×

আন্তর্জাতিক

কেন সোলাইমানিকে হত্যা করা হলো?

Icon

nakib

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২০, ০৮:০৪ পিএম

কেন সোলাইমানিকে হত্যা করা হলো?
কেন সোলাইমানিকে হত্যা করা হলো?
কেন সোলাইমানিকে হত্যা করা হলো?
কেন সোলাইমানিকে হত্যা করা হলো?
যে সব হত্যাকাণ্ড বিশ্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে সারা দুনিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে তাদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে গত শুক্রবার বাগদাদে মার্কিন বিমান হামলায় ইরানী জেনারেল কাসিম সোলাইমানির হত্যাকাণ্ড। তবে ইরানী এ জেনারেলের হত্যার পর কেন রাতারাতি বেড়ে গেল মধ্যপ্রাচ্য ও সারা বিশ্বের নিরাপত্তার শংকা? এ নিয়ে সারা দুনিয়াজুড়ে চলছে আলোচনা-পর্যালোচনা। খোদ যুক্তরাষ্ট্র কাসেমকে তাদের এক নম্বর শত্রু হিসেবে বিবেচনা করলেও তার হত্যাকাণ্ডের বৈধতা ও যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে ট্রাম্প প্রশাসনের ভিতর ও বিরোধী ডেমোক্রেস থেকেও। ইতোমধ্যে তেলের দাম ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, স্বর্ণের দামও বাড়তে পারে। ইরানী প্রতিশোধের মোকাবেলায় মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন স্থাপনার নিরাপত্তায় বাড়তি সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। সতর্ক রয়েছে তাদের প্রধান মিত্র ইসরাইল ও ন্যাটোর সৈন্যরা। বিশ্ব নেতারা এ হামলার নিন্দা করে একে বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে অভিহিত করেছেন। জর্জ বুশ ও বারাক ওবামা প্রশাসন যাকে হত্যার সাহস করে ওঠতে পারেনি তাকেই হত্যা করলো ট্রাম্প। এর আগে ইসরাইল বারবার তাকে হত্যার চেষ্টা চালায় তবে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের প্রতিশোধের কথা বিবেচনা করে ইরাইলকে বারবার সতর্ক করেছিল। ইরানী জনগণের নিকট সবচেয়ে জনপ্রিয় এ সামরিক কর্মকর্তাকে মধ্যপ্রাচ্যের জেমস বন্ড হিসেবে অভিহিত করা হয়। ২০১৭ সালে প্রভাবশালি সামরিক কমান্ডার হিসেবে টাইম মেগাজিনে জায়গা করে নেন ইরানের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর এ কমান্ডার। ইরানী বিপ্লবের পর এই প্রথম দেশটিতে গত বছর কোন ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ সামরিক মর্যাদা ‘অর্ডার অব জুলফিকার’ হিসেবে ভূষিত করা হয়। মার্কিন ম্যাগাজিন ফরেন পলিসি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সমরবিদদের মাঝে কাসেমিকে সবার উপরে স্থান করে দেয়। এ তালিকায় জায়গা করে নিতে কাসেমকে দীর্ঘ সামরিক পথ পাড়ি দিতে হয়। ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লবের সময় সামরিক প্রশিক্ষন নিয়ে যুদ্ধে নামেন কাসেম। পরে ইরাক- ইরান যুদ্ধে সাহসী ভূমিকা রেখে নজরে আসেন তিনি।পরে আর তাকে পিছরে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০০১ সালে বিপ্লবী গার্ডের নেতৃত্বে এসে সামরিক কৌশল পাল্টে একের এক ধরাশায়ী করতে থাকেন বিশ্বমোড়লদের। ইরানে ৪০ বছর ধরে চলমান অর্থনৈতিক অবরোধ মোকারেলায় নতুন ছক কষেন। ইরানে যখন গুপ্তহত্যা করে একের পর এক ইরানী পরমাণু বিজ্ঞানীদের হত্যা করা হচ্ছিল আর সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছিলো তখন তিনি ইরানের ভেতরের এ সমস্যা মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রকে টক্কর দিতে মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন দেশে কুর্দ ফোর্সের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন মার্কিনীদের। ফিলিস্তিনে হামাস আর লেবাননে হিজবুল্লার পরামর্শদাতা হিসেবে ইসরালেকেও নকানি চুবানি খাওয়ান। ২০০৬ সালে লেবানন -ইসরাইলের যুদ্ধে পিছন থেকে নির্দেশনায় ছিলেন এ সমরবিদ। ইরাকে সাদ্দামের পতনের পর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে সেখানে রাষ্ট্রিয় সিদ্ধান্তে ভূমিকা রাখেন। ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের সহায়তা করে সৌদি হামলার মোক্ষম জবাব দিয়েই ক্ষান্ত হননি বরং তেল ক্ষেত্রে হামলা চালিয়ে বিশ্বশক্তিকে একটি ঝাঁকুনি দেন। আর আরব বসন্তে সিরিয়ায় যখন আসাদের পতন হচ্ছিল ঠিক তখনি কাসেমের কৌশলী ভূমিকার কাছে হার মানতে বাধ্য হয় আমেরিকাসহ ন্যটোর অন্যান্য শক্তিধর সামরিক দেশগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের বাধা ডিঙিয়ে আইএস যখন অপ্রতিরোধ্য গতিতে ইরাকে অগ্রসর হচ্ছিলো তখন তাদের সামনে প্রধান প্রতিবন্ধক হয়ে দাড়ায় কাসেম। কাসোমর বুদ্ধিমত্তা আর সরম কৌশলের কাছে হারতে হয় আইএসকে। তবে আইএসের অসংখ্য ছোট ছোট আত্মঘাতী সেলের সদস্যরা হন্য হয়ে খুজতে থাকে কাসেমকে। প্রতিনিয়ত মৃত্যুর সাথে লড়তে থাকা এ যুদ্ধাকে এ জন্যই আয়াতুল্লাহ খামেনি ‘ জীবন্ত শহীদ’ হিসেবে ডাকতেন। শুধুমাত্র খামেনি কাছেই কাজের জবাবদিহিতা করতে হতো তাকে। গত নির্বাচনে তাকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার কথা বলা হলেও তিনি তা ফিরিয়ে দেন। সম্ভবত যুদ্ধ ময়দাত তাকে বেশী টানতো। মধ্যপ্রাচ্যে সকল যুদ্ধক্ষেত্রে তিনে নিজে উপস্থিত থেকে নির্দেশনা দিতেন যা সৈন্যদের মনে বাড়তি প্রেরণা যোগাতো। সাধারণ জীবনযাপন আর সরাসরি যুদ্ধ উপস্থিত থাকায় সকল দেশের সেনাদের মাঝে তার জনপ্রিয়তা ছিল ব্যাপক। এমনকি আইএস দমনের সময়ে মার্কিন সেনাদেরও কাসেমের সাথে ছবি তুলতে দেখা যায়। সেটা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনাও হয় মার্কিন সৈন্যদের। বিভিন্ন তথ্যচিত্র, মিওজিক ভিডিও ও অ্যানিমিটেড চলচিত্রেও দেখা যায় তাকে। আর ইসরাইলের মোসাদের হিটলিস্টে এবং সিআইএ-র শত্রু তালিকায় সবার উপরে কাসেমির নাম দীর্ঘদিন থাকায় অনেকেই তাকে বর্তমান বিশ্বের পৃথিবীর সেরা জেনারেল হিসেবে অভিহিত করেন। তবে শুধু সামরিক কমান্ডার বললে ভুল হবে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করে তিনি রীতিমতো বিশ্বসামরিক শক্তির এক জীবন্ত ত্রাসে পরিণত হয়েছিলেন। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় ছিল তিনি শিয়া হয়েও আফগান সুন্নি তালেবানদের সাথে মিত্রতা সৃষ্টি করেন। যা তাকে বিশ্বের সকল প্রান্তে সকল মিলিশিয়া ও জিহাদী প্রুপের নেতায় পরিণত করেছিল। এর ফলে তাকে কূটনৈতিক হিসেবও মানতে করতে বাধ্য হোন শত্রুরাও। আর কয়েকটি দেশে তার অর্থনীতি ও রাজনৈতিক প্রভাবে তাকে মদ্যপ্রাচ্যের অদৃশ্য হর্তাকর্তায় পরিণত করে। যেখানেই যে দেশেই যুদ্ধ চলুক সেখানে ছায়ার মতো কাসেমির উপস্থিতি ছিল। তাকে কোনভাবেই অগ্রাহ্য করতে পারছিল না যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত ইরাকের মার্কিন দূতাবোসে হামলা করে তাদের অবস্থান যখন ধ্বসিয়ে দিচ্ছিলো কাসেম তখন এ হথ্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো। তবে এ হত্যাকাণ্ড যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে দিতে পারে। ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যের সকল গ্রুপ থেকে প্রতিশোধের হুংকার দেয়া হয়েছে। যা বিশ্বে মার্কিনীদের আরো বেশী অনিরাপদ করে তুলবে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। ইরান এরং কাসেমের বিশার নেটওয়ার্ক কিভাবে এ হামলার জবাব দেয় সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে বছরের শুরতে এ ধরনের হামলায় সামনে যে অস্থিতিশীলতা বাড়বে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অন্যদিকে ঘরে- বাইরে ব্যাপক চাপে থাকায় এরং ইমপিচম্যান্ট ও অভিশংসনের মুখে থাকা ট্রাম্পের নেয়া এ সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক অভিলাস বলে অভিহিত করেন অনেকে। নির্বাচনকে সামনে রেখে বাহাদুরি দেখানোর জন্য এ হামলা চালানো হয়। বারাক ওবামাও ২য় বার নির্বাচনের আগে এমন রাজনৈতিক খেলা খেলেছিলেন। যেমনটি করেছিলেন বুশ ও জর্জ বুশও। ক্লিনটনও কেলেংকারিতে পড়ে মানুষের দৃষ্টি সরাতে সুদানে হামলা চালিয়েছিলেন। তবে ট্রাম্প একটি বিপদজনক কার্ড খেললেন। এখন দাবার চাল ইরানের জন্য। তবে সামরিক কোন যুদ্ধে কাসেমকে না হারিয়ে গুপ্ত হত্যা করে মার্কিন শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে পারেনি ট্রাম্প। বরং কাসেমকে সবাই আদর্শিক কমান্ডার হিসেবে অনুসরণ করে আরো এগিযে যেতে পারে। আর পরমাণু কার্যক্রম চালুসহ ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির উন্নয়নে মনোযোগি হবে ইরান সেটা অনুমেয়। তাই আসন্ন দিনগুলোতে ভয়ানক হতে পারে এ বিপদজনক খেলা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App