×

জাতীয়

শুদ্ধি অভিযান থামল কেন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২০, ০৯:৪৪ এএম

শুদ্ধি অভিযান থামল কেন
শুদ্ধি অভিযান থামল কেন

সরকার ক্যাসিনো কালচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অবস্থান নিয়ে শুদ্ধি অভিযান সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার ঘোষণা দিলেও এখন আর তা দৃশ্যমান নয়। ঢাকা ও চট্টগামে প্রায় ৫০টি অভিযান হলেও জেলা, উপজেলা ও পৌর এলাকায় নেই কোনো অভিযান। দুদকের কিছু তৎপরতা দেখা গেলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একেবারেই নীরব রয়েছে। সারাদেশে টেন্ডারবাজ ও কালো টাকার মালিকরা এখনো রয়েছে বহাল তবিয়তে। অভিযানের ব্যাপ্তি না বেড়ে কার্যত তা থেমে গেছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। সাধারণ মানুষের বাহ্বা কুড়ানো অভিযানের কেন এমন দশা- এ প্রশ্নের সদুত্তর নেই কারো কাছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ, আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত থাকার কথা প্রতিনিয়ত বলে আসছেন। কিন্তু মাঠে এর কোনো প্রতিফলন নেই।

এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য, সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান ভোরের কাগজকে বলেন, শুদ্ধি অভিযান হঠাৎ করে শুরু হয়েছিল, আবার হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেছে। এটা পলিটিক্যালি করতে হবে। সমন্বিত কর্মসূচি নিয়ে করতে হবে। তা না হলে এমন অভিযানে কোনো সুফল মিলবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আওয়ামী লীগের মূল শক্তি হচ্ছে রাজপথের শক্তি। এ জন্য শুদ্ধি অভিযানটা আওয়ামী লীগের জন্য আত্মঘাতী। এর আওতায় যারা আসত তারা আইনের আওতায় এলে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা নিয়ে টানাটানি দেখা যেত। ওই শক্তির কারণে অন্য কেউ রাজপথে নামতে পারেন না, কোনো আন্দোলন করতে পারেন না। তিনি মনে করেন, মূলত ক্ষমতায় টিকে থাকতে এদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে যেটা করা যেতে পারে রাজনৈতিক দলগুলোর সামঞ্জস্যতার ভিত্তিতে কাউকে ছাড় না দিয়ে সারাদেশে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করতে হবে।

তবে র‌্যাব লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেছেন, অভিযান বন্ধ হয়নি। সম্প্রতি আমরা যে অভিযান চালিয়েছি সেগুলোর তদন্ত কাজ করছি। আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হচ্ছে। দুর্নীতি ও অনিয়মসংক্রান্ত তথ্য পেলে ভবিষ্যতেও অভিযান চালাতে প্রস্তুত রয়েছে র‌্যাব।

১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে প্রথম ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া। সর্বশেষ গত ৩১ অক্টোবর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জুকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এরপর আর কোনো অভিযানের খবর পাওয়া যায়নি। তবে সারাদেশে কয়েক হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের তদন্ত করছে র‌্যাব, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। র‌্যাব ও আইনশৃখলা বাহিনীর একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন ডাকযোগে ও নানা মাধ্যমে শত শত অভিযোগ জমা পড়ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে। সেগুলো প্রকাশ্যে ও গোপনে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

গত দুই মাসে মোট ৫০টি ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এর মধ্যে ৩০টি র‌্যাবের। বাকি ২০টি পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার। ১টি অভিযান রয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের। ঢাকায় ৩০টি ও চট্টগ্রামের মোট ১১টি ক্লাবে অভিযান চালানো হয়। ৫০টি অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন ২৭৫ জন। এর মধ্যে ২২৩ জন ঢাকায়। আর বাকি ৫৩ জন ঢাকার বাইরের জেলাগুলোয়। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে অধিকাংশই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ২ জন, ঢাকার ৩ কাউন্সিলর, যুবলীগের ৬ জন ও কৃষক লীগের ১ জন। সরকার ও দুদক কর্তৃক দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আছে ৩৪ জনের বিরুদ্ধে।

সূত্র মতে, অভিযানে ৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা নগদ, ১৬৬ কোটি টাকার এফডিআর, ১৩৩টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক, ৮ কেজি সোনা, ২৭টি অস্ত্র এবং সাড়ে ৪ হাজার বোতল মদ উদ্ধার করা হয়। অভিযানে ৫টি মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করেছে পুলিশ। অভিযান শুরু হওয়ার পর দুর্নীতি দমন কমিশন এরই মধ্যে প্রভাবশালী ২৩ ব্যক্তি ও তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬০০ ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে। এছাড়া আরো ৫০০ ব্যক্তির বিষয়ে তদন্ত করছে দুদকসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সংস্থা। ওই ৫০০ ব্যক্তির মধ্যে রয়েছেন সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তাসহ আরো অনেকে।

প্রসঙ্গত, গত ১০ বছরে দুদক ১৩ হাজার ২৩৮টি অভিযোগের অনুসন্ধান, ৩ হাজার ৬১৭টি মামলা রুজু ও ৫ হাজার ১৭৯টি চার্জশিট দাখিল করেছে। দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনার জন্য দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট সদা তৎপর রয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ওই ইউনিট সারাদেশে জেলা, উপজেলা, পৌরসভা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে বিভিন্ন দপ্তরে তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালনা করছে। চলতি বছর দুদক ১৬টি ফাঁদ মামলা করেছে। ৬৮ জন আসামি গ্রেপ্তার করেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App