বকেয়া পরিশোধে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে
nakib
প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২০, ১০:৫৭ পিএম
পাওনা পরিশোধের দাবিতে পাটকল শ্রমিকদের বারবার রাস্তায় নামতে হচ্ছে। পাট খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ, বকেয়া মজুরি ও বেতন পরিশোধসহ ১১ দফা দাবিতে খুলনা, যশোর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও নরসিংদীর রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে বিক্ষোভ ও অনশন কর্মসূচি পালন করছেন শ্রমিকরা। খুলনায় কর্মসূচিতে অংশ নেয়া ৮ শ্রমিক অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জানা গেছে, দেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পাটকল খুলনা অঞ্চলে। এ অঞ্চলের সাতটি পাটকলে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক রয়েছেন। প্রতিটি কলেই শ্রমিকদের মজুরি ৮ থেকে ১০ সপ্তাহ বকেয়া পড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এ পরিস্থিতিতে তাদের জীবনযাপন সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে। শ্রমিকদের দাবিগুলো যৌক্তিক। আর রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকদের সমস্যা নিরসনের দায়িত্ব সরকারের ওপরই বর্তায়। সরকার ঘোষিত জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১৫ সুপারিশ বাস্তবায়ন, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ গ্র্যাচুইটি ও মৃত শ্রমিকদের বিমার বকেয়া প্রদান, টার্মিনেশন, বরখাস্ত শ্রমিকদের কাজে পুনর্বহাল, শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগ ও স্থায়ী করা, পাট মৌসুমে পাট ক্রয়ের অর্থ বরাদ্দ, উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিলগুলোকে পর্যায়ক্রমে বিএমআরই করাসহ ১১ দফা বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছিল সরকার। কিন্তু দাবিগুলো এখনো বাস্তবায়ন না হওয়ায় সাধারণ শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে এসেছেন। ১১ দফা দাবিতে ১০ ডিসেম্বর থেকে অনশন কর্মসূচি পালন করছেন শ্রমিকরা। এই কর্মসূচি চলাকালে ১৩ ডিসেম্বর রাতে খুলনা বিভাগীয় যুগ্ম শ্রম পরিচালকের অধিদপ্তরে আন্দোলনরত শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। প্রতিমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিতে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনশন স্থগিত করা হয়। পরবর্তী সময়ে ১৫ ডিসেম্বর বিজেএমসিতে ও ২৬ ডিসেম্বর শ্রম মন্ত্রণালয়ে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান আবারো প্রতিশ্রুতি দিয়ে এক মাস পরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানান। এ সময় রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ ও নন-সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের নেতারা প্রতিমন্ত্রীর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনে ফিরে আসেন। বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া পাওয়া বুঝে দিতে প্রধানমন্ত্রীকেও উদ্যোগী হতে হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা উপেক্ষিত হয়েছে। শ্রমিকরা স্পষ্টই বলেছেন, তারা আর সরকারি আশ্বাসে-ঘোষণায় আস্থা রাখতে পারছেন না। মিলের তহবিলে টাকা জমা না হওয়া পর্যন্ত তাদের ধর্মঘট চলবে। শ্রমিকদের আস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দায়িত্বশীল হতে হবে। ধর্মঘট-অবরোধ পরিহার করে কাজে ফিরিয়ে নিতে হবে। বর্তমান সরকার পাট খাতের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার কথা বলে আসছে অনেক দিন ধরেই। এ ব্যাপারে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছার কথাও আমরা জানি। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। এ ব্যাপারে পাট ও শিল্প খাত উভয়েরই দায়িত্ব রয়েছে। কৃষককে পাট উৎপাদনে উৎসাহিত করার পাশাপাশি মিলগুলোর সমস্যা-সংকট দূর করে শ্রমিকদের মজুরি প্রদানের ব্যবস্থার পথ মসৃণ করা সমভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই, আন্দোলনরত শ্রমিকরা তাদের বকেয়া পাওনা হাতে পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালোভাবে দিনযাপন করবেন। বকেয়া পরিশোধ ছাড়া অন্য যে দাবিগুলো শ্রমিকদের রয়েছে সেগুলোর যৌক্তিকতা যাচাই করে দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া উচিত।