×

জাতীয়

বছরজুড়ে এডিস মশার ‘দাপট’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:৫২ এএম

বছরের শুরুতে কিছুটা ঝিম মেরে থাকলেও জুন মাস থেকে একচেটিয়া ‘দাপট’ দেখিয়েছে এডিস মশা। এডিস মশাকে বাগে আনতে ঢাকাসহ দেশের ১১টি সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে ঘাম ঝরাতে হয়েছে। অথচ বছরের শুরুতেই ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কার কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু তা আমলে নেয়নি সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও দপ্তরগুলো। এরই মধ্যে মশার ওষুধ কেনা নিয়ে নয়ছয়ের বিষয়টিও সামনে আসে। এডিস মশার বিস্তার রোধে বছরজুড়ে পরিকল্পনা করে সেই মতো কার্যক্রম চালানোর দাবি ওঠে। সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয় এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রীতিমতো এডিসের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ই ঘোষণা করে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি এতটাই ব্যাপকতার দিকে যায়, ছোট এই প্রাণীটি পরিণত হয় আতঙ্কে। জুন মাস থেকে ক্রমান্বয়েই বাড়তে থাকে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর ব্যাপকতা। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অতীতের যে কোনো রেকর্ড ছাড়ায়।

সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত গত ১৯ বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যে সংখ্যক রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন; ২০১৯ সালের আগস্ট মাসেই সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে। গত ১৯ বছরে মোট ৫০ হাজার ১৪৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। আর আগস্টে ৫২ হাজার ৬৩৬ জন চিকিৎসা নেয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত এডিস মশা বাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ১ হাজার ৩৩৪ জন। এর মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ লাখ ৯৯৪ জন।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) ডেঙ্গু সন্দেহে ২৬৬টি মৃত্যুর তথ্য পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ২৩৪টি মৃত্যু পর্যালোচনা করে ১৪৮টি মৃত্যু ডেঙ্গুজনিত বলে নিশ্চিত করেছে প্রতিষ্ঠানের ডেথ রিভিউ কমিটি। তবে বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা প্রায় ৩০০।

সরকারের পক্ষ থেকে ডেঙ্গুতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ না জানালেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর কারণে সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে আক্রান্তদের চিকিৎসা, রোগীদের সঙ্গে হাসপাতালে অবস্থানকারীদের জন্য খরচ ও তাদের কর্মঘণ্টার হিসাব করা হয়েছে। তবে যারা হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে গেছেন তাদের খরচ এখানে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ ভোরের কাগজকে বলেন, তাদের গবেষণায় প্রাপ্ত আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আদর্শ ধরা ঠিক হবে না। তাছাড়া এই সমীক্ষা মূলত কাউকে দোষারোপ করার জন্য নয়। সরকারি তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এ সমীক্ষা করে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। যারা মারা গেছেন তাদের জীবনের মূল্য তো আর্থিকভাবে হিসাব করা যাবে না। কিন্তু মাথাপিছু আয় বিবেচনা করে তাদের গড় বয়সের হিসেবে আর্থিক ক্ষতিটা তুলে ধরা হয়েছে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বছরব্যাপী কার্যক্রম রয়েছে বলে জানান অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, এবার বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপের কথা জানিয়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে আগেভাগেই সতর্ক করা হয়েছিল। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে চিকিৎসকদের সতর্ক করা হয়েছিল, যাতে তারা ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রস্তুতি নিতে পারেন। এরপর মার্চে ঢাকায় এডিস মশার বিষয়ে জরিপ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তখনই সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়ে রাখা হয়েছিল। প্রাণঘাতী এই রোগ ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে সে কথাও জানানো হয়েছিল। এই আশঙ্কা থেকেই আমরা গাইডলাইন আপডেট করেছি।

রোগতত্ত্ব, রোগ-নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, মৌসুম ছাড়া এখন অন্য সময়েও মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। সে জন্য বছরব্যাপী নির্ধারিত কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে। চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে না গেলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের প্রধান কাজ হলো মশার উৎস নির্মূল করা। ডেঙ্গু এখন ‘ওয়ান টাইম ইস্যু’ নয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App