×

সারাদেশ

কলাপাড়ায় মেগা উন্নয়নে বাধা ‘হঠাৎ গ্রাম’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৬:৪৯ পিএম

কলাপাড়ায় মেগা উন্নয়নে বাধা ‘হঠাৎ গ্রাম’

কলাপাড়ার ধানখালী ইউনিয়নে হঠাৎ গ্রাম। ছবি: প্রতিনিধি

কলাপাড়ায় মেগা উন্নয়নে বাধা ‘হঠাৎ গ্রাম’

কলাপাড়ার ধানখালী ইউনিয়নে হঠাৎ গ্রাম। ছবি: প্রতিনিধি

কলাপাড়ায় মেগা উন্নয়নে বাধা ‘হঠাৎ গ্রাম’

কলাপাড়ার ধানখালী ইউনিয়নের গিলাতলায় হঠা গ্রাম। ছবি: প্রতিনিধি

সরকারের উন্নয়ন অগ্রগতির মাইল ফলক হিসেবে ইতোমধ্যে স্বীকৃত হয়েছে দক্ষিণের পর্যটন অঞ্চল কুয়াকাটা। তবে কিছু অসাধু ব্যক্তির লোভের কারণে সে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাড়তি সুবিধা আর বেশি দামের আশায় তারা প্রকল্প এলাকায় একাধিক অবৈধ ঘরবাড়ি নির্মাণ করেছে। নির্মিত এসব স্থাপনার জমির অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য তারা প্রকল্প পরিচালকদের বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করছে। এতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নে (রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিসিএল) অধীনে ১৩২০ মেঘাওয়াট তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ শুরু হলে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়। কলাপাড়ায় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন যজ্ঞের মধ্যে রয়েছে পায়রা সমুদ্রবন্দর, ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একাধিক প্রকল্প, সর্বোপরি সাগর কন্যা কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র। এসব উন্নয়ন কাণ্ডের জন্য প্রয়োজন জমি অধিগ্রহণ। সরকার বাজার মূল্যের চেয়ে দু-তিনগুণের বেশি দামে জমি অধিগ্রহণ করছে। এরমধ্যে পায়রা সমুদ্রবন্দর ও ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রায় শেষের পথে। এসব জমির মালিককে বর্তমান বাজার দরের চেয়ে দ্বিগুণ, কোথাও আবার তিনগুণ টাকা পরিশোধ করেছে সরকার। এর ওপর আবার যাদের বসতবাড়ি অধিগ্রহণের মধ্যে পড়েছে তাদের বাড়িঘরের মূল্য পরিশোধসহ বসবাসের জন্য আবাসনেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের সর্বশেষ সম্বল মাথাগোঁজার ঠাঁই বাড়িঘরগুলো উন্নয়নের স্বার্থে ছেড়ে দেয়ার কারণে সরকার ফসলি জমির তুলনায় বসতবাড়ি ও ঘরের মূল বেশি পরিশোধ করেছে। আর এঘটনার কারণেই অসাধু ব্যক্তিরা নানাভাবে উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। অধিক লাভের আশায় তারা একাধিক ঘরবাড়ি তুলেছে। যেসব ঘরবাড়িকে স্থানীয়রা নাম দিয়েছে ‘হঠাৎ গ্রাম’। এই ‘হঠাৎগ্রাম’ সৃষ্টিকারীরা তাদের নির্মিত ঘরের দাম পরিশোধ করার জন্য প্রকল্প পরিচালকদের নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করছেন। ফলে উন্নয়ন কাজে অধিক অর্থ ও সময়ের অপচয় হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নে আরপিসিএলর অধীনে ১৩২০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের সম্প্রতি জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়েছে। অধিগ্রহণের খবর শুনে সেখানে একাধিক জায়গায় হঠাৎ গ্রাম নামে সারিবদ্ধ নতুন পাড়া গড়ে উঠেছে। সরকারি সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আরপিসিএল কলাপাড়া উপজেলায় ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাস্থবায়ন করছে। প্রকল্পটি চায়নার-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশনের সঙ্গে সমান সমান জয়েন্টভেঞ্চার ভিত্তিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ধানখালী, লোন্দা ও নিশানবাড়ীয়া মৌজায় ইতোমধ্যে ৯১৫ দশমিক ৭৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। [caption id="attachment_191646" align="aligncenter" width="1080"] কলাপাড়ার ধানখালী ইউনিয়নে এভাবেই গড়ে উঠে হঠাৎ গ্রাম। ছবি: প্রতিনিধি[/caption] ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ হিসাবে সরকার দেড়গুণ ও আরপিসিএল সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা হিসেবে দেড়গুণ করে মোট তিনগুণ টাকা বর্তমান বাজার মূল্যের তুলনায় বেশি পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে লোন্দা মৌজায় অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশায় নিয়ম বহির্ভুত ভাবে ফাঁকা মাঠে প্রায় ১২০০ নতুন ঘর রাতারাতি নির্মাণ করা হয়েছে। যা একান্তই উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে করা হয়েছে। এমনকি ধানখালী ইউনিয়নের কিছু অসাধু ব্যক্তি জমির মালিকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে একাধিক ঘর তুলেছে বলেও সংবাদ পাওয়া যায়। স্থানীয় কয়েকজন বললেন, ফসলি জমির তুলনায় ঘর ও বাড়ির দাম বেশি পাওয়া যায়। তাই যার যার জমিতে ঘর তুলে রেখেছি। সরকারের প্রয়োজন হলে আমাদের ঘরের ক্ষতিপূরণ দিয়েই জমি নিতে হবে। ধানখালী ইউনিয়নের গিলাতলা গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বললেন, আমার এক আত্মীয় ঘর প্রতি এক লাখ টাকা করে মোট ৫ লাখ টাকা দেয়ার চুক্তিতে ৫টি ঘর তুলেছে। সরকারের কাছ থেকে ঘর বাবদ যে টাকা পাবে তাতে আমার কোনো ভাগ থাকবে না- এ চুক্তিতেই সেগুলো তোলা হয়েছে। [caption id="attachment_191647" align="alignnone" width="1080"] কলাপাড়ার ধানখালী ইউনিয়নের গিলাতলায় হঠা গ্রাম। ছবি: প্রতিনিধি[/caption] এবিষয়ে আরপিসিএল’র নির্বাহী পরিচালক (প্রকৌশলী) মো. সেলিম ভূঁইয়া বলেন, সরকারি সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আরপিসিএল’র অধীনে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ধানখালী, লোন্দা ও নিশানবাড়ীয়া মৌজায় ইতোমধ্যে ৯১৫ দশমিক ৭৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। লোন্দা মৌজায় অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশায় নিয়ম বহির্ভুতভাবে ফাঁকা মাঠে প্রায় ১২০০ নতুন ঘর রাতারাতি নির্মাণ করা হয়েছে। যা ভূমি অধিগ্রহণ আইনের পরিপন্থী বিধায় ক্ষতিপূরণ দেয়ার কোনো সুযোগ নাই। সেলিম ভূঁইয়া আরো বলেন, কিছু ব্যক্তি সম্প্রতি নতুন ঘরের মূল্য পরিশোধের দাবি চলমান ভূমি উন্নয়ন কাজ জোর করে বন্ধ করে দিয়েছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। কাজ বন্ধ করার ফলশ্রুতিতে প্রকল্পটি সময়মতো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য স্থানীয় ভূমি মালিক, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App