×

জাতীয়

উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:০৭ পিএম

উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা!
উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা!

উচ্চ শিক্ষাঙ্গন। ছবি: ফাইল।

উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা!

উচ্চ শিক্ষাঙ্গন। ছবি: ফাইল।

 ‘ভালোমন্দ’ মিশিয়ে ২০১৯ পার করছে সরকারের শিক্ষা খাত। গত ৩৬৫ দিনের মধ্যে শিক্ষায় ভালোর পাশাপাশি মন্দ কাজও রয়েছে। শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা গত এক বছরের কাজে তৃপ্তির ঢেঁকুড় তুললেও বিশ্লেষকরা বলেছেন, শিক্ষা খাতে কাজের গতিশীলতা আরো বাড়ানো উচিত ছিল। তাতে আরো সুফল পাওয়া যেত।

২০১৯ সালে শিক্ষায় মন্ত্রী বদলানো ছিল বড় পরিবর্তন। ১০ বছর ধরে দায়িত্ব চালিয়ে আসা নুরুল ইসলাম নাহিদকে গত ৭ জানুয়ারি সরিয়ে ডা. দীপু মনিকে শিক্ষামন্ত্রী এবং মহিবুল হাসান চৌধুরীকে উপমন্ত্রী করা হয়। অন্যদিকে মোস্তাফিজুর রহমানকে সরিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয় মো. জাকির হোসেনকে। মন্ত্রী বদলের চমক দিয়ে শিক্ষা খাতের যাত্রা শুরু হলেও ‘গড়পড়তা’ কাজের মাধ্যমে শেষ হয়েছে বছর।

তবে গত এক বছর ধরে কী কী কাজ হয়েছে তা জানতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৬ সদস্যের কমিটি করলেও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ক্ষেত্রে নীরব। এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৩৬৫ দিনের কাজ জানাতে কোনো কমিটি হয়নি। সে কারণে কমিটি গঠন করে অভিনবত্বের জন্ম দিল মন্ত্রণালয়।

গত রবিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তার পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বছরজুড়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৫১টি পয়েন্টে কাজ করার দাবি করলেও এতে নতুনত্ব ছিল মাত্র ১০টি কাজে। বাকিগুলো আগের বছরগুলোর পরম্পরা।

আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে চলতি বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে বলে দাবি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির। বছরজুড়ে ভালো অর্জনের দাবি করেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন। তবে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেননি বলে স্বীকার করেছেন প্র্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন।

বছরজুড়ে বির্তকযুক্ত এমপিওভুক্তির তালিকা প্রকাশ, মন্ত্রণালয়ে বসে শিক্ষামন্ত্রীর অফিস না করা, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে মন্ত্রীর অফিস করা, বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ না থাকা, বেসরকারি কলেজ সরকারিকরণের পর আত্তীকরণ না হওয়া, এনটিআরসিএ এবং মাউশির সমন্বয়হীনতা, কাজের গতিশীলতা কমে যাওয়া, শিক্ষক আন্দোলন, পাঠ্যবই সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত করতে না পারা, শিক্ষা আইনের বাস্তবায়ন না হওয়া, নোট-গাইড ও কোচিং ব্যবসা বন্ধ করতে না পারা নিয়ে আলোচনায় ছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

অন্যদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বছরজুড়ে বেতন-ভাতা নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলন, প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতির শিক্ষাগত যোগ্যতা ‘স্নাতক’ চালু, শিশুদের জন্য ওয়ান ডে ওয়ান ওয়ার্ড চালু করা ছিল উল্লেখযোগ্য। বছরশেষে এসে স্বচ্ছভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারাটাই তাদের বড় কাজ বলে জানানো হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, সবচেয়ে বড় অর্জন নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করা। প্রায় ১০ বছর বন্ধ থাকার পর চলতি বছর একসঙ্গে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে ২ হাজার ৭৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু জামায়াত-যুদ্ধাপরাধীদের নামে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে বিতর্কের মধ্যে পড়ে মন্ত্রণালয়। চাপের মধ্যে সরকার ঘোষিত এমপিওর তালিকা পর্যালোচনার জন্য কমিটি গঠন করে। একই সঙ্গে এমপিওভুক্তির নীতিমালা সংশোধনেও কাজ শুরু করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পাঠ্যক্রম যুগোপযোগী করার পরিমার্জনের কাজ শুরুর কথা বলা হলেও পাঠ্যবই সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত করতে পারেনি মন্ত্রণালয়।

পাবলিক ও বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে বিধিমালা করার কথা বলা হলেও শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে পিছু হটে সরকার। তবে পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস রোধে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে জিপিএ-৫ এর পরিবর্তে ৪-এর উদ্যোগ ছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আরেকটি ভালো দিক।

বছরের শেষ দিকে আন্দোলনে উত্তাল ছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। গত ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী। এরপর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় বুয়েট ও আবরার। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ হয় ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি, বহিষ্কার হয় হত্যায় জড়িত ২৬ শিক্ষার্থী, র‌্যাগিংয়ের দায়ে বহিষ্কারসহ বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি পায় ৩০ জন, ভবিষ্যতে যাতে কেউ কোনো রাজনীতিতে জড়াতে না পারে সে ব্যাপারে বিধিমালা জারি করে বুয়েট প্রশাসন। সব দাবি আদায় শেষে দীর্ঘ দুই মাস ১২ দিন বন্ধ থাকার পর ২৮ ডিসেম্বর টার্ম ফাইনালে অংশ নেন শিক্ষার্থীরা।

[caption id="attachment_191545" align="aligncenter" width="1134"] উচ্চ শিক্ষাঙ্গন। ছবি: ফাইল।[/caption]

বুয়েটের পরপরই বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ। অপর অংশ ভিসির পক্ষে আন্দোলনে নামে। উভয়পক্ষ জড়ায় সংঘর্ষে। ফলে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়। দীর্ঘ এক মাস বন্ধ থাকার পর গত ৫ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া নিয়ে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতেমা তুজ জিনিয়াকে এক সেমিস্টারের জন্য সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, নারী কেলেঙ্কারি, কথায় কথায় বহিষ্কারসহ নানা অভিযোগ এনে পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। টানা আন্দোলনের মুখে পদ ছাড়তে বাধ্য হন উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন। দুই হলের ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে গত ২ নভেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে ৬৪ জেলার কর্মকর্তাদের রদবদল করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য তুলে ধরে গত ২৪ ডিসেম্বর পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, পরীক্ষা নিতে নিতে শেষ করে দিচ্ছি বাচ্চাদের। শিশুদের মানসিক বিকাশ নিশ্চিতে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা না রাখার বিষয়ে চলতি বছর কাজ শুরু করেছে মন্ত্রণালয়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হওয়ার জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড ও সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডের দাবিতে বছরের শুরু থেকে নানা কর্মসূচি দিয়ে আসছেন প্রাথমিকের শিক্ষকরা। দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতিদিন একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি নতুন শব্দ শেখানোর নির্দেশনা দেয় সরকার। এ জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘ওয়ান ডে ওয়ান ওয়ার্ড’ কর্মসূচি বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App