×

পুরনো খবর

দল গুছিয়ে ফুরফুরে আ.লীগ, ব্যর্থতায় বিএনপি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৬:৪৮ পিএম

দল গুছিয়ে ফুরফুরে আ.লীগ, ব্যর্থতায় বিএনপি
দল গুছিয়ে ফুরফুরে আ.লীগ, ব্যর্থতায় বিএনপি

ছবি: ফাইল

বর্তমান মন্ত্রিসভার অনেক নেতাকে এবার কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। কমিটিতে স্থান পেয়েছেন মন্ত্রিত্বের বাইরে থাকা হাফ ডজন নেতা। কমিটিতে তরুণ নেতৃত্বও বেড়েছে।

চলতি বছরের রাজনীতিতে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পাশাপাশি দলীয় কাউন্সিল সফলভাবে সম্পন্ন করে সাংগঠনিক দক্ষতায় কয়েক ধাপ এগিয়ে গেছে দলটি। অন্যদিকে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বাইরে থাকায় সাংগঠনিকভাবে পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বিএনপি। প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর দলীয় চেয়ারম্যানের পদ নিয়ে দেবর-ভাবির দ্ব›েদ্ব বছরের অধিকাংশ সময় পার করেছে জাতীয় পার্টি। তবে শেষ মুহূর্তে দলীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে সাংগঠনিকভাবে কিছুটা শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে দলটি। বছরজুড়ে জোট মহাজোটের রাজনীতি ছিল অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। তবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট নিয়মিত বৈঠক করেছে। অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো হাঁকডাকই ছিল না। সব মিলিয়ে চলতি বছর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলগুলোর বড় ধরনের কোনো অর্জন নেই।

টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর চলতি বছর সাংগঠনিক শক্তি আরো জোরালো করেছে আওয়ামী লীগ। চলতি বছর রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত ছিল শুদ্ধি অভিযান। নির্বাচনী ইশতেহারেই দুর্নীতির প্রশ্নে ‘জিরো টলারেন্সে’র অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। এর অংশ হিসেবে আলোচিত দলীয় নেতাদের ছত্রছায়ায় পরিচালিত ক্যাসিনোবিরোধী অভিয়ান শুরু করে সরকার। ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়। বাসাবাড়ি ও অফিসসহ মোট ১৯টি স্থানে অভিযান চালানো হয়। যার মধ্যে ১১টি ক্লাবে ক্যাসিনোর অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব। এর মধ্যে রাজধানীতে ৮টি এবং ৩টি চট্টগ্রামে। উদ্ধার করা হয় বিভিন্ন ধরনের ক্যাসিনো সামগ্রী। যার মূল্য কয়েক কোটি টাকা। শুদ্ধি অভিযান দেশের সাধারণ মানুষের সমর্থন পেয়েছে।

শুদ্ধি অভিযানের ঝড়ের মধ্যেই আওয়ামী লীগের অঙ্গ, সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোর জাতীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতি শুরু হয়। কাউন্সিলের আগেই দুর্নীতি এবং চাঁদাবাজির অভিযোগে সংগঠনে নিষ্ক্রিয় করা হয় দাপুটে কয়েক ডজন নেতাকে। অপেক্ষাকৃত ক্লিন ইমেজের নেতাদের নেতৃত্বে আনা হয়।

বছর শেষে জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে দল এবং সরকারকে আলাদা করার পথে এগিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বর্তমান মন্ত্রিসভার অনেক নেতাকে এবার কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। কমিটিতে স্থান পেয়েছেন মন্ত্রিত্বের বাইরে থাকা হাফ ডজন নেতা। কমিটিতে তরুণ নেতৃত্বও বেড়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী নেতৃত্ব বাড়ানোর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের শর্ত পূরণের পথেও একধাপ এগিয়ে আওয়ামী লীগ।

সংগঠনকে শক্তিশালী করা এবং দলীয়প্রধান খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করার ব্রত ছিল দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকার দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির। দলীয় কাউন্সিল করারও ঘোষণা ছিল। ঘোষণা ছিল সাংগঠনিক সফরের মাধ্যমে সারা দেশের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার। কিন্তু বছর শেষে কোনোটাইতেই সফল হতে পারেনি বিএনপি। আইনি প্রক্রিয়ায় দলীয়প্রধানকে মুক্ত করতে বারবার আদালতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন বিএনপির আইনজীবীরা। শেষ পর্যন্ত আপিল বিভাগেও খালেদা জিয়ার মুক্তি মেলেনি।

খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি রাজনৈতিক সমঝোতার পথেও হেঁটেছে বিএনপি। একাদশ জাতীয় সংসদে বিএনপির সাত সাংসদের শপথ নেয়া ছিল রাজনৈতিক সমঝোতার অংশ। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কাজে আসেনি সেই সমঝোতা।

দলীয় প্রধানের মুক্তি ইস্যুতে ব্যস্ত থাকায় চলতি বছর বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রমেও ভাটা পড়ে। সময় পেরিয়ে গেলেও জাতীয় কাউন্সিল করতে পারেনি দলটি। শুধু জাতীয় কাউন্সিল নয়, সারা দেশের সাংগঠনিক শাখাগুলোরও সম্মেলন হয়নি। সারাদেশে বিএনপি ৭৫টি সাংগঠনিক জেলা কমিটির মধ্যে মাত্র ২৩ জেলায় আহবায়ক কমিটি হয়েছে। যদিও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সারা দেশ সফর করার কর্মসুচি ছিল। এজন্য একটি বিশেষ টিমও গঠন করেছিল দলটি। ওই টিমও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

অন্যদিকে বছরজুড়ে ২০ দলীয় জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে নানামুখী টানাপড়েনে ছিল বিএনপি। ২০ দলীয় জোটের অধিকাংশ শরিক দলের নেতারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ককে সন্দেহের চোখে দেখেছেন। বিশেষ করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি না দেয়ায় ঐক্যফ্রন্টের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা। এ নিয়ে বিএনপিকে ঐক্যফ্রন্ট ছাড়াও চাপ দেয়া হয়। অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও খালেদা জিয়ার মুক্তির লক্ষ্যে কোনো কর্মসূচি দেয়নি। এমনকি বিএনপির সাংগঠনিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়েও ইতিবাচক কোনো ভ‚মিকা রাখেনি। এ পরিস্থিতি জোট এবং ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সমন্বয় করে রাজনীতিতে টিকে থাকার কৌশল নিয়েও দলটির শীর্ষ নেতারা ব্যস্ত সময় পার করেছেন।

মন্ত্রিত্ব ছাড়াই চলতি বছর গঠিত একাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসে জাতীয় পার্টি। জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ হয়েছিলেন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা। তখন থেকেই নেতৃত্ব নিয়ে জাতীয় পার্টিতে নাটকীয়তা শুরু হয়। এই নাটকীয়তা প্রকাশ্যে আসে গত ১৪ জুলাই এরশাদের মৃত্যুর পর। শীর্ষপদ নিয়ে ফের শুরু হয় গ্রুপিং। প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যুর পরই জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দলের নেতা হতে দেবর-ভাবি দুজনই স্পিকারকে চিঠি দেন। আর এনিয়ে ভাবি-দেবরের দ্ব›দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসে। রওশনপন্থি ও কাদেরপন্থি নেতাদের টানাহেঁচড়ার কারণে দুই মেরুতে চলে যায় রওশন-কাদের। শেষ মুহূর্তে রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতা এবং জি এম কাদেরকে পার্টির চেয়ারম্যান করা হয়। এতে কোন্দলের সাময়িক অবসান হয়।

স্থায়ীভাবে অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটানোর জন্য বছর শেষে গত শনিবার নবম কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আয়োজন করে জাপা। সব পক্ষকে নিয়ে পার্টির সমন্বিত যাত্রা নিশ্চিত করতে সম্মেলনে আট বিভাগে আটজন অতিরিক্ত মহাসচিব ও পাঁচজন কো-চেয়ারম্যানের নতুন পদ সৃষ্টির ঘোষণাও দেয়া হয়। সেই সঙ্গে গঠনতন্ত্রেও নিয়ে আসা হয় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। দেশে প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ নতুন আঙ্গিকে ১৮ দফা কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়।

চলতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ছাত্র রাজনীতিতে ইতিবাচক ধারা শুরু হয়। আর বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার মধ্য দিয়ে ছাত্র রাজনীতির কালো অধ্যায় জনসমক্ষে আসে। শিবিরকর্মী সন্দেহে গত ৭ অক্টোবর আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আবরার হত্যার বিচারের দাবিতে দুই মাসের বেশি একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের পর ৪ ডিসেম্বর ক্লাসে ফেরার ঘোষণা দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এছাড়া আবরার হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে মোট ২৬ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে বুয়েট প্রশাসন।

সর্বোপরি চলতি বছরের রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সফলতা ছাড়া রাজনীতিতে ইতিবাচক কোনো অর্জন নেই। ক্ষমতাসীন কিংবা ক্ষমতার বাইরে থাকা কোনো রাজনৈতিক দলেরই জনসম্পৃক্ত কোনো কর্মসূচিও ছিল না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App