মোবাইল প্রেমে ঘরছাড়া, মেহেদী হাতেই লাশ
nakib
প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২০, ০৫:৪৭ পিএম
লাইজুর নিথর দেহ। ছবি: প্রতিনিধি।
নিথর লাইজু। ছবি: প্রতিনিধি।
লাইজু, এখন শুধুই স্মৃতি। ছবি: প্রতিনিধি।
ঘাতক স্বামী তানজিল। ছবি: প্রতিনিধি।
পরিবারের সবার ছোট লাইজু। বড় ভাইবোনদের বিয়ে হয়ে গেছে আগেই। তাই বাবা-মায়ের আদরটা একটু বেশিই পান লাইজু। পড়ছেন দৌলতখান মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণিতে। নিয়মিত কলেজে যেতেন আসতেন। এলাকায় সরল মেধাবী বলে পরিচিত ছিলেন।
[caption id="attachment_192442" align="alignright" width="208"] ঘাতক স্বামী তানজিল। ছবি: প্রতিনিধি[/caption]তবে হঠাৎ করেই বছর দুয়েক আগে পাল্টে যায় লাইজু। একদিন মোবাইলে অপরিচিত নাম্বারে ফোন আসে। ফোনেই পরিচয় হয় যুবক তানজিলের (২৫) সঙ্গে। মাঝে মাঝে কথা হতে হতে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। দীর্ঘ দুই বছর প্রেম করার পর মাস দুয়েক আগে হঠাৎ প্রেমিকের হাত ধরে উধাও হয়ে যায় লাইজু। তারপর খবর আসে গ্রামের সেই সহজ সরল অতি আদরের মেয়েটি কোর্টে গিয়ে বিয়ে করে নিয়েছেন প্রেমিক তানজিলকে।
মেয়ের কাণ্ডে স্তব্ধ হয়ে যান লাইজুর বাবা-মা। তবে যে স্বপ্ন নিয়ে লাইজু প্রেমিকের ঘরে গিয়ে উঠেছিল দিন দশেক পরেই তা ভেঙে যেতে শুরু করে। প্রেমিক তানজিল আর তার মা-বোনদের ভিন্ন চেহারা বের হয়ে আসে লাইজুর কাছে। প্রেমিকা থেকে নববধূ হয়ে ওঠা লাইজুর ওপর নির্যাতন নেমে আসে। বাবা-মা আর আত্মীয় স্বজনের অমতে বিয়ে করায় নির্যাতনের খবর তাদের কাছে পৌঁছাতেও পারছিলেন না। সহ্য করেই যাচ্ছিলেন।
এক পর্যায়ে গত বৃহস্পতিবার দফায় দফায় নির্মম নির্যাতন করা লাইজুর ওপর। এতে সন্ধ্যার পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে কলেজপড়ুয়া নববধূ। অবস্থা বেগতিক দেখে শ্বশুরবাড়ির লোকজন লাইজুর লাশ খাটে কম্বল দিয়ে মুড়িয়ে রেখে আত্মগোপন করেন। প্রতিবেশীরা বাড়ির কারো সাড়াশব্দ না পেয়ে ভোলা মডেল থানায় খবর দেয়। এসআই মোফাজ্জল হোসেন গিয়ে রাত ৯টায় লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।
[caption id="attachment_192441" align="aligncenter" width="700"] লাইজু, এখন শুধুই স্মৃতি। ছবি: প্রতিনিধি।[/caption]লাইজু দৌলতখান উপজেলার চরপাতা ৯নং ওয়ার্ড শিকদার বাড়ির মসু শিকদারের তিন ছেলে আর তিন মেয়ের মধ্যে সবার ছোট। তার প্রেমিক স্বামী তানজিল ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের তুলাতলি গ্রামের বাসিন্দা।
ভোলা সদর স্বামীর বাড়িতেই মৃত্যু হয় লাইজুর। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় দৌলতখান চরপাতা ইউনিয়নের পারিবারিক কবরস্থানে লাইজুর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। লাইজুর স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে শিকদার বাড়ি।
দৌলতখান মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ জাবের হাসনাইন জাকির বলেন, হত্যাকারী হয়তো কঠিন শাস্তি পাবে, তাতে কি লাইজুকে আমরা ফিরে পাবো। এভাবে আমরা আমাদের সন্তানদের হারাতে চাই না।
ভোলা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন বলেছেন, লাশের গায়ে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।