প্রধান চার প্রার্থীই সম্পদশালী
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২০, ০১:৩৪ পিএম
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ-বিএনপির ৪ প্রার্থীই উচ্চশিক্ষিত ও বিত্তশালী। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিত্তশালী দক্ষিণে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ফজলে নূর তাপস। পেশায় তিনি আইনজীবী। অপর তিনজনই ব্যবসায়ী। তারা প্রত্যেকেই কোটি টাকার মালিক। তুলনামূলক কম সম্পদের মালিক সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন। এ ৪ প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ উত্তরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলামের। তিনটি বেসরকারি ব্যাংকে ৫৯২ কোটি ৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা ঋণ আছে তার। আর বিএনপি প্রার্থী তাবিথের ঋণের পরিমাণ ৩০৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিতে গত ৩১ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামা জমা দিয়েছেন প্রার্থীরা। সেই হলফনামা বিশ্লেষণ করে তাদের আর্থিক অবস্থার এই চিত্র পাওয়া গেছে।
হলফনামায় শেখ ফজলে নূর তাপস লিখেছেন, তিনি এলএলবিতে স্নাতক এবং ব্যারিস্টার-অ্যাট ল’ করেছেন। পেশায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। তার বছরে আয় ৯ কোটি ৮১ লাখ ৩৮ হাজার ৪৬ টাকা। এর মধ্যে আইন পেশা থেকে আয় ১ কোটি ৪৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বাকি আয় এসেছে কৃষি, ঘর ভাড়া, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতসহ অন্যান্য খাত থেকে। তার ওপর নির্ভরশীলদের (স্ত্রী ও অন্যদের) বার্ষিক আয় ২ কোটি ১৫ লাখ ৬৪ হাজার ৩৯২ টাকা। এ ছাড়া তাপসের নামে ১২ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ আছে। তার স্ত্রীর নামে আছে প্রায় ১৩ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ। ফজলে নূরের দায়-দেনার মধ্যে অগ্রিম বাড়ি ভাড়া বাবদ নেয়া আছে ৪ কোটি ৪৭ লাখ ৯৬ হাজার ২৫০ টাকা। অতীতে তার নামে দুটি মামলা থাকলেও খারিজ হয়ে গেছে।
ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম পেশায় ব্যবসায়ী, শিক্ষাগত যোগ্যতা বি.কম পাস। ১৬টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি। এই ব্যবসায়ীর হাতে নগদ আছে ৮ লাখ ৭৫ হাজার ৭৫৩ টাকা। কৃষি, বাড়ি বা দোকান ভাড়া, ব্যবসার পারিতোষিক, ব্যাংক সুদ ও মৎস্য খাত থেকে তার বার্ষিক আয় ১ কোটি ২৯ লাখ ৬৮ হাজার ৭৩৫ টাকা। স্ত্রীর বার্ষিক আয় ২২ লাখ ৫২ হাজার ৩৪১ টাকা। সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম সব মিলিয়ে ৪ কোটি ৮৬ লাখ ৬৯ হাজার ৬৯৮ টাকার অস্থাবর সম্পদের মালিক। আর ৬ কোটি ৯৮ লাখ ৬৬ হাজার ২৪ টাকার স্থাবর সম্পদ আছে। তবে তার ব্যক্তিগত কোনো গাড়ি নেই। তার স্ত্রীর ২ কোটি ৯৯ লাখ ১৫ হাজার ৬৫৭ টাকার অস্থাবর সম্পদ, ৮২ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদ ও ৩০ ভরি সোনা আছে। আইএফআইসি ব্যাংকে আতিকের ব্যক্তিগত ঋণ আছে ৯৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ রয়েছে ৫৯১ কোটি ৬ লাখ টাকা। তার নামে কোনো মামলা নেই।
বিএনপির উত্তরে মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল পেশায় ব্যবসায়ী। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টুর জ্যেষ্ঠ ছেলে তাবিথ ইনফরমেশন সিস্টেমস টেকনোলজির ওপর এমএসসি ডিগ্রি নিয়েছেন। হলফনামা অনুযায়ী তিনি ৩৭টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। বিভিন্ন খাত থেকে তাবিথের বার্ষিক আয় ৪ কোটি ১২ লাখ ৭৩ হাজার ৩৯১ টাকা। তাবিথের ৪৫ কোটি ৬০ লাখ ৮ হাজার ৩১৭ টাকার অস্থাবর সম্পদ আছে। স্ত্রীর নামে আছে ৪ কোটি ৬০ লাখ ৯১ হাজার ৩৭৬ টাকার অস্থাবর সম্পদ। তাবিথের হাতে নগদ আছে ১ কোটি ৪৮ লাখ ৫১ হাজার ৫৮ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ৪১ লাখ ৭৫ হাজার ৭৯৫ টাকা। বন্ড ও শেয়ার আছে ১৮ কোটি ৭৩ লাখ লাখ টাকার। বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র, স্থায়ী আমানত আছে ৮ কোটি ৯২ লাখ ৩০ হাজার টাকা। আছে একটি লেক্সাস জিপ। তাবিথের স্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে ৪ একর কৃষিজমি, ১৬ একর অকৃষি জমি, দুটি অ্যাপার্টমেন্ট এবং ১৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি খামার। তাবিথের নিজের নামে ঋণ আছে ২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঋণ আছে ৩০২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। তাবিথের নামে কোনো মামলা নেই।
দক্ষিণে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন অবিভক্ত ঢাকার প্রয়াত মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে, পেশায় ব্যবসায়ী। তিনি এমএসসি (ইঞ্জিনিয়ারিং) ডিগ্রিধারী এবং সাদেক ফাইন্যান্স ম্যানেজমেন্ট, বুড়িগঙ্গা ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট, বুড়িগঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিজ ও দিগন্ত প্রকৌশলী লিমিটেডের পরিচালক। ডাইনামিক স্টিল কমপ্লেক্সের অংশীদার এবং ট্রান্স ও শিয়ানিক ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী বলেও হলফনামায় উল্লেখ আছে।
হলফনামা অনুসারে, বিভিন্ন উৎস থেকে ইশরাকের বার্ষিক আয় ৯১ লাখ ৫৮ হাজার ৫০৯ টাকা। এখন সব মিলিয়ে ইশরাকের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ আছে ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৭১ হাজার ৫৯৬ টাকার। তার হাতে নগদ টাকা আছে মাত্র ৩৩ হাজার ১০৯ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ১ কোটি ৩৭ লাখ ১৮ হাজার ৬৩ টাকা। ২ কোটি ৯৬ লাখ টাকার শেয়ার আছে। সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানত আছে ৪২ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ টাকার। একটি অ্যাপার্টমেন্ট, জোয়ার সাহারায় নির্মাণাধীন ভবন এবং কৃষি ও অকৃষি জমি আছে। ইশরাকের ৬৫ লাখ ৪৬ হাজার ৭৪৩ টাকার দায়দেনাও আছে। এর মধ্যে তিনি মায়ের কাছ থেকে ৬১ লাখ ৩৭ হাজার ২২২ টাকা ঋণ নিয়েছেন। আর ক্রেডিট কার্ডের বকেয়া আছে ৫৯ হাজার ৫২১ টাকা এবং স্বল্পমেয়াদি ঋণ আছে সাড়ে ৩ লাখ টাকার। তার বিরুদ্ধে ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে-৪ এ একটি দুর্নীতির মামলা বিচারাধীন।