×

সাময়িকী

সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২০, ০৯:৩৭ পিএম

সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব
মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে তিনটি অস্ত্র চালানোর বিরল সৌভাগ্য অর্জন করেন হারুন হাবীব। কলম, ক্যামেরা ও স্টেনগান। যুদ্ধ শেষে যে কয়েকজন গেরিলা যোদ্ধা সাংবাদিকতা ও সাহিত্যের অঙ্গনে প্রবেশ করেন তিনি তাদের একজন। বরেণ্য লেখক হারুন হাবীব একই সঙ্গে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, কলাম লেখক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক। বাংলাদেশের যুদ্ধ-সাংবাদিকতার ইতিহাসে তার ভ‚মিকা অনন্য। রণাঙ্গনের সশস্ত্র যোদ্ধা হয়েও তিনি মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী মুজিবনগর সরকারের মুখপত্র ‘জয় বাংলা’ পত্রিকা ও ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’-এর ১১ নম্বর সেক্টরের যুদ্ধ-সংবাদদাতার দায়িত্ব পালন করেন যুদ্ধক্ষেত্র থেকে। সেই সুবাদে তার ক্যামেরায় বন্দি হয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের দুর্লভ সব ছবি যা জাতীয় ইতিহাসের সম্পদ। হারুন হাবীব জীবনমুখী গদ্যশিল্পী।
সময়ের সাহসী সন্তান হারুন হাবীব মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিকাশ আন্দোলনের অন্যতম সাহসী সৈনিক। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ সব প্রগতিশীল আন্দোলনে আজো তিনি সক্রিয় ভূমিকা রেখে চলেছেন। অসাম্প্রদায়িক জাতিসত্তার দীর্ঘ আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও আদর্শ প্রতিষ্ঠার সাহসী সংগ্রামরত একনিষ্ঠ মানুষ তিনি।
গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা ও যুদ্ধদিনের স্মৃতিচারণসহ অসংখ্য গ্রন্থের রচয়িতা তিনি, যা তাকে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান লেখকের সম্মান দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারসহ বেশকিছু সম্মাননা অর্জন করেন। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান গল্পকার হারুন হাবীব একাত্তরের জাতীয় রণাঙ্গনকে তুলে ধরেছেন একনিষ্ঠ মমতায়। নতুন প্রাণে সঞ্চারিত করেছেন জাতির মহত্তম ইতিহাসকে। তার লেখালেখির আছে নিজস্ব পরিভাষা, ব্যক্তি অভিজ্ঞতায় অকৃত্রিম আন্তরিকতার গুণ, যা তাকে আর সবার চেয়ে আলাদা করে তোলে। তার ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক স্মৃতিকথাসহ সার্বিক লেখালেখির প্রধান বৈশিষ্ট্য তিনি নিরবচ্ছিন্ন ধারায় তুলে ধরেন মুক্তিযুদ্ধকে, জাতির মহত্তম সময়কে, অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতিসত্তার অর্জন ও তার প্রতিপক্ষকে। জাতির জনকের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ১৯৭৫-পরবর্তী প্রবল প্রতিক‚ল রাজনৈতিক পরিবেশেও সমাজ-প্রগতি ও স্বাধীনতার পক্ষে কলম ধরেছেন তিনি, যেমন লড়েছেন একাত্তরে তেমনি লড়েছেন পরবর্তীকালে। মুক্তিযুদ্ধের লুণ্ঠিত গৌরব পুনরুদ্ধার আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সৈনিক তিনি। মুজিবনগর সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত রণাঙ্গন-সাংবাদিক হারুন হাবীব ছুটে বেড়িয়েছেন একাত্তরের ট্রেঞ্চ থেকে ট্রেঞ্চে, ক্যাম্প থেকে ক্যাম্পে, যুদ্ধকালীন প্রচার-প্রকাশনার কাজে এক রণাঙ্গন থেকে আরেক রণাঙ্গনে। মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বকে ঘনিষ্ঠভাবে দেখার সুযোগ লাভ করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে ১১ নম্বর যুদ্ধ সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল আবু তাহের বীরউত্তমের প্রায় সার্বক্ষণিক সঙ্গী হারুন হাবীব বৃহত্তর রংপুরের রৌমারী, চিলমারী, কুদালকাটি, রাজীবপুরের রণাঙ্গনের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ। বৃহত্তর জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, বক্সিগঞ্জ, শেরপুর ও বৃহত্তর রংপুরের কুড়িগ্রাম-গাইবান্ধা নিয়ে যে ১১ নম্বর যুদ্ধাঞ্চল, তা তার স্মৃতির রণাঙ্গন। সে কারণেই তার লেখার প্রধান উপজীব্য হয়েছে এই এলাকার মাটি ও মানুষ এবং ক্যামেরায় ফ্রেমবন্দি হয়েছে এই অঞ্চলের দুর্লভ সব রণাঙ্গন চিত্র যা জাতীয় ইতিহাসের অনন্য দলিল। বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় হারুন হাবীব একটি উজ্জ্বল নাম। জাতীয় সংবাদ সংস্থা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি, যদিও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে তাকে রাজনৈতিক কারণে চাকরিচ্যুত করা হয়। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তার কলাম, নিবন্ধ ও সংবাদ পর্যালোচনা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে তুলে ধরছে দীর্ঘ চার যুগেরও বেশি সময় ধরে। ভারতের শীর্ষ স্থানীয় ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য হিন্দু’, ভারতীয় জাতীয় সংবাদ-ম্যাগাজিন ‘ফ্রন্টলাইন’, জার্মান বেতার তরঙ্গ ‘দয়েৎসে ভেলে’ ও বিশ্বখ্যাত ‘টাইম ম্যাগাজিন’সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাথে তিনি দীর্ঘকাল একনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। সময়ের সাহসী সন্তান হারুন হাবীব মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিকাশ আন্দোলনের অন্যতম সাহসী সৈনিক। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ সব প্রগতিশীল আন্দোলনে আজো তিনি সক্রিয় ভ‚মিকা রেখে চলেছেন। অসাম্প্রদায়িক জাতিসত্তার দীর্ঘ আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও আদর্শ প্রতিষ্ঠার সাহসী সংগ্রামরত একনিষ্ঠ মানুষ তিনি। সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ ’৭১-এর প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম তিনি এবং ২০১৩ সাল থেকে জাতীয় প্রতিষ্ঠানটির মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। হারুন হাবীবের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১ জানুয়ারি (পরবর্তীতে উদ্ধারকৃত পিতার ডায়েরির পাতায় জন্ম তারিখ ১৩ জুলাই শনাক্ত), জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার খড়মা নয়াপাড়া গ্রামে। পিতা ডা. তোফাজ্জল হোসেন, মা ফাতেমা খাতুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগ থেকে তিনি এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। সাংবাদিকতায় পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করেন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব মাস কমিউনিকেশন (আইআইএমসি), নতুন দিল্লি থেকে। এক মেয়ে ও এক ছেলের জনক তিনি। স্ত্রী একজন নিবেদিতপ্রাণ সমাজকর্মী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App