×

সাময়িকী

বাঙালি সত্য ও সুন্দরের মাল্যে ভূষিত হোক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২০, ১০:০৩ পিএম

বাঙালি সত্য ও সুন্দরের মাল্যে ভূষিত হোক
চলতি সালের মুজিববর্ষ ও ২০২১ সালের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর মহালগ্ন ঘিরে যে মহাআয়োজন তা যেন গতানুগতিকতায় আবদ্ধ না থাকে। এই দুই জাতীয় মহালগ্ন ঘিরে, আমার একান্ত প্রত্যাশা, শুরু হোক এমনই এক সাংস্কৃতিক নবজাগৃতি যা বাঙালিকে বিশালত্ব দান করবে, মানবিক করবে, হৃদয়ের সব কালিমা ঘুচিয়ে মুক্ত করবে। কারণ অনেক অর্জন এলেও আমাদের মনুষ্যত্বের অর্জন আজো সীমিত।
রাষ্ট্রের স্বাধীনতার বয়স প্রায় ৫০ বছর যখন, নিজেরও ৭০ পেরিয়ে সামনে, তখন পেছনের দিকে তাকাবার সুযোগ ঘটে কখনো কখনো আনমনে অথবা সচকিত সচেতনে। আমাদের পেছনের সময়গুলো কেবলই যে সত্য ও সুন্দরের হয়েছে তা নয়; কুৎসিত, অসত্য ও অসুন্দরের কালও পেরিয়েছি আমরা যা ৪৮ বছরের স্বদেশভ‚মিকে নানা পালাবদলের ইতিহাসে ভরিয়ে দিয়েছে। সব মিলিয়ে ভাবি, কখনো কখনো জীবনতো একটাই, তবে কি ব্যর্থ হলো? ব্যর্থতার পাল্লা যখন ভারী বলে মনে হয়, ব্যথা ও যন্ত্রণার কর্দমায় যখন নিক্ষিপ্ত হই, বাঙালি জাতিসত্তার দানবেরা ভাগাড় থেকে বেরিয়ে এসে যখন বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে তাড়া করে, মনে পড়ে, আমরা তখন প্রাণপণে সূর্যস্নান চেয়েছি সেই রশ্মিতে যা ১৯৭১-এর, আমাদের জেনারেশনের সর্বশ্রেষ্ঠ সূর্যের। বলাই যায়, আমি বা আমরা অনেকেই সেই সূর্যবলয় থেকে বাইরে বেরুতে পারিনি, সম্ভব হয়নি, যদিও কেউ কেউ একে ব্যর্থতা বলবেন, অভিশাপ দেবেন গণ্ডি থেকে না বেরোবার চরম দুর্গতি বলবেন। দ্বিধা নেই বলতে, সে ব্যর্থতা আমাদের জীবনের রাজটীকার গৌরব, যা হেলায় হারাতে রাজি নই কেউ। না, এই বেরোতে না পারার যুক্তি ব্যক্তিজীবনের সীমা বা সংকটে আবদ্ধ নয় এই কারণে যে, আমাদের প্রিয় মাতৃভ‚মি বারবারই আক্রান্ত হয়েছে এবং এই ৪৯ বছরেও যা বিপদমুক্ত হয়নি আজো। অতএব যাকে ভালোবেসে যুদ্ধে নেমেছিলাম, সেই প্রিয়তমাকে প্রতিরক্ষা দেয়ার তাগাদা আর সব তাগাদার চাইতে জরুরি মনে হয়েছে। এতে যদি কারো মনোকষ্ট হয় হোক, আমার বা আমাদের কীইবা করার আছে। বিস্তর লেখালেখি হয়েছে, হবে আরো; গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটকসহ বহুবিধ শিল্পকর্ম সৃষ্টি হয়েছে ১৯৭১ নিয়ে, জাতীয় জীবনের শ্রেষ্ঠতম সময় নিয়ে; শিল্পসাহিত্যের ক্যানভাসে বাক্সময় হয়েছে মানুষ, সেই কাল, সুখ-দুঃখ, ক্রোধ ও আক্ষেপ। আমি নিজেও কলম ধরেছি। কিন্তু তারপরও এক শূন্যতা বিরাজমান, বড় আক্ষেপ যে, কিছুই যেন পূর্ণ হলো না; পরিপূর্ণভাবে তুলে ধরা সম্ভব হলো না ১৯৭১! এ ব্যর্থতা শিরোধার্য। তবে আমার একান্ত বিশ্বাস যে, একদিন না একদিন সাফল্যের রাজটীকা মাথায় তুলবেন নতুন শিল্পসাধকরা। ততদিন ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধারা হয়তো কেউই থাকবেন না, তবে তা হবে নতুন প্রজন্মের কাছ থেকে অসীম পাওয়া, শ্রেষ্ঠ উপঢৌকন তাদের। মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক শক্তি, বহুবিধ যুদ্ধ-সংকট-সীমাবদ্ধতার পর, রাষ্ট্রমঞ্চে সমাসীন আজ। যে আদর্শে গড়া এই রাষ্ট্র সেই আদর্শের কাণ্ডারীরা যখন রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক তখন তা এক বড় তৃপ্তির মঞ্চ আমাদের। কিন্তু ভয় হয় যখন সেই শক্তি গতানুগতিক হওয়ার শঙ্কা তৈরি করে, নিজেদের অধিকতর যোগ্য করে তোলার প্রয়োজন বোধ করে না, আত্মতুষ্ট হয় কিংবা অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তফাৎ রাখার প্রয়োজন বোধ করে না। এই তফাৎ বড় বেশি প্রয়োজন, তা না হলে আগামীর সময় ভালো ও মন্দের তফাৎ গুলিয়ে ফেলবে যা হবে আরেক ব্যর্থতা ও বিপর্যয়। অতএব প্রয়োজন বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের আদর্শিক সৈনিকের ক্ষমতার সৈনিক নয় কেবল। মনে রাখা উচিত যে, জয়বাংলা ও জয় বঙ্গবন্ধু কেবল কণ্ঠে ধারণ করার  স্লোগান নয়, একে ধারণ করতে হবে আত্মায় ও হৃদয়ে; এ না হলে বাংলাদেশ অরক্ষিত হবে, ভালো-মন্দ, শুভ ও অশুভ একাকার হবে; যা হবে বাঙালির জাতীয় বিপর্যয়। আরো একটি অনুভ‚তি ব্যক্ত করি। চলতি সালের মুজিববর্ষ ও ২০২১ সালের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর মহালগ্ন ঘিরে যে মহাআয়োজন তা যেন গতানুগতিকতায় আবদ্ধ না থাকে। এই দুই জাতীয় মহালগ্ন ঘিরে, আমার একান্ত প্রত্যাশা, শুরু হোক এমনই এক সাংস্কৃতিক নবজাগৃতি যা বাঙালিকে বিশালত্ব দান করবে, মানবিক করবে, হৃদয়ের সব কালিমা ঘুচিয়ে মুক্ত করবে। কারণ অনেক অর্জন এলেও আমাদের মনুষ্যত্বের অর্জন আজো সীমিত। বাঙালি সত্য ও সুন্দরের মাল্যে ভ‚ষিত হোক, মনুষ্যত্বের মাল্যে ভ‚ষিত হোক, সাম্প্রদায়িকতার কলুষতা থেকে মুক্ত হোক এই প্রার্থনা করি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App