শুদ্ধি অভিযান নিয়মিত হোক
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২০, ০৯:১৮ পিএম
দুর্নীতিবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের উত্তাপ অনেকটা স্তিমিত হয়ে গেছে। দুদকের কিছু তৎপরতা দেখা গেলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একেবারেই নীরব রয়েছে। যদিও সরকারের নীতিনির্ধারক মহল থেকে বারবার বলা হচ্ছে অভিযান অব্যাহত আছে এবং অব্যাহত থাকবে। কিন্তু বাস্তবে তা দৃশ্যমান নয়। কেউ অপরাধ করলে বা অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলে তাকে কোনো প্রকার রেহাই দেয়া হবে না। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিরো টলারেন্সের কথা জোর দিয়ে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এমন দৃঢ় ঘোষণায় দেশবাসী আশ্বস্ত হয়েছেন। খুশি হচ্ছে চিন্তাশীল মানুষ। প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা থাকা সত্তে¡ও অভিযান স্থবির হওয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের মধ্য দিয়ে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়। জানা গেছে, গত দুই মাসে মোট ৫০টি ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এসব অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন ২৭৬ জন। এর মধ্যে ২২৩ জন ঢাকায়। আর বাকি ৫৩ জন ঢাকার বাইরের জেলাগুলোয়। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে অধিকাংশই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। অভিযান নিয়ে কেউ কেউ বিভ্রান্তি ছড়ালেও দল হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রতি জনসমর্থন যেমন বেড়েছে, তেমনি শেখ হাসিনার প্রতি জনশ্রদ্ধাবোধ আরো গাঢ় হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এরা সরকারি দলের সুবিধাভোগী। যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তাদের সঙ্গে লিয়াজোঁ রেখে অপরাধ করে থাকে। গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগে হাজার হাজার অনুপ্রবেশকারী ঢুকে পড়েছে। কেন্দ্রের প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রী-এমপিদের হাত ধরে অনেকে নৌকায় উঠেছেন। এদের অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে নাশকতা, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে হত্যা, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজিসহ মাদক মামলা। এমন বাস্তবতায় শুদ্ধি অভিযানের পথে হাঁটছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। অভিযানের পর অপকর্মের সঙ্গে জড়িত যুবলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক শুরু হয়েছে। অনেক নেতা গা-ঢাকা দিয়েছেন। অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। র্যাবের অভিযানে ক্ষমতাসীন দল বা সহযোগী সংগঠনের ক’জন নেতা গ্রেপ্তার হলেন, ক’টি ক্যাসিনোর সরঞ্জাম জব্দ হলো, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো এর পেছনের অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। অপরাধ সমাজের সর্বস্তরে, সর্বত্র বিস্তৃত। প্রশাসন, পুলিশ, রাজনৈতিক দল ও তাদের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন, শিল্প-ব্যবসা-ব্যাংকিং থেকে নিয়ে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত অপরাধের জগৎ এখন বিস্তৃত। ফরিদপুরে বালিশকাণ্ড এবং চট্টগ্রামে পর্দাকাণ্ডসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে লুটপাটের খবর বেরিয়ে আসছে। আমরা মনে করি, সব ক্ষেত্রে এই অভিযান চালানো জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে উন্নয়ন কাজের নামে একশ্রেণির অসাধু রাজনীতিক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের মধ্যে যে অশুভ চক্র তৈরি হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে দলে অনুপ্রবেশকারী হাইব্রিড, বহিরাগত এবং দখল-চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত নেতাদের চিহ্নিত করে সংগঠন পুনর্গঠনের সময় এসেছে বলে মনে করছি।