×

মুক্তচিন্তা

জিপিএ ৫ আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ নয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২০, ০৭:৪৭ পিএম

জিপিএ ৫ আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ নয়

বই হাতে কোমলমতিরা

শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো ভালো মানুষ গড়ে তোলা এবং দক্ষতা তৈরি করা। একজন মানুষের জীবনকে এগিয়ে নেয়ার জন্য প্রয়োজন দক্ষতা, সেইসঙ্গে প্রয়োজন মানবিক গুণাবলি অর্জন। কিন্তু এখন আমরা দেখতে পাই, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা কেবল ভালো ফলাফল বা জিপিএ ৫ কেন্দ্রিক প্রতিযোগিতার দিকেই ধাবিত হচ্ছে। মানবিক গুণাবলি ও দক্ষতা অর্জনের বিষয়টি গৌণ হয়ে পড়েছে। বর্তমানে শিক্ষাকে আমরা শিক্ষণ হিসেবে ধারণ করতে পারি না। কেননা শিক্ষাকে আমরা কিছু গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যে কোনো পরীক্ষায় জিপিএ ৫কে মেধার মূল্যায়ন হিসেবে ধরা হয়। তাই সন্তানের কাছে জিপিএ ৫ প্রত্যাশার মাত্রাও অনেক বেশি। পরিবার ও সমাজের এমন প্রত্যাশা মেটাতে না পেরে বঞ্চনা, গ্লানি পুরোটাই একতরফাভাবে বইতে হয় শিক্ষার্থীদের। ফলে চারদিক থেকে তারা কোণঠাসা হয়ে পড়ে, যার ফলে আত্মহত্যা পর্যন্ত গড়ায়। কোনো কোনো অভিভাবক মনে করেন, জিপিএ ৫ অর্জন না করতে পারা মানেই ওই শিক্ষার্থী মেধাবী নয় এবং তাদের ভবিষ্যতের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। আমাদের মনে রাখা দরকার, জিপিএ ৫ অর্জন করাটাই বড় কথা নয়। কোনো শিশু যদি তার পাঠ্যসূচি নির্দেশিত যোগ্যতাগুলো ভালোভাবে অর্জন করে থাকে তবে অবশ্যই সে মেধাবী। অভিভাবকদের এই সত্য উপলব্ধি করতে হবে, ভালো ফল মানেই যে শিক্ষার্থী সবচেয়ে বেশি জানে এমন নয়। সাজেশন-নির্ভর, মুখস্তনির্ভর কিংবা গাইড-নির্ভর পড়ার মাধ্যমে ভালো ফল করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে জানার পরিধি থাকে সীমিত। শিক্ষার্থীরাও এমন উদ্ভট মন্ত্রে বুঁদ হয়ে আছে। যার ফলে তারা জিপিএ ৫ জীবনে উন্নতি করার অন্যতম মাধ্যম মনে করে। যার ফলে কাক্সিক্ষত জিপিএ ৫ না পেলে হতাশায় ভোগে এমনকি আত্মহত্যার মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের দিকেও হাত বাড়ায়। সম্প্রতি জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ না পাওয়ায় ও ফেল করার কারণে বাউফল, কলমাকান্দা, বরিশাল, গোসাইরহাট ও রাজবাড়ীতে যথাক্রমে সারিয়া আক্তার, রুদ্র সরকার, মিম আক্তার, ফাতেমা আক্তার ও ফাহাদ নামে ৫ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের একদিনের ব্যবধানে অন্তত ১৯ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে এবং পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। তা ছাড়া প্রতি বছর এমন অসংখ্য শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। আমাদের পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রকে শিক্ষা নিয়ে এমন চিন্তা-ভাবনা থেকে বাইরে হতে হবে। চলিত এই ধারণাকে বদলে দিতে হবে। জিপিএ ৫কে মেধার মূল্যায়ন হিসেবে না নিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিতে হবে। এ ব্যাপারে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সচেতন করতে উন্মুক্ত সেমিনারের আয়োজন করতে হবে। শিক্ষকদের দায়িত্ব নিতে হবে যাতে শিক্ষার্থীরা এ ব্যাপারে সচেতন হয়। শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ না করে, বন্ধুর মতো আচরণ করে প্রকৃত শিক্ষার স্বরূপটা তাদের সামনে উপস্থাপন করুন। সন্তানের যে কোনো মুহূর্তে পাশে থাকুন। আমাদের মাথা থেকে জিপিএ ৫ ভ্রান্ত ধারণাটি ঝেড়ে ফেলে দেয়া উচিত। এটা আমাদের রোগ। এ রোগটি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ও তাদের অভিভাবকদের তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে। কবি বলেছেন, ‘গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন, নহে বিদ্যা নহে ধন, হলে প্রয়োজন।’ যখনই আমরা এমন উদ্ভট চিন্তা-ভাবনা থেকে বের হয়ে শিক্ষাকে শিক্ষণ হিসেবে নিতে পারব, দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যম হিসেবে নিতে পারব, জানার পরিধি বাড়ানোর মাধ্যম হিসেবে নিতে পারব, মানুষ গড়ার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে নিতে পারব, তখনই আমরা প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারব। তাই সন্তানকে জিপিএ ৫-এর মাত্রাতিরিক্ত চাপ না দিয়ে, আলোকিত মানুষ গড়ার তাগিদ দিন। তাহলে আপনার সন্তান ভালো থাকবে, দেশ এগিয়ে যাবে। শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App