেরণায় জনকল্যাণকর কর্মসূচি নিয়ে দল ও বর্তমান সরকার জনকল্যাণকর আরো বহুবিধ স্বপ্ন বিস্তারের মাধ্যমে দেশবাসীকে আপ্লুত ও উদ্বুদ্ধ করুক। আহমেদ আমিনুল ইসলাম : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App