×

শিক্ষা

বিনামূল্যের পাঠ্যবই না পেয়ে কাঁদলো শিক্ষার্থীরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২০, ০৫:৪৫ পিএম

বিনামূল্যের পাঠ্যবই না পেয়ে কাঁদলো শিক্ষার্থীরা

প্রতীকী ছবি

বিনামূল্যের পাঠ্যবই না পেয়ে কাঁদলো শিক্ষার্থীরা

গোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ছবি: প্রতিনিধি।

বিনামূল্যের বই নিতেও গুণতে হচ্ছে টাকা। সেশনফি ও উন্নয়ন ফি পরিশোধ না করলে মিলছেনা না বিনামূল্যের নতুন পাঠ্যবই। বছরের শুরুতে সারাদেশে শিক্ষার্থীরা নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নিয়ে বাড়ি ফিরলেও কালীগঞ্জের গোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। টাকা দিতে না পারায় নতুন পাঠ্যবই হাতে পায়নি শিক্ষার্থীরা। শূন্য হাতে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরতে হয়েছে অনেককে।

বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে কোনো শর্ত ছাড়াই নতুন বই তুলে দেয়ার প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। এ ঘটনায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। লিখিত অভিযোগ না পেলে ব্যবস্থা নিতে পারছেন না উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।

সরেজমিনে গোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। প্রধান শিক্ষক চিত্ত রঞ্জন পাল শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সেশন আর উন্নয়ন ফি আদায় করছেন। ফি দেয়ার স্লিপ শ্রেণি শিক্ষকের কাছে জমা দেয়ার পরই বিনামূল্যের নতুন পাঠ্যবই হাতে পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

প্রতিষ্ঠানের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইমন হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে, আড়াইশ টাকা দিতে না পারায় প্রধান শিক্ষক আমাদের বছরের নতুন বই দেননি। আরেক শিক্ষার্থী নবম শ্রেণির অপু শেখ জানায়, শিক্ষকদের সঙ্গে যাদের ভালো সম্পর্ক শুধু তাদেরই বই দেয়া হচ্ছে। আর আমাদের আড়াইশ টাকা সেশন আর উন্নয়ন ফির টাকা জমা দিয়ে নতুন বই নিয়ে যেতে বলেছেন। অপু শেখ আরো অভিযোগ করে, যারা আড়াইশ টাকার মধ্যে দুশ টাকা পরিশোধ করেছে তাদের বইও আটক রেখেছেন প্রধান শিক্ষক।

আব্দুল আলিম নামে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বললেন, আমি গোপালপুর বাজার থেকে বাড়িতে ফিরছিলাম। স্কুলের সামনে এসে দেখি আমার ছেলে সজিব পাশের দোকানে বসে কাঁদছে। কী হয়েছে জিজ্ঞাসা করলে ছেলে জানালো, টাকা ছাড়া স্যার বই দেননি।

ছেলের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে ওই অভিভাবক স্কুলের ভেতরে প্রবেশ করে প্রধান শিক্ষকের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান। ওই অভিভাবক বলেন, প্রধান শিক্ষক চিত্তরঞ্জন পাল আমাকে বলে দিলেন সেশনফি ও উন্নয়ন ফির আড়াইশ টাকা জমা দিয়েই বই নিয়ে যেতে হবে। টাকা ছাড়া বই দিবেন না বলেও জানিয়ে দিলেন প্রধান শিক্ষক। তিনি আরো বলেন, আমার মতো অনেক অভিভাবককেও বইয়ের জন্য অনেক অপেক্ষা করে শেষে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে।

[caption id="attachment_192674" align="aligncenter" width="700"] গোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ছবি: প্রতিনিধি।[/caption]

শুধু তিনিই নন, একাধিক অভিভাবকের অভিযোগ, প্রতি বছরই কোনো রকম খাত না দেখিয়ে সেশনফি ও স্কুলের উন্নয়ন ফি‘র নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আড়াইশ টাকা করে আদায় করে চলেছেন প্রধান শিক্ষক। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। অভিভাবকরা বার বার অনুরোধ করেই সন্তানদের হাতে নতুন বছরে বিনামূল্যের পাঠ্যবই তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করতে পারেননি।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক চিত্তরঞ্জন পাল কোনো দ্বিধা না করেই বললেন, বাৎসরিক সেশন ফি বাবদ টাকা নেয়া হচ্ছে। তবে কাউকে যে টাকা ছাড়া বই দেয়া হয়নি সেটা আমার জানা নেই। প্রধান শিক্ষক বলেন, বই বিতরণ করেছেন শ্রেণি শিক্ষকরা। তারা এমনটি করতে পারে।

জানতে চাইলে কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মধু ‍সুদন সাহা বলেন, বিষয়টি জানার পর ওই স্কুলের সভাপতি কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) বলে দিয়েছি প্রধান শিক্ষক যেন টাকা ছাড়াই বই দিয়ে দেন। আর এবিষয়ে কেউ যদি আমাকে লিখিত অভিযোগ দেয় তাহলে ব্যবস্থা নেব।

ইউএনও সূবর্ণা রানী সাহা বলেন, বই উৎসবের দিন অভিযোগটি পাওয়ার পর মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে সেশন ফি ছাড়াই বই দেয়ার কথা বলে দিয়েছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App